দুভাগে বিভক্ত নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপি : দ্বন্দ্ব চরমে
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। কোনোকিছুতেই থামছে না তাদের কোন্দল। যতই দিন যাচ্ছে, এ কোন্দল আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে দুটি গ্রুপই আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। সম্প্রতি গত রমজান মাসে বিভিন্ন ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল আয়োজনকে কেন্দ্র করে তাদের এ বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ জাহেদ আলী চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী এ আসনের নেতৃত্বে আসেন। তবে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি রাজনীতির হাল ছেড়ে দেন। এ সময় ফাহিম চৌধুরীর মা ও জাহেদ আলী চৌধুরীর স্ত্রী ফরিদা পারভীন চৌধুরী দলটির দেখভালের দায়িত্বে নেন। বর্তমানে তার নেতৃত্বেই নালিতাবাড়ীতে বিএনপির একাংশ পরিচালিত হচ্ছে। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমীন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা ইলিয়াস খানের অনুসারী।
বিএনপির ইলিয়াস খান অংশের নেতৃত্বে থাকা আহ্বায়ক নুরুল আমীন বলেন, প্রয়াত সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরী নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ার পর থেকে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। মূলত দলকে গোছাতেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইলিয়াস খানের নেতৃত্বে আমরা দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিষয়টি সম্পর্কে জেলা বিএনপিও অবগত রয়েছে।
অপরদিকে, ফরিদা চৌধুরী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের কুটির শিল্প বিষয়ক সহ-সম্পাদক মজিবুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দুলাল মিয়া ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া মাকসিম।
তারা বলেন, ফাহিম চৌধুরী রাজনীতি থেকে দূরে থাকায় তার মা ফরিদা চৌধুরী শেরপুর-২ আসনের (নকলা-নালিতাবাড়ী) দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে আছেন। দলে কেউ বিভক্তি সৃষ্টি করলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা সফল হবে না। তবে আমরা নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী একসঙ্গে আছি। দলের বিভিন্ন কার্যক্রম বর্তমানে দলীয় কার্যালয়েই পালন করা হচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নুরুল আমীন একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরের আড়াইআনী বাজারে এবং উপজেলা বিএনপির আরেক অংশের নেতাকর্মীরা শহরের শহীদ মিনারে দলীয় কার্যালয়ে পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এতে নালিতাবাড়ীর ১০ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা বিএনপির দুই অনুষ্ঠানই বর্জন করেন। উপজেলা বিএনপির মধ্যে এমন বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, এখন আওয়ামী লীগের শাসন আমল চলছে। এ সময়ে বিএনপির সবাই একাট্টা হয়ে দলীয়ভাবে কাজ করা উটিত। কিন্তু তারা তা না করে নিজেদের আখের গোছাতে দলে বিভাজন সৃষ্টি করছেন।
তারা বলেন, পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইলিয়াস খান উপজেলা বিএনপির দায়িত্ব নিতে আহ্বায়ক নুরুল আমীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ইলিয়াস খানের অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা একাংশের দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এমএসএম / জামান