ঝিনাইদহ পৌরসভার লাখ লাখ টাকা গায়েব হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য

ঝিনাইদহ পৌরসভার একাধিক ব্যাংক হিসাব থেকে লাখ লাখ টাকা গায়েব হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে সত্যতা পাওয়ার পরও চেক জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান (চাঁন) বহালতবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। এতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন।
তাদের ভাষ্য, ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁন ও কার্যসহকারী হাবিবুর রহমান হাবিবের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এই দুই কর্মচারীর সমালোচনা চলে পৌর ভবনে।
এদিকে, ২০২১ সালের ২৭ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার ২৯৬নং স্মারকে সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন। ওই পত্রে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ওরফে চাঁনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ তোলেন মেয়র।
পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, পৌরসভার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৮১৯ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চাঁন উত্তোলন করেন। এরমধ্যে ২৮ লাখ টাকা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২টি চেকের মাধ্যমে বিপুল অংকের ওই টাকা স্থানীয় জনতা, সোনালীসহ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ পৌরসভার ক্যাশবইয়ে মাত্র ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮১৯ টাকা দেখানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেয়রের অভিযোগপত্র পাওয়ার পরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌরসভা শাখা-১) উপ-সচিব মুহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঝিনাইদহকে তদন্তের নিদের্শ দেয়া হয়। গত বছরের (২০২১) ১২ আগস্ট জারি করা ওই পত্রটি ধামাচাপা পড়ে যায়।
সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহের প্রধান শাখার সাবেক ৩১৬ এবং বর্তমান ১১০০০০০৩১ নং ডিপোজিট একাউন্ট সহ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে চুরাশি লাখ তেত্রিশ হাজার ছয়শত আটানব্বই টাকা তুলে নেয় চক্রের সদস্যরা। ২০১১ সালের পহেলা জুন থেকে ২০১৭ সালের ৪ আক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮টি চেক ও ভাউচারের অনুকুলে বিপুল অংকের এই টাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও জনতা, ইউসিবিএল, রুপালী, অগ্রণী, এবিসহ পৌরসভার ব্যাংক হিসাব থেকে কত টাকা চক্রটি উত্তোলন করেছে তা আজো নিরূপণ করা যায়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাড়ি মেরামত, প্রকৌশল বিভাগের রাস্তা মেরামত ও সংস্কার, কেনাকাটা, স্যানিটারি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভাউচারে উল্লেখ করা টাকার বিপরীতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকার অংকে কোনো মিল নেই। মুড়ি বইয়ে খরচের ভাউচার মোতাবেক টাকার অংক লেখা হলেও ব্যাংকের চেকে (বেয়ারার চেক) বেশি টাকা উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসক ও উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ (তদন্তকারী কর্মকর্তা) মো. ইয়ারুল ইসলাম (উপ-সচিব) সংশ্লিষ্ট সব খাতাপত্র, চেকের মুড়ি বই নিজের হেফাজতে রেখেছেন। ব্যাংক থেকে চেকের (উত্তোলন করা চেক) কপি, বিল-ভাউচারের অফিস কপি ইতোমধ্যে কব্জা করেছেন তিনি (তদন্তকারী কর্মকর্তা)। অন্তত ১২টি চেকের পেছনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ওরফে চাঁনের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মিলেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়া ৩৮টির মধ্যে বাকি ২৬টি চেকের পেছনে টাকা উত্তোলনকারীর স্বাক্ষর এবং মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
জানা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চান স্টোর কিপার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রধান সহকারী হন এবং পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করেেআসাদুজ্জামান চাঁন জানান, পৌরসভার চেকে যৌথ স্বাক্ষর করেন মেয়র ও সচিব। সাধারণ শাখার নোটশীট তৈরির দায়িত্ব তার। তিনি আরো জানান, টাকা তুলতে আমি কখনো ব্যাংকে যাইনি। এমনকি চেকের পেছনে স্বাক্ষর করেননি বলেও দাবি তার। পৌরসভার মোট ৩৮টি চেক ও ভাউচারের বিপরীতে পৌনে ১ কোটি টাকার বেশি উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় চাঁন।
এর মধ্যে ১২টির টাকা উত্তোলনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে বলে স্বীকার করে আসাদুজ্জামান চাঁন জানান, এক মাস আগে লিখিত জবাব তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হয়েছে। জবাবে চেক জালিয়াতির সাথে জড়িত নয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, আজমল হোসেন (সাবেক সচিব) ২০০৮ সালে ঝিনাইদহ পৌর সভায় সচিব পদে যোগ দান করেন। ২০১৮ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে যশোর পৌরসভায় বদলি হন। জালিয়াতি করা চেকে স্বাক্ষর রয়েছে তার। এক প্রশ্নের সচিব আজমল বলেন, মেয়র ও আমি যৌথ স্বাক্ষরে চেক দিয়েছি। স্বাক্ষর করার সময় বিল-ভাউচারের সাথে চেকে উল্লেখ করা টাকার অংক মিল ছিল। পরবর্তী সময়ে চেকের কাস্টডিয়ান টাকার অংক পাল্টে দিয়েছেন।
পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) মো. নূর মাহমুদ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় সোনালী, জনতাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সকল ধরনের প্রমাণ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এর পরেও চক্রটির বিরুদ্ধে আজও কোনেরা ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। সঠিক তদন্তে রাঘব বোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসছে বলেও ধারণা দেন পৌরসভার দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, তদন্ত শেষের দিকে। পৌরসভার ব্যাংক হিসাব থেকে লাখ লাখ টাকা তছরুপের সত্যতা মিলেছে। জড়িতদের নামও পাওয়া গেছে। শিগগিরিই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এমএসএম / জামান

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক লায়ন নুর ইসলামকে সংবর্ধনা

চেয়ারম্যান থেকে সাধারণ সম্পাদক জনআস্থার প্রতীক সাইফুল আলম মৃধা

জয়পুরহাটে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ইউডিআরটি প্রশিক্ষণ এর উদ্বোধন

রাণীশংকৈলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তুলারামপুর ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধন উদ্বোধন

রাণীনগরে রাইডো ব্রেইন ব্যাটল কুইজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

অভয়নগরে ৫২তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম, অভিযানে ৭ দালালের কারাদন্ড

শিবচরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সাতকানিয়া কেরানীহাটের মাছ বাবুল গ্রেফতার

কোটালীপাড়ায় শরীরে আগুন দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ৫ জন মাদক ব্যবসায়ী আটক
