ঢাকা মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিষপানে নাকি অন্য কোনো বিষক্রিয়ায় আদিবাসী কৃষকের মৃত্যু


শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান  photo শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
প্রকাশিত: ৭-৪-২০২২ দুপুর ২:২৫

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের আলোচিত দুই আদিবাসী কৃষকের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন জমিতে সেচের পানি না পাওয়ায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তারা,কেউ বলছেন এটির পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ আবার কেউ এ ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতেও রয়েছেন তৎপর। রাজশাহী ও গােদাগাড়ীতে এ নিয়ে কিছুটা নীরবতা থাকলেও ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

এদিকে, ঘটনার পর বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা এলাকা থেকে পরিদর্শন করে নিজ দলীয় কেন্দ্রে ইস্যু তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করেছে। ইতােমধ্যে তারা প্রতিবেদনও দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) আলাদা তদন্ত করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত চালানাে হয়েছে। তবে মৃত্যুর রহস্য এখনো জানা যায়নি। তবে ফরেনসিক রিপাের্ট আসার আগেই বিষপানে আত্মহননের ঘটনাকে নানা রং দেয়া হয়েছে। তারা আদৌ বিষপান করেছিলেন কি-না, এ নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ঘটনার পর থেকে আদিবাসীরা নানা দাবিতে কর্মসূচী দিয়ে আসছিল। তাদের দাবি অনুযায়ী ইতােমধ্যে দুই কৃষককে আত্মহত্যায় প্ররােচনার দায়ে গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তার রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। বিএমডিএ সাখাওয়াতের অপারেটর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। সবকিছুই আইনী প্রক্রিয়ায় চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ ৬ এপ্রিল জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর এক লিখিত বক্তব্যে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের অপসারণ-সহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।  

জানতে চাইলে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক ; বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে, সেখানে আত্মহত্যা নাকি অন্য কোন কারণ সেটা কেউ-ই বলতে পারেননি। তবে সেই জমি এবং আশেপাশের জমি গুলো পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়েছে বা ধান মরে যাচ্ছে এরকম কোন বিষয় দেখা যায়নি, জমি গুলো এবং ধান ক্ষেত স্বাভাবিক রয়েছে অর্থাৎ জমি শুকনো ছিল না এবং তা যথেষ্ট ভেজা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ঐ এলাকার কোন কৃষক পানি না পাওয়ার অভিযোগ করেননি বরং বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পানি ব্যবস্থাপনায় তারা সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। 

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু  বলেন, ' বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, আজকে কৃষক কেন আত্মহত্যা করছে, বিষয়টি সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের যে পানির ব্যবস্থা, সেখানে কৃষক আত্মহত্যা করেছে ; ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের যে প্রভাব পরিবেশের ওপর এবং কৃষকের ওপর পড়ছে, তা দুঃখজনক। আমরা সবসময়ই বলছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য, যে ভূ-উপরোস্থ পানির ব্যবহার করতে হবে। তা বাসতবায়ন হলে এ অঞ্চলের কৃষক উপকৃত হবে। তবে আমরা আস্থা রাখছি, মানবাধিকার কমিশনের যে উদ্যোগ আমরা দেখেছি, আমাদের রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ জননেতা ফজলে হোসেন বাদশার ঐকান্তিক চেষ্টায় মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে এবং জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা আশা রাখছি তারা ন্যায় বিচার পাবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নানা তথ্য। সেচ নয়, পরিবারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছিলেন সাঁওতাল কৃষক রবি মারান্ডি। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন স্বীকারােক্তি দিয়েছেন তিনি।

নিহতের মা দুলিনা মুর্মু বলেছেন, সেচ দেয়া নিয়ে কোন ঝামেলা বা গণ্ডগােল হয়নি। তবে কী কারণে রবি বিষপান করেছিল- তা তিনিও বুঝতে পারছেন না। তবে অভিযােগ উঠেছে, গভীর নলকূপ থেকে বােরাের খেতে সেচের পানি না পেয়ে গত ২৩ মার্চ বিকেলে রবি মারান্ডি ও তার চাচাতাে ভাই অভিনাথ মারান্ডি
বিষপান করেন। ওইদিনই মারা যান অভিনাথ। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রবি মারান্ডিকে। পরদিন মারা যান রবিও।

গত ২৪ মার্চ দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রবি। সেই সাক্ষাতকারের ভিডিও করা হয় । এতে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আছেন রবি মারান্ডি। রবির শিয়রের বামপাশে বসা তার মা দুলিনা মুর্মু।
পায়ের দিকে দেয়াল ঘেঁষে বসা তার দুলাভাই। আর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন রবির বােন ও নাটোর থেকে আসা ভাই। সবার সামনেই তাকে প্রশ্ন করা হয়-বিষ খেলেন কেন ? জবাবে রবি মারান্ডি বলেন, 'বাড়ির সঙ্গে মিল হচ্ছিল না। কার সঙ্গে মিল হচ্ছে না- জানতে চাইলে তিনি আবারও স্পষ্ট করেই বলেন, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে। বিষপানের পর গভীর নলকূপে পানি খেতে গিয়েছিলেন বলেও জানান রবি।

