দ্রব্যমূল্যে নাকাল মানুষ, গণসমাবেশে বিএনপি

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকা। সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী দূষিত এ শহরে বাস করে ১ কোটি ২ লাখেরও বেশি মানুষ। তারমধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব আবাসন সুবিধা নেই। নগরে বাস করা স্থায়ী বাসিন্দা ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের পানির সমস্যা আছে, বিদ্যুতের সমস্যা আছে, গ্যাসের সংকট আছে, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে ঘাটতি আছে। নগরবাসীর এসব সমস্যা তুলে ধরার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল নেই। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৪৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত। যারা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের আগে ভোট চায়। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের সাধারণ মানুষের অসংখ্য অভিযোগ আছে, যা অগণিত। মানুষের সমস্যাগুলো অগণিত কারণ, সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার মতো রাজনৈতিক দল মাঠে নেই। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অনেকগুলোই কাগুজে দল। দৃশ্যমান কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক দল আছে, যারা সরকারি দলের সকল উদ্যোগের প্রশংসা করার দায়িত্বটি গুরুত্বের সাথে পালন করে এবং আর কিছু দল আছে যারা ঢালাওভাবে সরকারি দলের সমালোচনা করে। প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দল বা প্রকৃত সমালোচনা করার মতো রাজনৈতিক দলের অভাব আছে দেশে। তাই সাধারণ মানুষের যৌক্তিক দাবিগুলো সবসময় উপেক্ষিত।
বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এই বিরোধী দল গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে সমালোচিত। মাঠে সরকারি দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। বিগত ১৫ বছর বিএনপি মাঠে যেসব দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে, সেখানে সাধারণ মানুষের দাবিগুলো গুরুত্ব পেয়েছে কম। এই দলের প্রধান দাবির মধ্যে ছিলো- দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলামুক্ত করে দেশের ভেতরে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া। আজকের এই দিনে বলা যায়- মাঠের আন্দোলনে অনেকখানি সফল বিএনপি। কারণ আমরা দেখছি- বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে কারামুক্ত। এখন বিএনপির প্রধান দাবি হচ্ছে- দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলামুক্ত করা এবং দেশে আসার সুযোগ দেওয়া। এই প্রধান দাবির সঙ্গে তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ কিছু বিষয়ের কথা বলছে। কার্যত তারা বক্তৃতা, বিবৃতিতে তারেক রহমানের দেশের আসার বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। শুধুমাত্র মানুষের যৌক্তিক অধিকার আদায়ের দাবিতে তারা মাঠে নেমেছে বা আন্দোলন করেছে এমন খবর গণমাধ্যমে আসছে না। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বিএনপি যে বিভাগীয় মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে, মহাসমাবেশের ভাষণে বক্তারা যা বলেছেন, সেখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সরকারের পতন, বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা, কারাগারে থাকা এবং সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের কারামুক্ত করা এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বাধ্য করানোর বিষয়গুলো। সাধারণ মানুষের চাওয়া বা সাধারণ মানুষের দাবিগুলো পরের দিকে। একটি আদর্শ বিরোধী দল অথবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের প্রধান কাজ শুধুমাত্র সরকারের বিরোধীতা করা নয়, তাদের দাবির পক্ষে সঠিক যুক্তি প্রমাণ তুলে ধরা এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, বিশেষভাবে তার নির্দেশনা দেওয়া।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা উদ্ধারের নামে বিএনপি দেশের বাইরে যে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা অনেকটাই দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকাণ্ডের শামিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের বিষয়ে আমেরিকা প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে আমেরিকায় প্রপাগাণ্ডা চালিয়েছিল বিএনপি। অথচ বাংলাদেশে র্যাবের প্রতিষ্ঠা, ক্রস ফায়ার এর নামে বিচারবহির্ভুত হত্যার সূচনা করেছিল বিএনপি। সেই সময়ে ‘ক্রসফায়ার’ এর কল্পিত গল্প প্রকাশ করতে বাধ্য হতো গণমাধ্যমগুলো। গেল ১৫ বছরে যে কয়টি বড় ইস্যু জনগুরুত্বপূর্ণ ছিল, যে কয়টি বিষয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণভাবে এসেছে। যেমন- নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বুয়েটে আবরার হত্যা প্রসঙ্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাস আন্দোলন, অতীতের যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গ, ইডেন কলেজের রাজনৈতিক সমস্যা কিংবা বর্তমানের অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য, সকল বিষয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল বিএনপি। বিদেশে অর্থ পাচার ও সরকারের দুর্নীতির প্রসঙ্গে বিএনপি বারবার মুখে বললেও কার্যত তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে এবং অর্থপাচারকারীদের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে উপস্থাপন করেনি। সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি এমন নির্লিপ্ত আচরণের কারণে সরকারের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এখন সরকার যখন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তখন সাধারণ মানুষ বিএনপি’র পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না।
বর্তমান সময়ে বিভাগীয় পর্যায়ের মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দিচ্ছে বিএনপি আর বিএনপিকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাবছে সরকার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির ধারা অনুযায়ী দুই দল মুখোমুখি ও সাংঘর্ষিক অবস্থানে। আধুনিক যুগে লাঠিসোঁটার পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করছে বিএনপি। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করা সরকারি দল আওয়ামী লীগও মাঠে প্রমাণ দিচ্ছে পুরোনো অভ্যাসের। দুই দলের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি সাধারণ মানুষ। যার প্রমাণ যেখানে মহাসমাবেশ, সেখানেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, সেখানেই জনদুর্ভোগ।
বৈশ্বিক কারণেই বর্তমান সরকার এখন চাপের মুখে। দেশে ডলারের দাম বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আমদানি ব্যয় বাড়ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সংকট তীব্র হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি ও শিল্প কারখানা উৎপাদন। সরকার যখন এই চাপ সামাল দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, সেই সময় নতুন করে মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। যা গণতান্ত্রিক দৃষ্টিতে মঙ্গলজনক মনে হলেও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিপজ্জনক বাংলাদেশের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে মহসমাবেশ থেকে মাঠ উত্তপ্ত না করে, অর্থনৈতিক মহামন্দা মোকাবিলায় আমাদের করণীয় নির্ধারণ করা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনীতির মাঠে গলাবাজি করার আগে আয়নায় নিজের মুখটি আরেকবার দেখে নেওয়া উচিত।
লেখক- ছড়াকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়
এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য
