দখল দূষণ অবহেলায় হরিরামপুরের ইছামতী নদী ও খাল

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় প্রবাহিত ইছামতী নদী ও খালে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ রোধ করায় পানি প্রবাহিত না হওয়ায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে একাধিক বাধের উপর দিয়ে গেছে সরকারি পাকা - আধাপাকা রাস্তা, বাধের উপর দেয়া রাস্তায় স্থানীয় কয়েকজন দোকানপাট,ঘড় তুলে বসবাসও করছেন। বর্ষা মৌসুমে পানির সাথে ভেসে আসা কচুরিপানা আটকে পরায় কচুরি পানা পচে নদীর পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। বসতবাড়ির ময়লা আবর্জনা,মলত্যাগের ময়লা ফেলার কারণে দুষিত হচ্ছে জমে থাকা পানি।
এ কারণে এ অঞ্চলের নদী ও খাল তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার পানি ব্যবহার করতে পারছে না বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। নাব্যতা সংকটে নদীর পানি শুকিয়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে এ অঞ্চলে চরম আকারে পানির সংকটও দেখা দেয়। কোনো কোনো এলাকায় নদীর পানি কিছুটা দেখা গেলেও কচুরিপানা পচে তা ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পরেছে। এতে করে রান্নার কাজসহ গরু ছাগলও গোসল করাতে পারছে না এলাকাবাসী। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নাব্যতা সংকটে মিঠা পানির মাছও মিলছে না এসব নদী ও খালে।
জানা যায়, জেলার দৌলতপুর থেকে ঘিওর, শিবালয়ের উথুলী, নালী, নয়াকান্দি হয়ে হরিরামপুর উপজেলার মাচাইন, বাল্লা, ঝিটকা হয়ে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাল টি বাহাদুরপুর এসে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। পদ্মার ভাঙনে ইছামতীর বেশ কিছু অংশ পদ্মায় রয়েছে। বর্তমানে আরেকটি শাখা বকচর, দড়িকান্দি, বাহিরচর বাজার, বাহিরচর পশ্চিম ও পূর্বপাড়া হয়ে পিয়াজচর, আন্ধারমানিক, যাত্রাপুর, পূর্ব খলিলপুর, কাণ্ঠাপাড়া, বহলাতলী, সট্টি হয়ে বালিরটেক কালিগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। কিন্তু এই শাখা নদীটির বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪টি স্থায়ী বাঁধ এবং খালে আরও ৬ টি স্থায়ী বাধ নির্মাণ করে নদীর গতিপথ রোধ করা হয়। ফলে নদীটির পানি প্রবাহ অচল হয়ে পরেছে।
সরেজমিনে দেখা যায় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর দরিকান্দি এলাকার পদ্মা নদী থেকে, বাহিরচর বাজার, বাহিরচর পূর্বপাড়া,বাহিরচর পশ্চিম পাড়া, আন্ধারমানিক, যাত্রাপুর, পুর্ব খলিলপুর, কাণ্ঠাপাড়া, সট্টি হয়ে সদর উপজেলার বালিরটেক কালিগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। এরমধ্যে বাহিরচর বাজার সংলগ্ন নদীর মাঝ দিয়ে নামে মাত্র কালভার্ট ব্রীজ হলেও ২০০০ সালের দিকে পদ্মা ভাঙণরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে নদীর গতিরোধ করা হয়।
বাহিরচর পূর্বপাড়া বেরিবাঁধ পর্যন্ত পানি সরাসরি আসতে পারে। বাহিরচর পূর্বপাড়া থেকে আন্ধারমানিক-পিয়াজচর সংযোগে নদীর ওপর দিয়ে বাঁধ দেয়ায় প্রায় ২ কি.মি. এলাকা জুড়ে কচুরি পানা আটকে আছে। এই বাঁধের ওপর বাড়ি নির্মাণ করে বেশ কয়েকটি পরিবার বসত করছে। এছাড়াও এ বাঁধের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এছারাও কোথাও কোথাও হয়েছে মৎস্য চাষ। আন্ধারমানিক হতে যাত্রাপুর, পুর্ব খলিল হয়ে কাণ্ঠাপাড়া বাঁধপর্যন্ত প্রায় ৪ কি.মি. এবং কান্ঠাপাড়া হতে সট্টি পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. এলাকা জুড়ে কচুরি পানা রয়েছে। প্রায় ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে পুরো শাখা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা সংকট রয়েছে। ফলে কোনো কোনো এলাকা শীত মৌসুমেই শুকিয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বাড়ির মালিকেরা অবৈধভাবে নদীর সীমানা ঘেঁষে বাড়ি নির্মাণ করায় নদীর প্রস্থও অনেক জায়গায় সরু হয়ে গেছে।
স্থলসহ নদীর মাঝে প্রায় ১০/১২ টি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে কাণ্ঠাপাড়া- পূর্বখলিলপুর সংযোগে বাঁধে স্লইসগেট করে দিলেও তা দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।আন্ধারমানিক-পিয়াজচর সংযোগ স্থলে বাঁধের ওপর বসবাসকারী হেমরাজপুর গ্রামের শেখ আহমেদ জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে আমার বাড়ি ঘর পদ্মায় বিলীন হলে এই বাঁধে আমাকে আশ্রয় দেয়া হয় বাঁধ দেখাশোনা ও পাহাড়া দেয়ার জন্য। তখন থেকেই আমি এখানে আছি। তবে এখন কচুরি পানা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরে। নদীতে পানি না থাকায় আমাদের কষ্ট হয়।
একই এলাকার শেখ জুয়েল বলেন, বাঁধের কারণ নদীর পানি চলাচল বন্ধ। পানির অভাবে আমরা গরু- ছাগল পালন করতে পারি না। রান্নাবান্নাসহ গোসলের পানির খুব অভাব। কচুরিপানা পচে মশার কারণে বসবাস করা কষ্টকর। এখন বাঁধ কেটে নদীটি সচল করা দরকার।
