ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী চিত্রার বুকে দখলবাজদের কালো থাবা

এক সময় যে নদীর পানিতে চলত কৃষকদের জমির সেচকাজ। মৎসজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। সেই নদীর গর্ভেই কেউ কেউ কেটেছেন বড় বড় পুকুর। গড়ে তুলছেন বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার অনেকে নদীর জায়গা যে যার মতো আয়ত্তে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে চাষাবাদ। এমনকি নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারাও যে যার মতো করে ক্রমেই নদীর জমি নিয়েছে দখলে। এভাবে দীর্ঘদিন কোনোরকম নজরদারি না থাকায় চিত্রা তার গর্ভের জায়গা হারিয়ে কিছু কিছু স্থানে সরু খালে পরিণত হয়েছে। ফলে ভরা বর্ষার মৌসুমেও নদীতে স্রোত থাকে না। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ের মাছ থেকে। অন্যদিকে বর্ষা শুনু হলে নদীতে স্রোত না থাকায় মাঠের পানি নিষ্কাশনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের এ চিত্রা নদী এখনই দখলমুক্ত করে খননের ব্যবস্থা না করা হলে এক সময় নদীর সব জায়গা চলে যাবে ছোট-বড় নদীখেকোদের পেটে।
নদীর দুই পাড়ে যেভাবে বড় বড় পাকা ভবন তৈরি হয়েছে, এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এটা নদী। নদীটি খালে পরিণত হয়েছে। সেতুর পূর্ব পাশেও দুই পাড়ে অসংখ্য পাকা ভবন। এক শ্রেণির লোকজন নানা কাগজপত্র দেখিয়ে এসব জায়গা তাদের দাবি করে আসছে। কিন্তু প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাষায়, এগুলো সবই এক সময় নদীই ছিল। শহরের কালীবাড়িটিরও কিছু অংশ নেমে গেছে নদীর মধ্যে। সেখানেও দখল হয়েছে নদীর জায়গা।
কালীগঞ্জ হাসপাতালের নিচে নদীর মধ্যে বিশাল বড় পুকুর কাঁটা হয়েছে। এই পুকুরের পাড়ে বিশাল বিশাল গাছ রয়েছে। যেগুলো নদীর পানির গতিপথই নয়, গোটা নদীটিই আড়াল করে দিয়েছে। নিশ্চিন্তপুর এলাকার নদীর মধ্যে ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ অংশের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে নিয়েছেন দখলদাররা। শুধু দখল নয়, নদীতে নানা ধরনের ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ক্লিনিকের বর্জ্য, শহরের ময়লা ফেলে পানি দুষণ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ে এ নদীর গভীরতা ছিল অনেক। ফলে সারাবছরই নদীভরা পানি থাকত। বড় বড় নৌকা, লঞ্চসহ বিভিন্ন জলযান এ নদীতে চলাচল করত। যে কারণে বেশির ভাগ মানুষ স্বল্প ব্যয়ে পানি পথেই ব্যবসা বাণিজ্য করত। কিন্তু সেই নদীতে এখন খোদ বর্ষা মৌসুমেই পানি থাকে না বললেই চলে। এখন বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীর তলাতিতে যতটুকু পানি থাকে তার পরিমাণ হাঁটু পানির অধিক নয়। বর্ষার মৌসুম চলে গেলে সেটুকুও থাকে না। তখন নদীর তলানিটাও শুকিয়ে যায়।
প্রবাহিত চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অংশের বিভিন্ন স্থান সরেজমিন দেখা যায়, দুই পাড়ের বাসিন্দারা যেন নদীর জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যে যার সুবিধা মতো নদীর জায়গা ক্রমেই দখল করে নিজের আয়ত্বে নিচ্ছে। সেখানে অনেকে গড়ে তুলেছেন দালান-কোঠা। আবার গ্রামাঞ্চালের অংশে নদীর জমি দখলে নিয়ে ফসলি জমিতে পরিণত করেছে। নদীর বুকচিরেই নদীর অল্প পানিতেই চলছে বোরো ধানের চাষাবাদ। এজন্য নদীর চিকন নিশানার আইল ফেলে নিচ্ছে যে যার সুবিধামতো। এতে ক্রমেই নদীর বুক মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবার বর্ষায় নদীতে যতটুকু পানি জমা হয় সাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়। শহর বাজারের অংশের মতো গ্রামের অংশও এভাবে ক্রমেই দখল হয়ে যাচ্ছে। তবে বর্তমান সময়ে শহরের অংশের চেয়ে গ্রামের অংশে দখলের মাত্রাটা বেশি।
