গভীর জঙ্গলে জীবিকার লড়াই
ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হাজারো স্বপ্ন বোনে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যদি দেখা দেয় দরিদ্রতা, তখন নিরুপায় হয়ে থমকে পড়ে জীবন। শুরু হয় দুবেলা খেয়ে জীবন পার করার সংগ্রাম।তেমনি একজন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী সমশ্চূড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ সাজেদা বেগম। পাঁচ সন্তানের জননী সাজেদা বেগমের নিজের জমি-ঘর-বাড়ি বলতে বর্তমানে কিছুই নেই। পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকী ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে থাকেন ভাইয়ের বাড়িতে। পাঁচ জনের কাউকেই লেখাপড়া করাতে পারেননি। স্বামী ফজর আলী পেশায় একজন কৃষি শ্রমিক। বার্ধক্যজনিত কারণে কাজও করতে পারেন না নিয়মিত। সংসারে অভাব যেন তাদের নিত্যসঙ্গী।
তাই সংসারে অভাব ঘোচাতে ভোরের আলো না ফুটতেই পরিবারের সবার জন্য খাবার রান্না করে সাজেদা বেগম বেড়িয়ে পড়েন বাড়ীর পাশে গারো পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে। গাছের শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে কাপড়ের রশি দিয়ে বেঁধে মাথায় করে নিয়ে আসেন বাড়িতে। পরে তা লাকড়ি হিসেবে আঁটি বেঁধে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করে রাখেন। সারাদিনে বড়জোর দুই থেকে তিন আটি লাকড়ি সংগ্রহ করতে পারেন তারা। লাকড়ি ব্যবসায়ীরা তা বাড়ি থেকে এসে কিনে নিয়ে যায় অথবা তা বিক্রি করেন স্থানীয় বাজারে চায়ের হোটেল কিংবা রেস্তোরায় জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করেন। প্রতি আঁটি বিক্রি করে পান আশি থেকে একশো টাকা। এভাবেই একদিনে লাকড়ী কুড়িয়ে দিনে দুইশো থেকে আড়াইশো টাকা আয় করেন মাজেদা বেগম।
এভাবে যারা গভীর জঙ্গলে লাকড়ি কুড়িয়ে উপার্জন করেন তারা অধিকাংশই নারী এবং এদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। প্রায় একশো থেকে দেড়শো জন প্রতিদিনই এভাবে লাকড়ি কুড়ানোর কাজ করেন। অবশ্য এতেও প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয় তাদের। বর্তমানে গারো পাহাড়ে বেড়েছে হাতির বিচরণ। দলবেধে হাতি দিনের বেলাতেও খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে করে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা প্রানের সংশয়ে থাকেন। সম্প্রতি হাতির আক্রমণে বেশ কিছু প্রাণ নাশের ঘটনাও ঘটেছে। আবার মাঝে মাঝে বনবিভাগের লোকজন তাদের জঙ্গলে লাকড়ি কুড়াতে নিষেধ করেন। তবুও জীবিকার সন্ধানে সেই নিষেধ তাদের অমান্য করতে হয়। এ যেন গভীর জঙ্গলে জীবিকার লড়াই।
মাজেদা বেগমের সাথে কথা হলে এ পর্যন্ত সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাগো বাড়ি-ভিডা না থাহায় ভাইয়ের বাড়িতে থাহি। অভাব অনটনের সংসার। তাই দুইডা টেহার আশায় খড়ি (লাকড়ি) টুহাই। এতে কইরা দুমুঠো খাইয়া জীবন পার করতাছি।”
মাজেদা বেগমের মতো লাকড়ি কুড়িয়ে জীবন সংগ্রাম চালানো আলিয়া খাতুন (৪০) জানান, স্বামীর অভাবের সংসারে স্বচ্ছতা ফেরাতে এ কাজ করেন তিনি। যদিও তিনি জানেন এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানো সম্ভব নয়। বড়জোর দুবেলা খেয়ে পড়ে জীবন পার করা যাবে।
এমএসএম / এমএসএম