ঢাকা মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

সহযোগীকে ছাড়াতে মানসিক রোগীকে ফাঁসালেন নাজিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান!


পাবনা প্রতিনিধি  photo পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২-৩-২০২২ দুপুর ৪:৩০

এক মানসিক রোগীকে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পাবনার সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খানের বিরুদ্ধে। গাঁজার গাছসহ গ্রেফতার হালিম শেখ (৫০) নামে এক যুবককে ছাড়াতে আফছার মোল্লা (৪০) নামে এক মানসিক রোগীকে থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ফাঁসিয়েছেন তিনি। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও ভয়ভীতিতে হালিমের অপরাধ নিজের কাঁধে তুলতে গিয়ে অসহায় আফছার এখন কারাগারে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

অভিযুক্ত হালিম শেখ নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ শেখের ছেলে ও ভুক্তভোগী আফছার মোল্লা একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে। উভয়ে চেয়ারম্যানের পাড়া-প্রতিবেশী।

এলাকাবাসী ও আফছার মোল্লার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে পার্শ্ববর্তী হালিম শেখের নিজ বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গাঁজার গাছসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাত ১২টার পর হঠাৎ আফছারের বাড়িতে এসে তাকে হালিমের সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে স্বীকার করে থানায় জবানবন্দি দিতে বলেন আটক হালিম শেখের ভাই বাদশা, দুই ছেলে তারেক ও নয়ন এবং চেয়ারম্যানের আরেক সহযোগী জদু সরদার। এজন্য তাকে এক হাজার টাকাও দেন তারা। পরদিন সকালে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তারা আফছারকে জোর করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে থানায় যান। পুলিশের কাছে আফছার তাদের শেখানো কথায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে থানা পুলিশ হালিমের সঙ্গে আফছারকেও জেলহাজতে প্রেরণ করে।

ভুক্তিভোগী আফছার মোল্লার স্ত্রী শাহিদা খাতুন বলেন, রাত ১২টার দিকে হঠাৎ হালিম শেখের ভাই ও ছেলেরা এসে আমার স্বামীকে ডাকাডাকি করেন। এ সময় আমরা ঘুম থেকে উঠে আসলে তারা আমার স্বামীকে হালিমের দোষ স্বীকার করতে বলে যে, ‘হালিমের গাঁজার গাছ তুই লাগিয়েছিস, তুই গাঁজা খাস, তুই স্বীকার গেলে হালিমকে ছেড়ে দেবে আর তুই পাগল তোর কিছু হবে না, পুলিশ তোকে ধরবে না।’ এ সময় আমার স্বামী প্রথমে অস্বীকার  গেলে তারা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ হাজার টাকা দিয়ে পরের দিন সকালে তাদের সাথে থানায় যাওয়ার জন্য বলে চলে যান। পরের দিন সকালে আমার স্বামী মাঠে কাজে যাওয়ার পথে জোর করে তারা চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে চেয়ারম্যান নিজে ও তার সহযোগীরা থানায় নিয়ে যান। পরে শুনি আমার নির্দোষ স্বামীকেও পুলিশ জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

আফছারের ভাই খালেক মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাই মানসিক রোগী। মাঝেমধ্যে তাকে পায়ে শিকল ও হাতে বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সে নিয়মিত পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসা নেয় ও ওষুধ খায়। মাঝেমধ্যে যখন সুস্থ থাকে তখন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে। পাশাপাশি তার স্ত্রীও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে সংসার চালায়। তারা খুব নিরীহ পরিবার। আমরা থানায় গিয়ে পুলিশকে অনুরোধ করেছি, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এখন আমরা তার স্ত্রী-শিশুকন্যাকে নিয়ে বড় অসহায় অবস্থায় পড়েছি।

আফছারের ১০ বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমার আব্বু পাগল। আব্বু সেদিন আমার সাথেই ঘুমিয়েছিল। পরদিন সকালে আব্বুকে জোর করে কিছু মানুষ ধরে নিয়ে থানায় দিয়ে এসেছে। আমি আমার আব্বুর মুক্তি চাই।

