ভূ-কৌশলগত নতুন মেরুকরণে চীন-সৌদি আরব
সৌদি আরব এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যে প্রথম কূটনৈতিক সফর ১৯৯৯ সালে হয়। এ সময় প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন রিয়াদ সফর করেন। ১৯৯৯ সালের কৌশলগত তেল সহযোগিতা চুক্তি এ সময় স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে।২০০০-এর দশকে চীন-সৌদি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। ২০০৪ সালে, চীন এবং সৌদি আরব নিয়মিত রাজনৈতিক সিরিজ বৈঠক শুরু করে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে, বাদশাহ আবদুল্লাহ প্রথম সৌদি রাষ্ট্রপ্রধান যিনি চীন সফর করেন। চীনে থাকাকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত পাঁচটি বড় চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রেসিডেন্ট হু তখন বলেছিলেন, দুই দেশের এই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নতুন শতাব্দীতে চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায় লিখবে। প্রেসিডেন্ট হু ইতিহাসে দ্বিতীয় বিদেশী নেতা যিনি সৌদি আরবের আইন পরিষদে ভাষণ দেয়ার অনুমতি পান। এক সময় চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে যোগাযোগের পর প্রথম চীন-সৌদি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় ওমানে ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে। দুই দেশের সরকার ২১ জুলাই ১৯৯০ তারিখে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে আরব বসন্তের পর চীন এবং সৌদি আরবের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক সৃষ্টি হতে থাকে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখ যোগ্য ভাবে উষ্ণ হচ্ছে। ২০১৫ সালের এক জনমত জরিপে বলা হয়, ৬১.৩ শতাংশ সৌদি চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। দু’দেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক হলো চীন ও সৌদি আরব জ্বালানি ও আর্থিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। রিয়াদ বেইজিংয়ের সাথে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ এবং আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও ইঙ্গিত দেন যে চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার কূটনৈতিক অবস্থান বাড়াতে পারে। সৌদি আরব বিশ্ব ও আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য চীনের এক কাজ করতে চায়।
কিন্ত বর্তমান প্রেক্ষাপটে দু’টি ঘটনা আবারও বিশেষভাবে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে নিয়ে এসেছে চীনকে। এর একটি হলো দেশটির কয়েকটি প্রধান শহরে কঠোর লকডাউনের বিরুদ্ধে নাগরিকদের নজিরবিহীন বিক্ষোভ। যেখানে দেশটির নেতা শি জিনপিংয়ের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে। চীনে বিক্ষোভের ঘটনা বিরল হলেও মাঝে মধ্যে তা ঘটে। কিন্তু এবারের বিক্ষোভের ঘটনাকে ইউরেশিয়ার সঙ্কট হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকরা। অন্য দিকে, ৭ ডিসেম্বর চীনা নেতা শি সৌদি আরব সফর করেছেন। এর আগে বাইডেনও সৌদি সফর করে আরব সম্মেলন করেছেন। কিন্তু দুই সম্মেলনে স্বাগতিক দেশের সাড়া ও প্রস্তুতি একরকম মনে হচ্ছে না। তাহলে কি সৌদি আরব বা আরব দুনিয়ার ভূ-কৌশলগত সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আসছে? জায়গা করে নিচ্ছে চীন ও রাশিয়া। খ্যাতনামা বিশ্লেষক জর্জ ফ্রিডম্যান এর দু’টি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন। একটি হলো চীনা সরকার কোভিডের এমন একটি মিউটেশন রোধের চেষ্টা করছে যা বাইরের বিশ্ব জানে না। এটি হতে পারে নতুন, মারাত্মক স্ট্রেন, যা থেকে এমন শারীরিক বিপত্তি ঘটতে পারে যা আগে কারো হিসাবের মধ্যে নেই। দ্বিতীয় এবং আরো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো যে, বেইজিং এমন জায়গাগুলোর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য কঠোর নীতি চালু করে যেগুলো ইতোমধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ ছিল নিছক অজুহাত। এটি ঠিক যে, এই বিক্ষোভ রাতারাতি তৈরি হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতি খুবই খারাপ করেছে। রফতানি বাধার মুখোমুখি হওয়ায়, অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে অভ্যন্তরীণ ভোগ এবং দেশীয় বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। রূপান্তরটি রুক্ষ হয়েছে যেটি সাধারণত এই পরিস্থিতিতে থাকা দেশ গুলোর জন্য হয়। এটি অনিবার্যভাবে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, সামনে কী ধরনের জীবন রয়েছে। কয়েক দশকের বিস্ফোরক প্রবৃদ্ধির পর, অবস্থা প্রত্যাশার বিপরীতমুখী হতে পারে।
বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি যদি কোনোভাবে আরো কিছুর সূচনা হয়,তবে চীনের শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। এটি ঘটার একই সময়ে রাশিয়ার শক্তি পতনশীল হয়ে উঠেছে এবং একই সময়ে ইইউ তার একীভূত দিক সম্পর্কে আরো বেশি অনিশ্চিত। ফলে এটি হতে পারে যে, পুরো ইউরেশিয়া সঙ্কটে রয়েছে। এর অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপেক্ষিক শক্তি নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। এটি লক্ষণীয় যে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে তার অবস্থান স্থিতিশীল না করে, যদি ইইউ তার প্রয়োজন মতো সমন্বয় না করে এবং যদি চীনা বিক্ষোভগুলো প্যানে ফ্ল্যাশ করার চেয়েও বেশি কিছু হয়, তবে নতুন একটি বিশ্বের উদ্ভব হতে পারে। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স, মুহাম্মদ বিন সালমান, চীন সফর করে চীনা রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। এ সময় দুই পক্ষ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সম্মত হন। উভয় পক্ষেরই নিজস্ব দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড এবং সৌদির ভিশন ২০৩০ কৌশল বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার ব্যাপারে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স চীনে একটি পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হন। সফরের সময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সৌদি আরবের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শেখাতে সৌদি আরবের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন। এটি এখন বাস্তবায়ন হয়েছে। চীন-সৌদি বাণিজ্য ২০০০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ২০০৫ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সৌদি আরব প্রথমবারের মতো চীনের বৃহত্তম তেলের উৎস হিসেবে অ্যাঙ্গোলাকে ছাড়িয়ে যায়। ২০০৮ সালে, চীন-সৌদি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের যা সৌদি আরবকে পশ্চিম এশিয়ায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার করে তোলে। চীন-সৌদি বাণিজ্যের ব্যাপক বৃদ্ধির সাথে, সৌদি আরব চীনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আবির্ভূত হয়।
২০১৯ সালের মে মাসে, চীনের সৌদি অপরিশোধিত তেলের আমদানি ৪৩ শতাংশ বেড়ে সৌদি আরবকে চীনের শীর্ষ সরবরাহকারী করে তুলেছে। সৌদি আরব এবং চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ১৯৮০ এর দশকে আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি এফ-১৫ ফাইটারের জন্য সৌদি আরবের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে অস্বীকার করলে, যুবরাজ খালিদ বিন সুলতান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য চীনে যান। সৌদি আরব ১৯৮৮ সালে চীনের সাথে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি পারমাণবিক-পেলোড- সক্ষম সিএসএস-২ মধ্য-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার জন্য একটি চুক্তি করেন। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, চীন তার এক হাজারেরও বেশি সামরিক উপদেষ্টাকে সৌদি ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় রেখেছে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী চীনের সহায়তায় সৌদি তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে, সিএনএন রিপোর্ট করেছে যে, স্যাটেলাইট ইমেজগুলো ইঙ্গিত দেয় যে সৌদি আরব, চীনা সহায়তায়, একটি অনির্ধারিত ধরনের কঠিন জ্বালানিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। ১৫ জানুয়ারি, ২০১২-এ, চীন এবং সৌদি আরব পারমাণবিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটিতে চীন এবং সৌদি আরবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্র তৈরি করে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গবেষণা চুল্লিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নের পাশাপাশি পারমাণবিক জ্বালানি উপাদান সরবরাহের মতো ক্ষেত্রগুলোতে মনোনিবেশ করা হয়। ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এ ধরনের চুক্তির পর এই চুক্তি সৌদি আরবের চতুর্থ পারমাণবিক চুক্তি। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে সৌদি চীনের সহায়তায় তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারিত করেছে। সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টি চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
