চন্দনাইশে ভূঁই খাজা মসজিদ কমিটি গঠন নিয়ে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর ভূঁই খাজা জামে মসজিদের কমিটি গঠন নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে ঈদুল আজহাকে নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ৩০০ বছর আগে ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত ভূঁই খাজা (রহ.) মোহাম্মদপুর এলাকায় আসেন। ওনার ইন্তেকালের পর ওইখানে মাজার স্থাপন হয়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ভূঁই খাজা নামে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ ও মাজার শরিফটি এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একতাবদ্ধভাবে পরিচালনা করে আসছেন।
তবে উক্ত জামে মসজিদ, মাজার পরিচালনা ও উন্নয়নের জন্য সমজিদের নামে দান করা জায়গার ওয়ারিশগণসহ ওয়াকফ দাতাদের মধ্যে আবুল কাশেম ম্যাক, একেএম ফেরদৌসসহ ২৫-৩০ জন এলাকাবাসী ১৯৯১ সালে সকলে মিলে সম্মতিনামা সম্পাদন করেন। এরপর থেকে আবুল কাশেম ম্যাক মসজিদটি পরিচালনা করছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সাল থেকে ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মদপুর ভূঁই খাজা জামে মসজিদের কমিটি নিয়ে বিরোধটি তুঙ্গে উঠে। ওেই সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে নতুন কমিটি গঠন করে মসজিদ পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে স্থানীয় মো. আবুল কাসেম (ম্যাক কাশেম) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৩ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে ২০০৫ সালে রিট আবেদন দায়ের করেন। গত বছরের ৯ জানুয়ারি রিট আবেদন শুনানি শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ স্যাটেল করে দেন। এ ব্যাপারে মো. কাসেম গত ২৮ জুন মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে, একেএম ফেরদৌস হোসেন, মো. মুসলিম হোসেনসহ ৮ জনকে বিবাদী করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। আবেদনে হাইকোর্টের স্বীকৃত কমিটি বাদ দিয়ে অবৈধ কমিটি গঠন করে ভূঁই খাজা জামে মসজিদ ও মাজারের উন্নয়নের নামে বেআইনি কাজ করার অভিযোগের প্রতিকার চান।
জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদারক করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে গত ৩০ জুন প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় গত ৮ জুলাই রাতে থানা অফিসার ইনচার্জ এর কার্যালয়ে উভয় পক্ষ বৈঠকে মিলিত হন। ইতিমধ্যে গত ৭ জুলাই দুপুরে একটি পক্ষ মাইকিং করে এবং মসজিদের মাইকে কমিটি করার ঘোষণা দিলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ৮ জুলাই রাতের বৈঠকে হাইকোর্টের রিট পিটশনের আলোকে কোন ধরণের কমিটি না করার নির্দেশ প্রদান করেন। জানা যায়, মসজিদ কমিটির বিরোধ নিয়ে ওই এলাকার মৃত এনু মিয়ার ছোট পুত্র আবদুল মজিদের জানাজা নিয়ে দু’পক্ষের রশি টানাটানি শুরু হয়। একটি গ্রুপ বিকালে ঈদগাহ ময়দান ও অপর গ্রুপ ভুঁই খাজা মাজার মাঠে পৃথকভাবে জানাজার নামাজ আদায় করেন। এ নিয়ে প্রকাশ্যে হয়ে উঠেছে দু’ পক্ষের রশি টানাটানি।
এদিকে ঈদুল আযহার দিন অথবা পরদিন মসজিদ কমিটি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, দুই শতাধিক বছরের অধিক পুরানো মোহাম্মদপুর ভুঁই খাজা জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ ফোরদৌস হোসেন সংস্কার করে নিচে কার্পেটিং ও প্রোফাইল টিন দিয়ে ছাউনি দেয়। কিন্তু জায়গা ওয়াকফা করে না দেয়ায় স্থানীয়রা জানাজার নামাজ আদায় করছেন না। মসজিদের পাশে সড়কের উপর জানাজার নামাজ আদায় করছেন তারা। এছাড়া এলাকায় মাইজভান্ডারী তরিকা ও গাউছিয়া কমিটি, তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত এর অনুসারীরা সংখ্যাগরিস্ট থাকলেও একজন ব্যাক্তি হেফাজতি মতো বাদ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
এ ব্যাপারে একেএম ফেরদৌস হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদটি এডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তারা সমাজের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল, ইমাম,খতিবসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহের জন্য বার বার ওই এডহক কমিটিকে সবার ঘরে ঘরে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। তাই সকলে মিলে যদি একটি কমিটি করা হয় তাহলে সমাজের কিছু বিত্তবানদের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে ফান্ড করে ওই খরচ বহন করতে সু্বিধা হবে। এই জন্য কমিটি করার মত দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কমিটি হওয়ার পর ইমাম ও মুয়াজ্জিনের কিছু বিদায়াত (মিলাদ/কিয়াম) দুর করে বিজ্ঞ (মোহতাম) আলেমদের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে নতুন ইমাম মুয়াজ্জিন খতিব নিয়োগ করে সুন্দরভাবে মসজিদ পরিচালনা করবেন। এছাড়া ২০০৫ সালে তিনি পূর্বের ওই কমিটির সি-সহ-সভাপতি ছিলেন বলেও তিনি জানান। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীক কাজে প্রবাসে থাকায় এখানকার পরিচালনা কমিটি কি করছেন তা তিনি জানতেন না।
তিনি আরো জানান, সাড়ে ১০ গন্ডা জায়গা ক্রয় করে বিগত ৭ বছর ফেলে রেখেছেন কিন্তু ওইখানে গরু,ছাগলের মলমুত্র থাকায় যদি কোন মানুষ মারা যায় তাহলে ঐই গরু ছাগলের মলমূত্র পরিহিত জায়গায় জানাজা পড়তে হত। এ অবস্থা দেখে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঈদগাহ ময়দান তিনি নিমার্ণ করে। পরে সেই ঈদগাহ ময়দানটি তার পিতার নামে উৎসর্গ করেন।
অন্যদিকে মো. কাসেম (ম্যাক) বলেন, উক্ত মসজিদের ১৯৯১ সাল থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০০১ সালে মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন করেছিলেন। কিন্তু একটি পক্ষ হিংসা পরায়ন হয়ে ২০০৫ সালে তার বিরোধীতা করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে নতুন কমিটি গঠন করে মসজিদ পরিচালনার নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৩ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে ২০০৫ সালে রিট আবেদন দায়ের করেন। গত বছর ৯ জানুয়ারী রিট আবেদন শুনানি শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ স্যাটেল করে দেন। কিন্তু এর মধ্যে তিনি এলাকার ৭ বাড়ী থেকে ৩ জন করে ২১জন সদস্য বিশিষ্ট একটি মুসল্লি কমিটি গঠন করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, উক্ত মসজিদ উন্নয়নের কাজে সহযোগীতা করায় তার চাচাত ভাই সাইফুলকে ২০০৫ সালে কে বা কারা অপহরণ করেন। এদিকে হঠাৎ করে ফেরদৌস নতুনভাবে কমিটি গঠন করা নিয়ে এলাকায় দুই গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে থানা অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দীন সরকারের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় ওসি (তদন্ত) মজনু মিয়াকে ফোন দিলে তিনি এ ব্যাপারে কোন কিছুই জানেন না বলে জানান।
এমএসএম / জামান