সব গ্রামেই চিত্রা কমবেশি দখল হয়েছে, তবে কালীগঞ্জ শহর থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত নিয়ামতপুর ইউনিয়ন ও মালিয়াট ইউনিয়নের অংশে দখলের পরিমাণটা বেশি। বিশেষ করে মালিয়াট ইউনিয়ের দখলবাজরা নদীর জায়গা দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মালিয়াট ইউনিয়নের সাইটবাড়িয়া-গয়াশপুর, পারখির্দ্দা-সরূপকাঠি গ্রামগুলোর অংশে দখল বেশি হয়েছে। এ অঞ্চলের প্রভাবশালীরা মঙ্গলপৈতা বাজার সংলগ্ন ব্রিজের সামনেই নদীর মাঝখান পর্যন্ত দখলে নিয়ে বোরো ধানের চাষ করেছে। ব্রিজের মুখেই এমন অবস্থা হওয়ায় নদীর তলানির পানির গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বাজারের অধিকাংশ দোকান মালিক জানান, এ নদীর পাশঘেঁষা আবাদি জমিগুলো এক সময় এ নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ চালানো হতো। সে নদী আজ মাটি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি থাকে না। একদিকে দখলবাজদের দখল অন্যদিকে চারপাশের মাটিতে নদী ভরাট হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, এভাবে থাকলে একদিন নদীর সব জমি চলে যাবে প্রভাবশালীদের আয়ত্বে।
এলাকার ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, আগের মতো চিত্রায় আর পানি থাকে না। বর্ষার সময় পার হলেই নদীর মাঝখান পর্যন্ত শুকিয়ে হয়ে যায়। কেউ কেউ নদীর পাশের জমিতে ফসল চাষ করে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে সরকার খননের ব্যবস্থা করলে তারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে।
মালিয়াট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল খাঁ জানান, ছোটবেলায় দেখেছেন এ এলাকার সব ধরনের মানুষ নদী থেকে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে। মাছের চাহিদাও মিটিয়েছে এ চিত্রা। সে চিত্রার বুকে হাহাকার। দখলবাজদের দখলে অস্তিত্ব সংকটে। তিনি বলেন, এলাকার সব মানুষ নদীর জায়গা দখল করেনি। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। এক কথায় সবাই চাচ্ছেন দখলমুক্ত করে নদীটি খননের আওতায় আনা হোক।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, তিনিও খবর পেয়েছেন অনেকে চিত্রা দখল করে ফসলের চাষ করেছে। নদী দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথা বলেছেন। এরপর থেকেই লাগাতার অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, নদী খেকোরা যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্যঃ দেশে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদ-নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তাকে সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে এমন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এমএসএম / জামান

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক লায়ন নুর ইসলামকে সংবর্ধনা

চেয়ারম্যান থেকে সাধারণ সম্পাদক জনআস্থার প্রতীক সাইফুল আলম মৃধা

জয়পুরহাটে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ইউডিআরটি প্রশিক্ষণ এর উদ্বোধন

রাণীশংকৈলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তুলারামপুর ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধন উদ্বোধন

রাণীনগরে রাইডো ব্রেইন ব্যাটল কুইজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

অভয়নগরে ৫২তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম, অভিযানে ৭ দালালের কারাদন্ড

শিবচরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সাতকানিয়া কেরানীহাটের মাছ বাবুল গ্রেফতার

কোটালীপাড়ায় শরীরে আগুন দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ৫ জন মাদক ব্যবসায়ী আটক