সৌদি আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলগত সমঝোতা ছিল সৌদি রাজতন্ত্র বৃহত্তর পরিসরে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে। এই সমঝোতা অনুসারে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সৌদি জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ ও বিক্রি করা হয় মার্কিন ডলারে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রের ক্ষমতার নিরাপত্তা বিধান করতে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধকাল পর্যন্ত এ সমঝোতা কার্যকরভাবে বজায় ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান এবং জুনিয়র বুশের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই সমঝোতায় চিড় ধরে। আমেরিকান গভীর ক্ষমতা বলয়ের একটি অংশ মনে করে, নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলা ও আলকায়েদা গঠনের পেছনে সৌদি নিরাপত্তা পরিষেবার সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজস্বভাবে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করে। শেল অয়েল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব চাহিদা পূরণ হওয়ায় সৌদি তেল নির্ভরতা কমতে থাকে। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তা ছায়া গুটিয়ে নিতে থাকে। এর মধ্যে ২০১০-১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী আরব বসন্ত শুরু হলে রাজতন্ত্র ও একনায়কতান্ত্রিক শক্তিগুলো ক্ষমতা হারানোর ব্যাপারে ভীত হয়ে পড়ে। এর পেছনে পাশ্চাত্যের সমর্থন দেখতে পায় শাসক মহল। এই অবস্থায় সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। প্রথমত, তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেলের বিকল্প বাজার সন্ধান। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র ও ক্ষমতার নিরাপত্তা ছাতা অণ্বেষণ। এই দু’টি ক্ষেত্রে উপসাগরীয় দেশগুলো মাত্রা ভেদে নিজেদের অরক্ষিত দেখতে পায়। সে সাথে তারা বিকল্প অনুসন্ধান শুরু করে। জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশেষ দুই প্রধান অপশ্চিমা বাজারের একটি হলো চীন, আরেকটি ভারত। সৌদি আরবসহ প্রধান জ্বালানি রফতানিকারক দেশগুলো জ্বালানির এই দুই বাজার নিশ্চিত করার জন্য চীন ও ভারত দুই দেশের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির দিকে অগ্রসর হয়। আর নিরাপত্তা আশ্রয়ের বিষয়ে অপশ্চিমা দুই প্রধান ক্ষমতাধর দেশ হলো রাশিয়া ও চীন।
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণের অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়িয়ে প্রতিরক্ষা খাতের সহযোগিতার বন্ধন তৈরি করে, রাশিয়া ও চীন দুই দেশের সাথে। এরই মধ্যে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ৭ ডিসেম্বর সৌদি আরব সফর করেছেন। তাঁর এই সফর জ্বালানি, নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট কয়েক ডজন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শি’র এই সফর এবং শীর্ষ সম্মেলন আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের অনুরোধের বিপরীতে ওপেক প্লাস দ্বারা প্রতিদিন তেলের উৎপাদন দুই মিলিয়ন ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পরই হচ্ছে। সৌদি আরব এবং প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতও চীন আর রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে পক্ষ বেছে নেওয়ার মার্কিন চাপ প্রতিহত করেছে। পরিকল্পিত এই শীর্ষ বৈঠকের খবর বের হওয়ার পর পেন্টাগনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে জড়িত থাকার প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। পেন্টাগন তার বার্ষিক চায়না ডিফেন্স পাওয়ার শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছে, যেহেতু আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা,মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক স্বার্থ প্রসারিত হচ্ছে তাই আমরা বিশ্বব্যাপী শক্তি প্রক্ষেপণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর বর্ধিত ফোকাস দেখতে পাবে বিশ্ব। রিয়াদের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, এবারের চীন-আরব সম্মেলনের পরে বাইডেন প্রশাসন এমবিএসকে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং তাকে আমন্ত্রণ করে সমঝোতা করতে বাধ্য হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। শাসন পরিবর্তনের যে এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্বপ্ন বাইডেনের এই অঞ্চলে রয়েছে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। এখন দেখার বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের গভীর ক্ষমতা বলয় চীন-রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে গভীরভাবে সম্পৃক্ততাকে কিভাবে দেখে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক, যুক্তরাজ্য
প্রীতি / প্রীতি