ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

একান্ত সাক্ষাৎকারে অকো-টেক্স গ্রুপের এমডি আবদুস সোবহান

নিজেকে শ্রমিক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি


সাজেদা হক       photo সাজেদা হক
প্রকাশিত: ১৪-৩-২০২৩ দুপুর ১১:৩৩

মেধা, পরিশ্রম, আর সুশাসনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করা এক মানবিক শিল্পপতির নাম প্রকৌশলী আবদুস সোবহান। চাকরি জীবনের গন্ডি পেরিয়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অকো-টেক্স গ্রুপ। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত মানসিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে অকো-টেক্স গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। শিল্পখাতে অসামান্য অবদানের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ (সিআইপি) ব্যক্তি হিসেবে তাকে ইতোমধ্যে সম্মান জানিয়েছে সরকার।  শ্রম ও নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে ২০১৭, ২০১৮ সালে পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডও। অনুপ্রেরণাদায়ক শিল্পপতি এবং সিআইপি প্রকৌশলী আবদুস সোবহানের বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক সাজেদা হক। 

প্রশ্ন: ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপি নিয়ে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে এজন্য বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

উত্তর    : আমি বলবো, এটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বিশেষ করে যারা ঋণগুলো বিতরণের সাথে জড়িত। কারণ, কোনো ঋণ ছাড়ের আগে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, রিস্ক ফ্যাক্টর যাচাই-বাছাই করতে হয়, মর্গেজ ভ্যালু দেখতে হয়- ঠিক এই জায়গাগুলোতেই চরম অদক্ষতা রয়েছে আমাদের। বলতে পারেন কপি পেস্ট অর্থনীতি। আমি অনেকটা হতাশও বলতে পারেন। কারণ, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে (বড় বড় ঋণ) বাংলাদেশ ব্যাংকের যেখানে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ঠিক সেই সতর্ক অবস্থানে তাদেরকে আমরা দেখতে পাই না। আবার কোনো কোনো অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসের খবর আমরা যেমন পাই, তারাও পান, কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় কাউকেই এখন পর্যন্ত আনেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, তা হোক কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান। তো আমার কথা হচ্ছে, ঋণ খেলাপী বন্ধ করার আগেই ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রদানের আগেই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। 

প্রশ্ন: ঋণ প্রদানে অসতর্কতার প্রধান কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর    : এজন্য দক্ষ জনবল একটি বড় কারণ বলে আমি মনে করি। কারণ এসেট এ্যাসেসমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমার মনে হয়, ব্যাংকগুলোতে এমন দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।  

প্রশ্ন: গার্মেন্টস খাতেই ৪০ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আপনার। এই খাত নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।


উত্তর: আমি দীর্ঘদিন এ ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু এখনো আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা, বায়ার, কর এবং আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থায় কোনো সমন্বয় নাই। সরকার ট্যাক্স চায়, কিন্তু প্রক্রিয়াটা অনেকটাই জটিল-এটি আরও সহজ করা দরকার। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সমন্বয়। আন্তর্জাতিক মার্কেট আমরা রিচ করতে পারছি না, কারণ আমরা প্রপার চ্যানেল পাই না অনেক সময়। ফলে এই খাতে উদ্যোক্তাও তেমন তৈরি হচ্ছে না। অথচ এটা একটা বিরাট মার্কেট। 

প্রশ্ন: কিন্তু শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ, তারা শ্রমিকদের কম মজুরি  দেন?

উত্তর: এই অভিযোগের সত্যতা একদম নাই, তা বলবো না। তবে এই অভিযোগের সত্যতা যদি আমাকে শতকরা হিসেবে জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবো ১০%। কারণ শ্রমিকরা যে মজুরি পান, প্রডাক্টের কাঁচামাল এর শ্রমিকদের ব্যয়সহ অন্যান্য সব খরচ মিলিয়েই কিন্তু আমরা প্রোপোজাল তৈরি করি। তার বিশ্ব বাজারের সাথে মিলিয়ে দেখে, তবেই অর্ডার পাই। ধরেন, আমরা শ্রমিকদের মজুরি বেশি দেখিয়ে প্রোপোজাল পাঠালাম, কিন্তু অর্ডার পেলাম  না। ফলে কি হবে আমাকে আমার কারখানাটাই বন্ধ করে দিতে হবে। এখন বলেন, যতজন কর্মী আমার এখানে কাজ করতো তাদের কাছে কি বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান আছে? বরং আপনাদের উচিৎ তাদেরকে কত দক্ষ হিসেবে তৈরি করা যায়। কারণ এই খাতে দক্ষ কর্মীর অভাব। আর প্রত্যেকটা দক্ষ কর্মীকে কিন্তু উপযুক্ত মজুরিই দেয়া হয়। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনো নিজেকে শ্রমিকই মনে করি। এখনো আমার মনে হয় না, আমি শ্রমিকদের থেকে আলাদা কেউ। বায়ার আসলে আমার এখনো মনে হয়, শ্রমিকদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি আমি। 

প্রশ্ন: কেন কোনো শিক্ষার্থীর জীবনের লক্ষ্য ‘উদ্যোক্তা’ হবো, হয় না?

উত্তর: কারণ, আমাদের কারিকুলাম জীবনমুখী না। আমাদের সমাজব্যবস্থার আমূল সংষ্কার দরকার। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন না আনলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরি হবে কিন্তু উদ্যোক্ত তৈরি হবে না। আপনি বিশ্বের দেশের দিকে তাকান, দেখবেন স্কুলবেলা থেকেই তারা প্রজেক্ট  পোপোজাল তৈরি, প্রেজেন্টেশন, কস্ট এনালিসিস- সব করতে পারে। আয়-ব্যয়ের হিসেব তারা প্রাকটিক্যালি করতে পারে স্কুল জীবন থেকেই। এভাবেই তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশে কি হয়-এটা আমি আর নতুন করে বললাম না। শুধু বলবো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। জীবনমুখী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে সব উন্নয়নই টেকসই হবে।    

   প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন করবো, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

উত্তর:  আমি বলবো, সব পেশাতেই ঝুঁকি আছে। উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। শ্রম দিতে হবে, সময় দিতে হবে। একই সাথে শেখার মানসিকতাও রাখতে হবে। ঝুঁকি যেমন আছে তেমনি সম্ভাবনাও আছে। সুতরাং সকল উদ্যোক্তাদেরকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি শুরুতেই। কারণ সবাই চাকরিজীবী হতে চায়, আর একজন উদ্যোক্তা চাকরি দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। সুতরাং আপনি অনেকের থেকে আলাদা চিন্তার মানুষ তা শুরুতেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য আপনাকে আগাম অভিনন্দন। আর কাজ শুরু করলে সমস্যা থাকবেই, সব সমস্যার আবার সমাধানও আছে। সুতরাং মাথা ঠান্ডা রেখে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান, দেখবেন সফলতা আপনাকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেবে। 

শিল্পখাতে অসামান্য অবদানের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ (সিআইপি) ব্যক্তি হিসেবে বৃহৎশিল্প (উৎপাদন) ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন অকো-টেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। শিল্পখাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়, অকো-টেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ‘ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান’ কে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআিইপি-শিল্প) সম্মাননা প্রদান করেন। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাঁকে পরপর ৭বার সিআইপি সম্মাননায় ভূষিত করে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’-এও ভূষিত হয়েছে অকো-টেক্স গ্রুপ।

একদিকে, ‘সাজিদ-সোবহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ সমাজ উন্নয়ন ও আর্তমানবতার সেবায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজে একনিষ্ঠ ভাবে নিবেদিত অকো-টেক্স গ্রুপ। বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ তালিকাতেও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান  একজন ‘বিশিষ্ট সমাজকর্মী’। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার পোরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ফরিদপুরে অকো-টেক্স গ্রুপের ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিধবা ও বয়স্ক ত্রৈমাসিক ভাতা বিতরণ করেন তিনি। ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের পুরদিয়া গ্রামে আনসার আলী মিয়া মাদরাসা চত্বরে সাজিদ-সোবহান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ৪২০ জন ভাতাভোগীকে নগদ ৫০০ টাকা, ২৫ কেজি চাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ কেজি ডাল দেন নিয়মিত। জেলার ছয়টি ইউনিয়ন সদরের কানাইপুর, কৈজুরী, কৃষ্ণনগর, চাঁদপুর এবং সালথা উপজেলার গট্টি ও আটঘর ইউনিয়নের এসব মানুষের মধ্যে প্রতি তিনমাস পরপর এ ভাতা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নসহ ৬টি ইউনিয়নের দরিদ্র ছয় হাজার পরিবারের মাঝে প্রতি ঈদে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। 

এই ধরনের সব স্বীকৃতিই সম্মানের ও অনুপ্রেরণার। অকো-টেক্স গ্রুপ ভবিষ্যতেও দেশের ও মানুষের কল্যাণে অবদান রাখবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। 

এমএসএম / এমএসএম

মহেশখালীতে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও তাজা কার্তুজ জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

নতুন ঠিকানায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ধানমন্ডি এক্সটেনশন শাখা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ ১০ টেকসই ব্যাংকের তালিকায় পরপর তৃতীয় বার যমুনা ব্যাংক

কমিউনিটি ব্যাংক’র এর সঙ্গে প্রিয়শপ ও ইনসাইটস জিনি’র চুক্তি

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি এক্সারসাইজ ২০২৫ অনুষ্ঠিত

রূপায়ণ সিটি ও বার্জার পেইন্টসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

লিড প্লাটিনাম সনদ পেল ওয়ালটনের পরিবেশবান্ধব মোল্ড অ্যান্ড ডাই ফ্যাক্টরি

পঞ্চমবারের মতো গার্টনারের স্বীকৃতি পেলো হুয়াওয়ের ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক সল্যুশন

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাসটেইনেবল রেটিং ক্রেস্ট ও সম্মাননা পেল শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি

৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ মহেশখালীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আটক: কোস্ট গার্ডের অভিযান

এনআরবিসি ব্যাংকের এজিএম অনুষ্ঠিত

স্বপ্ন চালু করলো প্রথমবার সেলফ-চেকআউট কাউন্টার

অপো নিয়ে এলো ‘ রেনো১৪ সিরিজ ফাইভজি নাইটলাইফ রেনোগ্রাফি’ প্রতিযোগিতা