মাসুদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বালুরঘাট দখল চেষ্টার অভিযোগ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বালুর ঘাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। হামলা-পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের লোকজন আহত হচ্ছে। গত সপ্তাহখানেক ধরে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলায় দুইপক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষজন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তবে ঘটনার সূত্রপাত শুরু হয়েছে গত ইউপি নির্বাচনে নিকরাইল ইউনিয়নে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই। উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় দল থেকে বহিস্কৃত সাবেক ইউপি সদস্য মাসুদুল হক মাসুদ। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই শুরু হয় বালুর ঘাট দখলের চেষ্টা। আর এতেই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে দুইপক্ষ। 

জানা গেছে, উপজেলায় গত ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার নৌকা প্রতীকে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বিদ্রোহী হিসেবে মাসুদুল হক মাসুদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। এতে দল থেকে বহিস্কার করা হয় মাসুদকে। পরবর্তিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয় মাসুদ। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইউনিয়ন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে বালুর ঘাট দখলের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ। দখলে যোগ দেয় চেয়ারম্যানের অনুসারী ইউপি সদস্য নরুল ইসলাম ওরফে নুহু মেম্বার।

এদিকে নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালুর ঘাট পরিচালনা করে আসছে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকারের অনুসারী বর্তমান ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম। পাটিতাপাড়ার ঘাট দখলে মরিয়া হয়ে উঠে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ ও তার অনুসারী বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে নিকরাইলে বালুর ঘাট দখলে মরিয়া হয়ে উঠছে। গত এক সপ্তাহে কয়েকবার সংর্ঘষ ও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষজন আহত হয়েছে।

গত ৩০ মে রাতে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ ও ইউপি সদস্য নুহুর অনুসারীদের হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছে। এতে গুরুত্বর আহত অবস্থায়  আওয়ামী লীগ কর্মী ইসমাইলকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার (৩১ মে) সকালে মাসুদ চেয়ারম্যানের অনুসারীর জুরান মন্ডল গ্রুপের সাথে বালু ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে জুরান মন্ডল ও তার ছেলে গুরুত্বর আহত হয়েছে। তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের গাড়ির চালক আব্দুল আলীম উপস্থিত ছিলেন। পরে বালু ব্যবসায়ীদের ধাওয়ায় আলীম পালিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান মাসুদের পক্ষ নিয়ে চালক আলীম জুরান মন্ডল গ্রুপের লোকজনদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। 

এদিকে সম্প্রতি বালুর ঘাট দখলে ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেয় নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি মোজাফফর প্রামানিক, সাধারন সম্পাদক আকবর প্রামানিক এবং মোজাফফরের ছেলে বিএনপির কর্মী ফেরদৌস। অন্যদিকে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ, নুহু মেম্বারসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠন। 
 
পাটিতাপাড়া এলাকার সোবহান জানান, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই মাসুদ চেয়ারম্যান, নুহু মেম্বার ও তার অনুসারীরা বালুর ঘাট দখলের চেষ্টা করছে। এতে এলাকায় প্রত্যেকটা দিন মারামারির ঘটনায় আহত হচ্ছে মানুষজন। একপক্ষ আরেকপক্ষকে পেলেই আক্রমণ শুরু করে। এতে পুরো ইউনিয়নে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বালুর ঘাটকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে। 

পূর্নবাসন এলাকার শুকুর আলী জানান, আগে কখনো এতো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। বালু বিক্রির লাখ লাখ টাকার লোভ কেউ সামলাতে পারে না। পাটিতাপাড়ায় নজরুল মেম্বারের বালুর ঘাট দখল নিতে প্রতিনিয়ত মারামারির ঘটনা ঘটছে। ওই মেম্বার কয়েক বছর যাবৎ ঘাট পরিচালনা করে আসছে। 

স্থানীয়রা জানান, বালুর ঘাটকে কেন্দ্র করে উত্ত্যপ্ত হচ্ছে নিকরাইল ইউনিয়ন। এতে সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন। প্রতিনিয়তই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটছে। গেল ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু হয়েছে এই হামলা-মামলার ঘটনা। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে এমন ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। 

নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও পাটিতাপাড়ার বালুর ঘাট মালিক নজরুল ইসলাম জানান, জমির মালিকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বালুর ঘাট করে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু মাসুদ চেয়ারম্যান হওয়ার পরই বালুর ঘাট দখলে নিতে চায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের সাথে মিলিত হয়ে আমাদের লোকজনের উপর হামলা করছে। 

নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ জানান, বালুর ঘাট কেউ কারোটা দখল করছে না। তবে জমির মালিকরা আর সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজনকে জমি না দেয়ায় তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০জন আহত হয়েছে। প্রত্যেক ঘটনাই পুলিশকে জানানো হয়েছে। আবার হামলার শিকার যারা হয়েছেন তারাও থানায় অভিযোগ দিয়েছে। 

নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার জানান, আমার নামে কোন বালুর ঘাট নেই। বালুর ব্যবসাও করি না। পরিকল্পিতভাবে নৌকাকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মাসুদ চেয়ারম্যান, নুহু মেম্বার ও জুরান মন্ডলের নেতৃত্বে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও হামলা চালানো হচ্ছে। হামলায় এপর্যন্ত প্রায় ৩০জনের মত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের দিয়ে এই হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে বালুর ঘাট দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। 

এ ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনায় দুইপক্ষ থেকে দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুইটি মামলায় এপর্যন্ত ১০জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বালুর ঘাট চালু করাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছে। এখনও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নিকরাইল এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকল ধরনের ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।