খুলনায় নেীকার প্রার্থী জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক

শেখ হারুনুর রশীদ, তিনি আবারো খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী। গতকাল শনিবার (ে১০ সেপ্টেম্বর) দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আবারো তাকেই দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। 

পরপর ৬ বার নির্বাচিত খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত বর্ষীয়ান এই নেতা ১/১১-এর পর ফকরুদ্দীন-মউনুদ্দীন সরকারের সময় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের এক সভায় উপরোক্ত উক্তিটি করেন। ওই সময় দলটির সভানেত্রী দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাখানায় ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন নেতাদের।

বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্তাভাজন এবং দলের প্রতি অবিচল আর সভানেত্রীর ওপর প্রবল বিশ্বাসী প্রায় ৭৫ বছর বয়সী এ নেতা ৬০-এর দশকে বটিয়াঘাটার ডেউয়াতলা স্কুলে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সর্ম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের খুলনা জেলা কমিটির সভাপিত নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ৫ সদস্যবিশিষ্ট খুলনা জেলা যুবলীগের কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ৮ বছর বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করেন। ৮ বছর এ দায়িত্ব পালণ শেষে ১৯৭৬ সালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পর ১৯৮২ সালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ২ বার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে পর পর ২ বার খুলনা-১ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। অধ্যাবধি তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রয়েছেন। সভাপতি পদে ৬ বার এখন অতিক্রম করছেন। বাংলাদেশে তিনিই বেশি সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাললকারী ব্যক্তি। 

২০১১ সালে তিনি প্রথম খুলনা জেলা জেলা পরিষদের প্রশাসক নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হন এবং সিংহভাগ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকে দলের প্রতি মমত্ববোধী এ বর্ষীয়ান নেতা ১৯৬৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হলে তিনি খুলনার দক্ষিণে  সুন্দরবন পর্যন্ত দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন।

১৯৬৯-এর গণ আন্দোলনে খুলনার খসরু ভাই, জামাল ভাই ও অ্যাড. মনোরঞ্জন দাসসহ শেখ হারুণ অগ্রভাগে থেকে রাজপথের মিছিলে স্লোগান তোলেন ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব।’

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরস্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা না ছাড়ায় ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে স্বাধিনতার ঘোষনা দেওয়ার পরে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্থানে নিয়ে যাওয়ার পরে ২৬ মার্চ থেকে ঐতিহাসিক স্বাধিনতা যুদ্ধ শুরু হয়।

বর্ষীয়ান এই নেতা এ সময় প্রথমে যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্যে সংগঠিত করেন। পরে ভারতে যেয়ে পলিটিক্যাল মোটিভেটর হিসেবে অত্যন্ত নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালণ করেন। পরে তিনি বশিরহাট রিক্রুট হয়ে হাকিমপুর, পিপা, তকীপুর, বেগুন্দিয়া শিবিরে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মেজর জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলায় বেনেরপোতা যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর দেশের অভ্যন্তরে সাতক্ষীরা, আশাশুনী, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার অনেক খণ্ড যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র অংশ গ্রহন করেন।  

দীর্ঘ এ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবণে কখনও দলীয় প্রশ্নে  কারও সাথে আপস করেননি এবং দলীয় প্রধানের কথামতো সকল কর্মকাণ্ড নিষ্ঠার সাথে পালণ করেছেন। জীবনের শেষ বেলায় তাইতো আবারো সভানেত্রী শেখ হাসিনা বর্ষীয়ান এ নেতাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন করে পুনরায় মূল্যায়িত করেছেন।  আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।