স্থানীয় গ্রামপুলিশ ইয়াছিন আলী বলেন, আমার উপস্থিতিতেই হালিম শেখকে তার নিজ বাড়িতে লাগানো গাঁজার গাছসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন শুনি চেয়ারম্যানের লোকজন আফছারকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমি থানায় গিয়ে দেখি পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে হাজতে পাঠিয়েছে।

আব্দুল মান্নান, ইনামুল হক, মিলন, খাইরুল সেখ, সাহিদা খাতুন ও রোজিনা বেগমসহ অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী বলেন, আফছার একজন নিরীহ মানুষ এবং পাগল। আমরা পাগল হিসেবেই তাকে চিনি ও জানি। যখন রোগ বেশি হয় তখন তাকে শেকল-বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে দেখি। কোনো ধরননের অপরাধের সঙ্গে তাকে জড়িত হতে দেখিনি। এমন একজন মানসিক রোগীকে চেয়ারম্যান এভাবে ফাঁসিয়ে দেবে ভাবতেও পারিনি।

থানায় দেয়ার কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান বলেন, গ্রেফতারের পর হালিমের ভাইয়েরা আমার কাছে আসে এবং বলে- ‘তিন মাস আগে তাদের বাড়িতে আফছার ফুলের গাছ মনে করে গাঁজার গাছটি লাগিয়েছিল।’ আমি আফছারকে জিজ্ঞাসা করলে সেও গাছ লাগানোর কথা স্বীকার করে। পরে আমি ও হালিমের লোকজন তাকে নিয়ে থানার ওসির কাছে যাই। আফছার ওসির সামনে সব দোষ নিজেই স্বীকার করলে পুলিশ দুজনকেই হাজতে পাঠায়।

একজন মানসিক রোগী কিভাবে অন্যের বাড়িতে ফুলের গাছ লাগালেন এবং তিন মাস পরও কেন পরিবারের লোকজন গাঁজার গাছ হিসেবে বুঝতে পারলেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, তাদের এ ধরনের প্রশ্ন (জিজ্ঞাসা) আমাদের মতো জনপ্রতিনিধি হিসেবে করাটা কঠিন। যেহেতু আফছার নিজে স্বীকার করেছে তাই হালিম যেন একটু লাভবান হয় এজন্য তাকে আমি থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম।

আফছারকে নানা ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে থানায় জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হালিমের ভাইয়েরা একটু জোরটোর করতে পারে কিন্তু আমি করিনি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ বানোয়াট, মিথ্যা ও বানানো কথা।

এ বিষয়ে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, যেহেতু সে নিজে স্বীকার করেছে, সেহেতু হালিমের সহযোগী হিসেবে তাকেও (আফছার) জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

চেয়ারম্যান নিজে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও অস্বীকার করেন ওসি। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকেই আফছারকে আটক করা হয়েছে। পরে চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছিল, চেয়ারম্যানের সামনেই সে স্বীকার গেছে। এখন পরে চেয়ারম্যান বা কে কী বলল সেটা আমার বিষয় নয়। আমার এজহারে যেটা বলা আছে সেটাই বিষয়। মামলার এজহারে ঘটনাস্থলে আটকের বিষয় উল্লেখ আছে।

এমএসএম / জামান

নড়াইল-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নেতা লায়ন মো. নূর ইসলাম

বেনাপোল কাস্টমসে দুদকের অভিযানে ঘুষের টাকাসহ আটক ২

হাইমচর মেঘনায় ইলিশ শিকারের দায়ে দুই জেলের কারাদণ্ড

শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার পালের পাসপোর্ট জব্দ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ

ন্যায়বিচার ও মানবিকতায় প্রশংসায় ভাসছেন তানোর থানার (ওসি) আফজাল হোসেন

গোপালগঞ্জ-ঢাকা রুটে সরাসরি ট্রেন চালুর প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের

সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সাতক্ষীরায় দুর্নীতি ও অনিয়র অভিযোগে সিভিল সার্জনের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

পটুয়াখালীতে দক্ষিণ বাংলা সমাজকল্যাণ সংস্থার চারা বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত,

বিলাসপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে জাল দলিল ও প্রতারণার অভিযোগে মানববন্ধন

কুড়িগ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ১২২৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত

মানিকগঞ্জে স্বর্ণের দোকানে লুটের ঘটনায় মূলহোতা দোকানের মালিকসহ গ্রেফতার ৩