ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

কমলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া দলিল সম্পাদন হয় না


সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ photo সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ
প্রকাশিত: ১৫-৬-২০২২ বিকাল ৫:২৩
কমলগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। ঘুষ ছাড়া এখানে এখন কোনো দলিল হয় না। সবাই সব কিছু জানেন। কিন্তু কেউ মুখ খোলেন না, প্রতিবাদও করেন না। আর দলিল লেখকদের তো সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তাই ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
 
গুঞ্জন রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লা লতিফের দাবিকৃত বাড়তি টাকা দিলেই ভুল সঠিক হয়ে যায় আর না দিলে দলিলে ভুল আছে দাবি করে আটকে দেয়া হয়। এতে দলিল লেখকদের পাশাপাশি জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা অহেতুক হয়রানির শিকার হন। দলিল লেখকদের দাখিলকৃত দলিলে অনেক সময় ভুল ধরা পড়ে। সংশোধনের সুযোগ থাকা সেই ভুল সংশোধন করতে না দিয়ে বিষয়টি জটিল করে দলিলদাতা ও গ্রহীতাদের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
 
অভিযোগ আছে, ঘুষের টাকা প্রতিটি দলিল লেখককে সরকারী ফিসের সাথে হিসাব করে বুঝিয়ে দিতে হয় সাব রেজিস্ট্রি অফিসের টিটি মোহরার পিযুষ ভট্টাচার্যের কাছে। তার হাত ঘুরে সেই টাকা যায় সাব-রেজিস্ট্রারের পকেটে। আগে এই টাকা আদায় করতেন অফিস সহকারী রতিন্দ্র ভট্টাচার্য। কিন্তু অতিসম্প্রতি অতিরিক্ত ঘুষ দাবি নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে দলিল লেখক সমিতির সভাপতির বাকবিতণ্ডা ও সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করে দলিল লেখক সমিতি। দলিল লেখকদের ওই কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের পর অফিস সহকারী রতিন্দ্রকে ঘুষের টাকা আদায়ের কাজ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। দলিল লেখকদের ওই আন্দোলনের পর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
 
জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণে আনার পর ঘুষের টাকা আদায়কারী অফিস সহকারী রতিন্দ্র ভট্টাচার্যকে পরিবর্তন করে টিসি মোহরার পিযুষ ভট্টাচার্যকে ঘুষের টাকা আদায়ের দায়িত্ব দিতেই বেড়েছে ঘুষের পার্সেন্টেজ। এখন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া দলিল হয় না।
 
সরেজমিন দেখা যায়, টিটি মোহরার কক্ষে সুকৌশলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।  ফলে টিসি মোহরারের টেবিলটা সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় না। তাই ঘুষের টাকা লেনদেনে সেখানে কোনো ভয়ও নেই। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত ওই কক্ষের একটি ভিডিও ক্লিপ দৈনিক সকালের সময় কমলগঞ্জ প্রতিনিধির হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, টিসি মোহরার পিযুষ ভট্টাচার্য এক দলিল লেখকের কাছ থেকে ১ হাজার ও ৫০০ টাকা নোটের বেশকিছু টাকা গ্রহণ করে গুনে নিচ্ছেন। আর সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অফিস সহকারী রতিন্দ্র ভট্টাচার্য।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন, আমরা এখানে অসহায়। আমরা যদি দলিলপ্রতি নির্ধারিত টাকা হিসাব করে বুঝিয়ে না দেই তাহলে দলিলই গ্রহণ করবে না। আর গ্রহণ করা হলে নানা অজুহাতে আটকে রাখা হয়। প্রতিবাদ করলে শোকজ করা হয়। লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেয়া হয়।
 
অভিযোগ রয়েছে, কমলগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার হিসাবে রহমত উল্লা লতিফ যোগদানের পর থেকে ওই অফিসে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছে। আগে অফিস সহকারী ও কয়েকজন দলিল লেখকদের মাধ্যমে তিনি এ ঘুষ বাণিজ্য চালালেও বর্তমানে টিসি মোহরারের মাধ্যমে এ ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা অজুহাতে দলিল আটকে ঘুষ নিয়ে অফিস টাইমের শেষের দিকে তিনি দলিল সম্পাদন করে দেন। করছেন তিনি নিজ হচ্ছে মতো অফিস। সাপ্তাহে ৫ দিন দলিল করার কথা থাকলেও তিনি ২ থেকে ৩ দিন দলিল সম্পাদন করেন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, হেবার ঘোষণা, বায়না রেজিস্ট্রি, বণ্টননামা দলিল,রেকর্ড মুক্তি,পাওয়ার অব অ্যাটর্নি,বায়না দলিল, কবালা দলিল সরকার নির্ধারিত নির্ধারিত ফিসাধি বাদে কয়েক গুণ বেশি টাকা নেওয়া হয়। যদি কোনো দলিল লেখক অতিরিক্ত ফি দিতে রাজি না হলে তাকে বিভিন্ন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। যে কোনো দানপত্র দলিল করতে গেলে ওই জমির ৩ ভাগের ১ ভাগের বেশি করার বিধান না থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ইচ্ছামতো দানপত্র দলিল করেন। 
 
ভুক্তভোগীরা জানান, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। এছাড়া আপোষ বন্টননামায় আরএস রেকর্ডে হিস্যা মতে প্রতি দাগে দাগে বন্টন করিয়া নেওয়ার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ তাহার বিরুদ্ধে।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও হয়রানীর ভয়ে এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে রাজি হন না।
 
ভুক্তভোগীরা বলেন, সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার কাছে। ঘুষ চাওয়াকে কেন্দ্র করে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বাকবিতণ্ডা হয়েছে দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতাদের।
 
সাব -জিস্ট্রারের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কমলগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বখতিয়ার খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
টিসি মোহরারের মাধ্যমে ঘুষের টাকা আদায় প্রসঙ্গে এক দলিল লেখক বলেন, টিসি মোহরার সাবের আদেশ তামিল করছেন। 
 
কমলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রহমত উল্লা লতিফ ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিক থাকলে কাউকে কোনো ধরনের হয়রানি করা হয় না। তবে টিসি মোহরারের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এমএসএম / জামান

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মির্জাগঞ্জে মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি

বোয়ালমারীতে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে হাঁস বিতরণ কর্মসূচি পালন

লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