ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

উপকূলে বিদ্যালয়টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করছে


সম্রাট, কয়রা photo সম্রাট, কয়রা
প্রকাশিত: ১৫-১১-২০২২ দুপুর ১২:৫৬

সময়টা ২০১৫ সাল। আমি মাষ্টার ডিগ্রী শেষ করার পর এলাকায় এসে বিভিন্ন সমাজ সেবা মুলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। আমি, আমার পিতার ফরজ আলী সানা ও আমারসহ ধর্মীনি শাহারিমা জামান  নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সংস্থা ’ নিয়ে এলাকার পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মাঝে কাজ করি। হঠাৎ একদিন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুল করার চিন্তা মাথায় আসে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষেরা সমাজের বোঝা নয়,উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারাও সমাজের জন্য কিছু করবে তারা এমন চিন্তা ভাবনা নিয়ে  বিষয়টা নিয়ে কথা বলি আমার পিতা,আমার পরিবার ও বন্ধু মহলের সাথে । ইতিবাচক সাড়া দেয় সবাই। স্কুলের কথা শোনে অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দেন আমার পিতা, সহধর্মিণী ও আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু মহল । উৎসাহটা তখন আরো বেড়ে যায়।এক কান, দু কান করে স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্পটা এরই মাঝে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের যুব সমাজের মাঝে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে গ্রামের শিক্ষিত তরূণ-তরূণীরা।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গল্পের পরিধিটা। সবার সিদ্ধান্তে স্কুলের নামকরণ করা হয় ‘ শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়’।  সকলের সম্মতি ক্রমে আমাকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন  সংস্থার  পৃষ্ঠপোষকতায় কয়রা সদরের কয়রা থানা সংলগ্ন তিন একর জায়গা নিয়ে ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বিদ্যালয়টির । প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্পের শুরুর দিকটা এভাবেই এই প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন ‘বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের  প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ও কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুন আওয়ামী লীগ নেতা এস এম বাহারুল ইসলাম ।

তিনি বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরুতেই স্বপ্রণেদিত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন আমার সহধর্মিণী শাহারিমা জামান,  এলাকার বাসিন্দা, জাহাঙ্গীর আলম, শিরিন আক্তার, রোকনুজ্জামান কাজল, জাহানে আলম উজ্বল,মাসুদ মোস্তফা, আয়তুল্লাহ, মোস্তফা , লিনা সহ অনেকই। এরপর সবার সহযোগিতা নিয়েই নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে বিদ্যালয়টি এখন উপজেলার প্রতিবন্ধী  ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যালয়টি উপজেলায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করছে।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা পেলে আমরা বিদ্যালয়টিকে দেশের মডেল স্কুলে পরিণত করতে পারবো।বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা ও সংকট মোকাবিলা করে বিদ্যালয়টি এখন নিজস্ব জায়গায় বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে।  চলতি বছরের শুরু থেকে স্কুলের পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে পুরো দমে। বর্তমানে ওই স্কুলটিতে ৩০৯ জন প্রতিবন্ধী শিশু পড়াশোনা করছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক সহ সর্বমোট ১৮ জন শিক্ষক বিদ্যালয়টি এখনও এমপিও ভুক্ত না হওয়ায়।

এখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করছেন। সহকারী শিক্ষকরা বলেন , অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বহুমুখী উদ্যোগ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা বেতনে কাজ করছি। স্কুলটি জাতীয়করণ ও শিক্ষকরা বেতন ভাতা পেলে আমরা মানবেতর জীবন যাপন থেকে মুক্তি পেতাম।শিক্ষকরা উপকূলের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা বিদ্যালয়টিক জাতীয়করণের জোর দাবি জানান।সম্প্রতি স্কুলটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা অনাথ কুমার বিশ্বাস  বলেন, আবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছি। অনুমোদন হলেই আমরা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার ব্যবস্থার প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।গত মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেদক যখন ওই বিদ্যালয়ের  আঙিনায় পা রাখেন তখন স্কুলের ভেতর থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কলরব ভেসে আসছিলো। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক শিক্ষিকারা খুবই যত্নের সাথে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদান করাচ্ছেন।পাশে রুমের এক পাশে চলছে শিক্ষকদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। অন্যপাশের একটি অংশে সারি সারি বেঞ্চ- টেবিল ও মাদুর বিছিয়ে রেখে শিক্ষার্থীদের পাঠাদান দেওয়া হচ্ছে।