রবির পাশে বসে থাকা তার মা দুলিনা মুর্মু বলেন, গণ্ডগােল কিন্তু কাহাের সাথে নাই। আমাদের পাড়ার ডিপে (নলকূপ) গেছিল। ভূঁইয়ে (জমিতে) পানি আবার লিছে
(নিয়েছে)। তাে উঁইয়ে (বিষ) খায়েছে না কুণ্ঠে খায়েছে এখুন বলতে পারছি না।' রবি পানি কি পায়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে রবির মা বলেন, পানি পায়েছে একটু আবার লিবে। প্রশ্ন করা হয় গণ্ডগােল কি হয়েছিল কারাে সাথে? তখন দুলিনা মুর্মু বলেন, পানি লিতে ডিপেও গণ্ডগােল নাই। বাড়িতেও গণ্ডগােল নাই। কীভাবে
কী হলাে, না হলে সেটা আমি বলতে পারছি না। রবির বড়ভাই জানান, তিনি নাটোরে ছিলেন। বিষপানের খবর শুনে ছুটে এসেছেন। এ বিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই। রবির বিষপানের কারণ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলেও জানান তার বােন ও দুলাভাই। তবে মৃত অভিনাথের স্ত্রী রােজিনা হেমব্রম অবশ্য বলছেন, গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত পানি না দেয়ায় বিষপান করেন তার স্বামী। নিমঘুটু গ্রামের লাগােয়া আরেকটি গ্রাম ঈশ্বরীপুর । ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের খানিকটা সামনেই গভীর নলকূপ (ডিপ)। এই গভীর নলকূপকে ঘিরেই এখন নানা কথা চলছে। বলা হচ্ছে- এই ডিপের অধীনে বােরাে চাষ করেছিলেন রবি মারান্ডি ও অভিনাথ । কিন্তু অপারেটর সাখাওয়াত সেচের জন্য পানি দেয় নি জমিতে। কয়েকদিন ঘুরে ঘুরেও পানি না দেয়ায় তারা ক্ষোভে বিষপান করে।

সরেজমিন এলাকা গিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য। স্থানীয়দের বেশির ভাগেরই অভিযােগ, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে অপপ্রচার চালানাে হচ্ছে। তারা বলছেন, সাঁওতালদের গ্রামগুলােতে চোলাই মদ বা চুয়ানি তৈরি করা হয়। তাদের পারিবারিক সংস্কৃতিই হলাে চুয়ানি খাওয়া।
এখানকার সাঁওতাল নারী-পুরুষরা অহরহ চুয়ানি খেয়ে মাতলামি করেন। ঘটনার দিন রবি এবং অভিনাথও চুয়ানি খেয়ে ডিপের কাছে এসেছিল। ভারসাম্যহীন কথাবার্তা বলছিল। গ্রামের কৃষকরা জানান, ডিপের পানি নিতে প্রি-পেইড কার্ড লাগে । সব কৃষকেরই নিজ নিজ নামে এই কার্ড থাকার কথা। এই কার্ড নিতে খরচ হয় ১৫০ টাকা। কিন্তু রবি ও অভিনাথের কার্ড ছিল না।

ঘটনার পর রবি মারান্ডিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছিলেন দামকুড়াহাটের পল্লীচিকিৎসক মুর্শেদ। তিনি বলেন, রবির মুখ থেকে চুয়ানির দুর্গন্ধ পেয়েছি।

এদিকে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার মােড় কোনদিকে- এমন প্রশ্ন এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে মাঠে কাজ করছে একাধিক তদন্ত কমিটি। কিন্তু জট খােলেনি রহস্যের। মরদেহের ময়নাতদন্ত হলেও ভিসেরা রিপাের্ট এখনও হাতে না পাওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ।  ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, ভিসেরা রিপাের্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, কৃষি মন্ত্রনালয় থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে আহবায়ক করে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাঁরা তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। রিপোর্টে কি আছে তা এখনও আমার জানা নাই। আর মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু জানা যাচ্ছে না। 

ধানখেতে সেচ দিতে না পারার ক্ষোভে তারা বিষপান করেছিল, নাকি অন্য কোন বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু- এমন প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন সর্ব সাধারণ।

এমএসএম / জামান

চুয়াডাঙ্গা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন এর দিনব্যাপী প্রশাসনিক কার্যক্রম

বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নব-নির্মিত ৫ তলা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর

কুমিল্লা-৯ আসনে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

কুমিল্লায় প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় শাড়ি জব্দ

নিসচার ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জয়পুরহাটে র‍্যালি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল

টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষকদের পদসোপান আন্দোলন: দুই বিদ্যালয়ে বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত

কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় হাজী ইয়াছিনের উদ্যোগে ধারাবাহিক কুরআন খতম ও দোয়া

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন : শফিকুর রহমান

আমরা হিন্দু-মুসলিম নয় আমরা বাঙ্গালী এটাই আমাদের পরিচয়ঃ মহিত তালুকদার

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মুজিবনগরে দোয়া মাহফিল

ময়মনসিংহ রিয়াদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, পিতার আহাজারি

ভূরুঙ্গামারীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত