ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

লটকন রাজ্য


মো. ইমন photo মো. ইমন
প্রকাশিত: ২৭-৭-২০২১ দুপুর ৩:৫৪

এ যেনো এক লটকন রাজ্য। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই লটকন আর লটকন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে নরসিংদী জেলার রায়পুরার মরজাল, বেলাবরের বাড়ৈচা, পলাশের রাবান ও শিবপুর উপজেলা সদরে ও যোশরে বসছে লটকনের পাইকারী বাজার। গ্রামে ঢুকতেই সড়কের দুই পাশে নজর কাড়ে অসংখ্য ছোট-বড় লটকনের বাগান। আছে কাঁঠাল আর জলপাইয়ের বাগানও। গাছের আড়াল থেকে ভেসে আসে ঘুঘু ও চৈতার বউপাখির সুরেলা কণ্ঠ। আপনাকে মুগ্ধ হতেই। চোখের সামনে দিয়ে যখন-তখন দুধপাখিসহ বিভিন্ন পাখি এ-গাছ থেকে ও-গাছে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য—সেই মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে তোলে। ছোট ছোট টিলার মধ্যে দিয়ে উঁচু-নিচু রাস্তা। ছায়াঘেরা প্রকৃতির সঙ্গে সড়কও যেন মিশে গেছে। সারি সারি গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা লটকন। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালা পর্যন্ত ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জরিতে থোকায় থোকায় লটকন। প্রতিটি পুষ্পমঞ্জরিতে ৫ থেকে ৫০টি ফল। দেখে মনে হয় যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটেছে। গাছগুলোর চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ঝরে পড়া পাকা লটকন।
আমাদের কাছে লটকন নামে পরিচিত ফলটির অঞ্চলভেদে নানা নাম। সিলেটের লোকে বলে ডুবি, চট্টগ্রামের মানুষ চেনে হাড়পাড়া বলে। আর ময়মনসিংহের লোকেরা বলে কানাইজু। নরসংদীবাসী ডাকে বুগি নামে। লটকা, লটকাও, কিছুয়ান নামও আছে।
লটকনের পুষ্টিমান প্রচুর। এতে অনেক পরিমাণ ভিটামিন ‘বি-টু’ ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এ ছাড়া ফলটি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। আমাদের শরীরে দৈনিক যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’র প্রয়োজন হয় মাত্র চারটি লটকন সে চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট।
স্থানীয় লটকন চাষিরা জানান, সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে লটকন গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। লটকনের গাছ লাল মাটিতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। প্রতিবছর মাঘ-ফাল্গুনে লটকন গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে এ ফল পরিপক্বতা পায়। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। স্ত্রী গাছ লাগিয়ে দিলেই হয়। সময়ে সময়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গোঁড়ার চারদিকে জৈব সার দিলে ফলন ভালো হবে। পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্র মতে, লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে চাষিদের। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়াতে কৃষকরা লটকনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন । চলতি মৌসুমে ১৬১০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিকটন ফলন হিসেবে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার মেট্রিকটন যার পাইকারি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ১৬৮ কোটি টাকা।
এদিকে মৌসুমি এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে এ জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল ও শিবপুর উপজেলা সদরে বসছে লটকনের বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লটকন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে লটকন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন।

এমএসএম / এমএসএম