ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

কৃষিক্ষেত্রে ইনোভেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ : ড. এফ এইচ আনসারী


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩-৫-২০২২ দুপুর ১১:৫৩

এসিআই এগ্রিবিজনেস। বাংলাদেশে কৃষি সেক্টরের অন্যতম বৃহৎ এবং স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের কৃষির আধুনিকায়ন, যান্ত্রিকীকরণ এবং ভিন্নধর্মী নানা উদ্যোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ড. এফ এইচ আনসারী এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি এসিআই মটরস্ লিমিটেড, প্রিমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস লিমিটেড, এসিআই এগ্রোলিংক লিমিটেড ও এসিআই মেরিন এন্ড রিভারাইন টেকনোলোজিস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কৃষি শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিসমূহে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বিগত ২৭ বছর তিনি এসিআই গ্রুপে একজন বিজনেস লিডার হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরের উন্নয়নের অগ্রপথিক ও স্বনামধন্য বিজনেস আইকন হিসেবে পরিচিত ড. এফ এইচ আনসারী। কৃষি ও কৃষকের বর্তমান সমস্যা, সম্ভাবনা, করণীয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্বোপরি নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে দৈনিক সকালের সময়’র সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়’র সহকারি সম্পাদক মো. ইউনুছ আলী। সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো-

দৈনিক সকালের সময় : কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ কৃষি ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে এসিআই কি ধরণের অবদান রাখছে?

ড. এফ এইচ আনসারী: কৃষিতে ট্রান্সফরমেশন আনতে হবে। ট্রান্সফরমেশনের জন্য একদিকে যেমন ইনোভেশন লাগবে অন্যদিকে  ইনোভেশনকে এ্যাডপ্ট করতে হবে। কারণ কৃষিক্ষেত্রে ইনোভেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে সুবিধা হলো আবিষ্কার হলো এবং মাঠে সেটা বাস্তবে প্রয়োগ হলো। ফলে প্রডাক্টিভিটি অনেক বাড়বে। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা বেকার বসে থাকে। এরা কৃষিতে আসতে চাচ্ছে না। কারণ দিনদিন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেশি সময় ধরে ক্ষেতে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া আমাদের দেশের কৃষকের গড় বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর। একটা সময় পরে কৃষিকাজে শ্রমিক পাওয়া যাবেনা। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা কৃষি কাজে আগ্রহী হবে। Cost of production  কমে যাবে। এর ফলে  খরচ কমবে। কম খরচে প্রডাকশন করতে পারলে প্রফিট বেশি হবে এবং ভোক্তারা কম মূল্যে পণ্য পাবে। তাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলতে শুধু ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করা, সেচ দেওয়া ও ধান মাড়াই করা নয়। যান্ত্রিকীকরণ করতে হলে Agriculture Complete value chain  এর সকল ক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতির intervention দরকার আছে।  

বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে এসিআই সর্ব বৃহত্তম কোম্পানী। আমরা সর্বপ্রথম কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বাংলাদেশের কৃষি জমির ৩৫ ভাগ এসিআই এর সরবরাহকৃত ট্রাক্টর দিয়ে চাষ হয়। আমরা কৃষি পাম্প ও ধান লাগানো ও ধান কাটার মেশিন সাপ্লাই করি। বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতির ৭০ ভাগ এসিআই সাপ্লাই করেছে। আমরা ছোট ছোট অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে তৈরী করছি এবং কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করছি। আমরা সবসময় চেষ্টা করি, আমাদের কোম্পানির প্রতিটি সদস্যের মেধা, জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে আমাদের পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখার। এসিআই সবসময় নতুন নতুন প্রযুক্তি এনে ক্রমান্বয়ে আমাদের সিস্টেম এবং প্রসেসকে উন্নত করার চেষ্টা করে। আমাদের কমিটমেন্ট কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণে যা কিছু করণীয় তার সবকিছুই আমরা করবো।

দৈনিক সকালের সময় : ভালো উৎপাদনের জন্য ভালো বীজের প্রয়োজন। তবে দেখা যায় আমাদের দেশের বেশিরভাগ বীজ আমদানি নির্ভর। স্থানীয়ভাবে ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য আপনাদের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

ড. এফ এইচ আনসারী : বীজ বলতে শুধু সব্জি বীজ বললে চলবেনা। ধানের বীজ, গমের বীজ, আলুর বীজ, ফুলের বীজ, সব্জি বীজসহ সকল বীজের কথা বলতে হবে। আমাদের দেশের ৭০ ভাগ জমিতে ধান চাষ হয়। ধান বীজের ৯৫ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। গম বীজের পুরোটাই আমাদের দেশে হয়। তবে এটা ঠিক যে সব্জি ভূট্টা, সূর্যমূখীসহ  অনেক বীজের বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। স্থানীয়ভাবে অনেক কোম্পানীই ভালো বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং তাদের উৎপাদন ক্যাপাসিটিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে এসিআই যেভাবে বিনিয়োগ করেছে আমরা মনে করি অতি শীঘ্রই বীজের উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

দৈনিক সকালের সময় : কৃষিকাজে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটি প্রায়ই আমাদের সামনে আসে। এ বিষয়ে বলুন।

ড. এফ এইচ আনসারী : সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। রোগের জন্য যেমন ঔষধ প্রয়োজন তেমনি ফসল উৎপাদনের জন্য সার ও কীটনাশক প্রয়োজন। তবে সমস্যা হলো আমাদের কৃষকরা অনেক সময় খুব দ্রুত ফলাফল দেখতে চায়। তাই সার ও কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষিত ও  সচেতন করে তুলতে হবে। এজন্য কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। তাহলেই তাদের ফসল ভালো হবে এবং আমরা নিরাপদ ফসল পাবো।

দৈনিক সকালের সময় : সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিতে কিভাবে ভূমিকা রাখে?