অধ্যয়নরত স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বয়স ৫ থেকে ১৮ এর মধ্যে। কেউ দৃষ্টি, কেউ বাক, কেউবা বুদ্ধি আবার কেউবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিক্ষার্থীরা সবাই কয়রা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা। এখানে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, গান-বাজনার, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশা পাশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের  মাধ্যমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ  দিচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের সামনে সারি বন্ধ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী করা ভ্যান গাড়ি। তবে নেই বিদ্যালয়ের সিমানা প্রাচীর, ভবনের ও রয়েছে সংকর্ট, নেই তাদের খেলা ধুলার পর্যাপ্ত জায়গা পার্ক। বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র মো. মিরাজ হোসেন ও ২য় শ্রেণির সাদিয়া সুলতানা বলেন, শিক্ষকরা আমাদের যত্ন সহকারে ক্লাস করান। আমরা সরকারের সকল সুবিধা পেতে চাই, আমাদের এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি খুব দ্রুত বিল্ডিং খেলার পার্ক  হলে আমরা খুব খুশি হবো।কথা হয় স্কুলের সহাকারী  শিক্ষক  রোকনুজ্জামান কাজলের  সাথে । তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে আসার আগে একরকম ঘরবন্দি অবস্থায় থাকত। কিন্তু স্কুলে আসার পর থেকেই ওদের জীবন পাল্টে যেতে শুরু করেছে। আলো আসতে শুরু করেছে তাদের জিবনে।প্রশিক্ষণ পেয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী  কেউ কেউ ভালো গান গাইতে পারে। নাচতে পারে। এরই ফাঁকে স্কুলের আঙ্গিনা ঘুরে  ঘুরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই অঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার জন্য কোনো স্কুল নেই। তাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ যে সকল দরিদ্র প্রতিবর্ন্ধী শিক্ষার্থীদের ভালো স্কুলে (প্রতিবন্ধী) পড়াশোনার সামর্থ্য নেই তারাই এখানে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়মিত স্কুলে আসা দেখে অন্য প্রতিবন্ধী শিশুরাও স্কুলে আসার বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।বিশেষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মা গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মিনারা খাতুন বলেন,প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আমার সন্তানকে কোনো স্কুলে ভর্তি করাইতে পারছিলাম না।আগে বাড়িতে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকত।

এ স্কুলটি হওয়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে। অন্যসব শিশুদের সাথে সে স্কুলে আসছে, ছবি আঁকছে, খেলাধুলা করছে। এখন সে অনেক স্বাভাবিক। এসব শিশুদের মানসিকভাবে গড়ে তুলতে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই।বিদ্যালয়টির  প্রতিষ্টাতা প্রধান  শিক্ষক এসএম বাহারুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো শিক্ষকরা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করছে। তবে প্রতিমাসে বিদ্যালয়ের যাতীয় খরচ আমরা নিজেরাই খরচ করছি। তাছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ, টেবিল, ক্রীড়াসামগ্রী, গান বাজনার সরঞ্জাম, স্কুল ভ্যান সহ প্রয়োজনীয় নানা আসবাবপত্র ও জিনিসপত্রের সংকট রয়েছে। তারপরেও সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আমরা সকলের সহযোগিতায় স্কুলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান  বলেন,প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা  এটা একটা ভাল উদ্যোগ। আমরা জাতীয় করণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠিয়েছি। উপরের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে করা বিদ্যালয়টিতে আমরা  সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

এমএসএম / এমএসএম

মির্জা ফখরুলকে নিয়ে কন্যার হৃদয়স্পর্শী পোস্ট

পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নের বিরুদ্ধে তৃণমূলের তীব্র ক্ষোভে উত্তাল নেছারাবাদ উপজেলা

কুমিল্লায় মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ

ধামইরহাটে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিশুদেরকে কোরআনের ছবক প্রদান

আদমদীঘিতে নিখোঁজের ৩দিন পর ডোবার থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

পাবনায় রেজিস্টারদের প্রাণনাশের হুমকি! সেই শাহীনসহ ৬ দলিল লেখকের সনদ বাতিল

হালদা নদী থেকে বালুভর্তি ড্রেজার জব্দ, চালককে জরিমানা

‎শাল্লার কুশিয়ারা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের তান্ডব,নদীভাঙনের মুখে শত শত ঘরবাড়ি

বগুড়ার শেরপুরে মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত

গ্রাম আদালতকে আরও গতিশীল করতে চেয়ারম্যানদের নিয়ে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের চেষ্টা চলবে-নেত্রকোনায় দেলাওয়ার হোসেন আজিজী

চট্টগ্রামের ৫টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ

কটিয়াদীতে পুকুরের পানিতে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু