মাঠজুড়ে শর্ষে ফুলের সমারোহ; বাম্পার ফলনের আশা
যতদূর চোখ যায় শুধু সরিষা আর সরিষা। এই সরিষা চাষ তুলনামূলক সহজ ও খরচ কম। তাইতো তৈল জাতীয় ফসল সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকছেন এই জেলার কৃষকেরা। আমন ফসল ঘরে তোলার পর ওই জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তারা। উপজেলার অধিকাংশ এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে এখন যেন হলুদের সমারোহ। এবস্থায় উপজেলা কৃষি অফিস গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন বেশি সরিষা ফলনের আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারী নির্দেশনায় কৃষককে প্রনোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এলাকার কৃষকরা প্রণোদনা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে এসব জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। যা গত বছরের চেয়ে এবার কোথাও দেড় গুন আবার কোথাও দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বারি-১৪ ও বারি-১১ জাত ও দেশী জাতের সরিষাও রয়েছে। ইতোমধ্যে সারামাঠ হলুদে ছেঁয়ে গেছে। এতে আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকরা। নতুন সরিষা উত্তোলরের পর আবার তারা ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। একই জমিতে আমন আবাদের আগাম জাতের ধান কাটার পর সরিষার আবাদ করেছেন। অল্প কিছু দিন পরেই সরিষা ঘরে তুলবেন। এরপর আবার বোরো আবাদে ব্যস্ত হবেন কৃষকরা। সরিষা তোলার পর ওই জমিতে শতকরা ৩০ ভাগ রাসায়নিক সার কম লাগায় বোরো আবাদে কৃষকের খরচ কিছুটা কম হবে। এছাড়া সরিষা তেলে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা। তাই উপজেলার কৃষকরা দিন দিন সরিষার আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
এছাড়াও নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড়, পোড়াগাঁও, নন্নী, রামচন্দ্রকুড়া, নয়াবিল, কাকরকান্দি, যোগানিয়া, রূপনারায়নকুড়া, নালিতাবাড়ী, কলসপাড় ও রাজনগর ইউনিয়নে সরিষার আবাদ করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। ওই ইউনিয়নের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের পাশের মাঠে দিগন্ত জুড়ে সরিষার মাঠ। ওই মাঠের একসাথে ১০০ একর জমিতে সরিষা বুনেছেন কৃষকরা। আবাদের পরিস্থিতিও অনুকুলে আছে। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন ও কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলবেন তারা।
নালিতাবাড়ীর মরিচপুরান এলাকার কৃষক জিয়াউল হক বলেন, আমি এবার ৪০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার বারি-১৪ জাতের সরিষার বীজ ও সার পেয়েছিলাম। তাদের পরামর্শে সরিষা খেতের যত্ন নিচ্ছি। আবাদ খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি ভালো ফলন পাবো। একই এলাকার কৃষানী ফাতেমা বেগম বলেন, তার ১ একর জমিতে বারি- ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর অন্য বছরের চেয়ে আবাদ ভালো হয়েছে। তাই বাম্পার ফলন পাবেন বলে জানান তিনি।
এছাড়াও ওই এলাকার কৃষক আনিছ মিয়া ৬ একর ও আব্দুল মজিদ ৪০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এখন সারা গ্রাম যেন হলুদে ছেঁয়ে গেছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর কবির বলেন, কৃষিমন্ত্রীর অন্যতম এজেন্ডা আগামী ৩ বছরের মধ্যে সরিষার আবাদ ৪০% বৃদ্ধি করতে হবে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্লক ও উপজেলা পর্যায়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে গত বছরের ৭৫৮ হেক্টরের স্থলে বেড়ে এ বছর ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। যা দিগুন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো: মোকছেদুর রহমান লেবু জানান, কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এমএসএম / এমএসএম