ড. এফ এইচ আনসারী : ফুড ভ্যালু চেইন বা এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইন বলতে আমরা বুঝি টেকনোলজি, উৎপাদন, পোস্ট হার্ভেস্ট, প্রসেসিং, ফরওয়ার্ডিং। এটাই হলো সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। আমাদের দেশে এত বছর যেটা করা হয়েছে তাহলো উৎপাদন বাড়ানো। উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করার। ভ্যালু চেইনের কোন একটা স্তরে গ্যাপ হলে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের পোস্ট হার্ভেস্ট, প্রসেসিং ও ফরওয়ার্ডিং এর ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। সরকারের উচিৎ এ যায়গা গুলোতে কাজ করা। অথবা কোম্পানীগুলোকে জিরো পার্সেন্ট ইন্টারেস্টে লোন দিয়ে একাজগুলোকে করার দায়িত্ব দিতে পারে। কারণ উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্য পৌঁছানোর প্রতিটি স্তরেই একটির সাথে অপরটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সহজভাবে বলতে গেলে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিতে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা অপরিসীম।

দৈনিক সকালের সময় : Good Agricultural Practices- GAP বাস্তবায়নে এসিআই এর দৃষ্টিভঙ্গি কি?

ড. এফ এইচ আনসারী: Good Agricultural Practices নিয়ে আমরা অনেক বছর ধরেই কথা বলছি। এসিআই এর ‘স্বপ্ন’ একমাত্র কোম্পানী যেটি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এঅচ এর সার্টিফিকেট পেয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে ক্লাষ্টার করে এঅচ প্রাকটিস এর মাধ্যমে সব্জি উৎপাদন করবো। এর ফলে সুবিধা হবে এখন ‘স্বপ্ন’ এর শোরুম গুলোতে সব্জি বিক্রয় করবে। যেখান থেকে ক্রেতারা নিরাপদ খাবার পাবে, নিরাপদ সব্জি পাবে। নিরাপদ খাদ্যের জন্য এঅচ এর প্রাকটিস বাড়াতে হবে।

দৈনিক সকালের সময় : কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগকে কিভাবে দেখছেন?

ড. এফ এইচ আনসারী : কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা সময়োপযোগি। সরকারের দুরদর্শি উদ্যোগের ফলেই আমরা কৃষিক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা সরকারের উদ্যোগসমূহকে স্বাগত জানাই এবং সরকারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।

দৈনিক সকালের সময় : দেশের আপামর কৃষকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ড. এফ এইচ আনসারী : আমাদের দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও জীবিকা অর্জনের বড় একটা অংশ হচ্ছে আমাদের এই কৃষি খাত। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো কৃষিতে নতুন ইনোভেটেড প্রডাক্টস উৎপাদন করতে হবে। একই ধরণের প্রডাক্টস বারবার উৎপাদন করা যাবেনা। সবাই যেটা করছে সেটা করা যাবেনা। তাদের খেয়াল রাখতে হবে কোন প্রডাক্টসের কখন চাহিদা রয়েছে। তবে কৃষক সামাজিক ভাবে একত্রিত হতে পারে। কয়েকজন কৃষক একত্রিত হয়ে মাল্টিপল ফসল উৎপাদন করতে পারে। তাহলে একটি ফসলের দাম কমলেও আরেকটি দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবে। কারণ সবগুলো ফসলের দাম একসাথে কমেনা। এভাবে সামাজিক কৃষির মাধ্যমে তারা কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে এবং লাভবান হতে পারে।

সকালের সময় : আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদেরকে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

ড. এফ এইচ আনসারী : আপনারা কষ্ট করে এসেছেন, ইন্টেলিজেন্ট প্রশ্ন করেছেন, আমার কথা শুনেছেন, সেজন্য আপনাদেরকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

এমএসএম / জামান

তিতাস গ্যাস জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ এর অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান

জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার আয়োজিত

ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছয় দফা দাবি

জাইকার সহায়তায় রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন TOD প্রকল্পের ৪র্থ সেমিনার অনুষ্ঠিত

কামরাঙ্গীরচর থানার মোঃ আমিরুল ডিএমপি লালবাগ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত

পেশাদারিত্ব ও মানবিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডিসি মহিদুল ইসলাম

ঝিনাইদহ অফিসার্স ফোরামের নতুন কমিটি গঠন

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শিখাচ্ছে পাথওয়ে

উত্তরায় SEDA ফাউন্ডেশনের ১৭তম মেধা যাচাইয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে রাজউক চেয়ারম্যান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় নকশা দাখিল ও অপসারণের নির্দেশ

হাতপাখা নির্বাচিত হলে ঢাকা-১৮ কে একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলা হবেঃ আলহাজ্ব আনোয়ার

ডেমরায় সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মত মতবিনিময় সভা