বাহিরচর পূর্বপাড়া গ্রামের ইজিবাইক চালক আজাহার বলেন, নদীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধের কারণে বর্ষা মৌসুমে যে কচুরি পানা আটকে পরে। গ্রীষ্ম মৌসুমে তা পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ফলে আমরা এই পানি কোনো কাজেই ব্যবহার করতে পারি না। এতে আমাদের পানির অভাব দেখা দেয়। কচুরি পানা পচে মশার উপদ্রুপ সৃষ্টি হয়। এখন নদীটা সচল করা খুবই জরুরি।
একই গ্রামের মুদি দোকানদার মীর মালেক বলেন, প্রায় ২২ বছর আগে নদী ভাঙন রোধে এই বেরি বাঁধ দেয়া হয়। তখন পুরোপুরি আটকানো হয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাঁধ দেয়ার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বর্ষা মৌসুমে আসা কচুরি পানা আটকে পরার কারণে পানি দূষিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে আমরা খুব পানির কষ্ট করি। নদীতে পানি নাই। যতটুকু থাকে তা ব্যবহার করার উপায় নেই।
নদী তীরবর্তী আন্ধারমানিক গ্রামের আশু চন্দ্র দাসের স্ত্রী মনিকা দাস জানান, নদীতে স্থায়ী বাঁধ থাকায় পানি চলাচল করতে পারে না। ফলে জমে থাকা কচুরি পানা পচে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেছে। পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা পানি ব্যবহার করতে পারছি না। গোসল ও রান্নার পানি নিয়া আমরা খুব কষ্টে আছি। ময়লা আবর্জনায় মশার উৎপত্তি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিলেই আমরা বেঁচে যাই।
পরিবেশ বান্ধব সংগঠন হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান জানান, ইছামতী পুণরায় সচল করা হোক এটা আমাদের সংগঠনের অন্যতম একটা দাবি। কারণ নদীর মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক বাঁধ দিয়ে নদীর পানি চলাচল বন্ধ। এতে করে কৃষিসহ মৎসের প্রজনন বৃদ্ধির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ পানির অভাবে হাহাকার করছে। জলাবদ্ধতায় কচুরিপানা পচে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পানি শূন্যতায় জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তাই আমরা আশা করছি, নদী বিশেষজ্ঞের পরামর্শে যতদ্রুত সম্ভব নদীটি সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি করছি।
বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, পদ্মার ভাঙণরোধে এই নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। তবে সরকারিভাবে নদীটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বেশ কয়েকটা পদক্ষেপ ওই সময় নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজ নদীটি মৃত প্রায়। জলাবদ্ধতায় পরিবেশ দূষণসহ নদী তীরবর্তী মানুষগুলো পানির জন্য খুব কষ্ট করছে। বর্তমানে নদীটি সচল করা একান্ত প্রয়োজন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে কি করা যায় দেখব। তবে এক্ষেত্রে যদি রেগুলেটরের প্রয়োজন হয়, তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়ে একটা কমিটি গঠন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবথা করা হবে।
দিকে এই নদী পুনঃ খননের জন্য দুইবার আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না হয়নি। নদীর মাঝ দিয়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধগুলো কেটে নদীটি সচল করলে পানির অভাব ঘুচবে। তা না করা হলে বর্তমান জনবান্ধব সরকারের নদী নিয়ে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হবে বলেও মতামত প্রকাশ করেন।
এমএসএম / এমএসএম

মিরসরাইয়ে দাড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় নিহত হেলপার

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কুষ্টিয়ায় মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত

রায়পুরে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা, উচ্ছেদে ধীরগতি

জমির জন্য বৃদ্ধ দম্পতিকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

শ্রীপুর পৌর শহরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

আত্রাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

জয়পুরহাটে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

মেহেরপুরে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হাটহাজারী সাব রেজিস্টার অফিসে মূল দলিলের পাতা গায়েব করে ভুয়া পাতা সংযুক্ত

আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানকে সংসদীয় ৫ আসনে উপহার দিতে মীর হেলাল উদ্দিনের বিকল্প নাই -গিয়াস উদ্দীন

১৪৫ কোটি টাকার ফেরিঘাটে নেই ফেরি, সরকারের নতুন চিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবল: স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সন্দ্বীপে কর্মশালা
