ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

পুুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ

দৌলতদিয়ায় মাদকদ্রব্য মজুত


সিরাজুল ইসলাম photo সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশিত: ২৯-৪-২০২৩ বিকাল ৫:৯

বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতয়িার মাদকদ্রব্য বিক্রেতারা। নিত্যপণ্যের মতো তারা মাদকদ্রব্য মজুত করতে শুরু করেছেন। ফেন্সিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ার ও মদ মজুত করছেন তারা। বেশি দামে বিক্রির আশায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বিভিন্ন বাড়িতে এসব মাদকদ্রব্য মজুত করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে পুলিশ প্রশাসন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা ‘চুপ’ রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ঈদে আনন্দ করতে মানিকগঞ্জ, পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা ও ঝিনাইদহ থেকে যুবক ও তরুণরা দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আসেন। যৌনকর্মীর সঙ্গ করার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকেন। তাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে বিয়ার ও মদ। এ কারণে কয়েক দিন ধরে মদ ও বিয়ার মজুত করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ছোট ছোট ড্রামে ভরে মদ আনা হচ্ছে যৌনপল্লীতে। এসব মদ নিয়ম ভেঙে গোয়ালন্দ বাজারের রতন সরকারের বাংলা মদের দোকান থেকে সরববাহ করা হয়। রিকশা ও ভ্যানে করে মদের ড্রামগুলো নামানো হয় দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায়। এরপর আনা হয় যৌনপল্লীতে। প্রতিদিন সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ড্রাম মদ আনা হয়। এখন আনা হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ ড্রাম।

জানা গেছে, ঈদের সময় মদের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ কারণে আগে থেকেই মদ মজুত করা হচ্ছে। কেননা, ঈদের সময় চাহিদা মতো মদ সরবরাহ পাওয়া যায় না। দৌলতদিয়া এলাকায় সেমাইয়ের মতোই ঈদের অন্যতম অনুসঙ্গ হলো মদ। প্রকাশ্যে মদের ড্রামগুলো আনা হলেও পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা চুপ করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারার বিনিময়ে নির্বিঘ্নে মদ বিক্রি করছেন দোকানিরা। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে অন্তত একশ মদের দোকান রয়েছে। এছাড়া প্রায় সব বাড়িতেই মদ বিক্রি করা হয়। সাধারণত বাড়িওয়ালিরা মদ বিক্রি করে থাকেন। যারা যৌনকর্মীদের খদ্দের, তারাই মদ সেবন করে থাকেন। এছাড়া অনেক যৌনকর্মীও ঘরে নিজ খদ্দেরের কাছে মদ বিক্রি করেন। মদের পরেই ঈদে সব চেয়ে বেশি চাহিদা থাকে বিয়ারের। বিয়ারও মজুত করা হচ্ছে পুরোদমে। একজন নারী নেত্রী হলেন বিয়ারের ডিলার। তার কাছ থেকে এগুলো বিভিন্ন দোকানি নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। ঈদে ফেন্সিডিলের চাহিদাও থাকে ব্যাপক। এ কারণে ফেন্সিডিলও মজুদ করা হচ্ছে। বোতলজাতের পাশাপাশি খোলা ফেন্সিডিলও পাওয়া যায় দৌলতদিয়ায়। বিভিন্ন ধরনের বোতলে ভরে এগুলো বিক্রি করা হয়। এছাড়া অন্যান্য মাদকদ্রব্য যেমন ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাও মজুত করার খবর পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লী লাগোয়া কয়েকশ মিটার আয়তনের একটি জায়গার নাম পুড়াভিটা। এখানে মূলত বৃদ্ধ যৌনকর্মী এবং তাদের ছেলে-মেয়ে ও স্বজনরা থাকেন। এখানকার প্রায় সবাই মাদকদ্রব্য বিক্রিতে জড়িত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা নিজ ঘরের সামনে মাদকদ্রব্য নিয়ে বসে থাকেন। খদ্দের যাওয়া মাত্রই তারা বলে, কী লাগবে? খদ্দের টাকা দিয়ে নিয়ে নেন তার প্রয়োজনীয় মাদকদ্রব্য। এখানে ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি হয়। হেরোইনের ডিলার হলেন- নাদিরা, শিমুল, সাথী, রোজি, বেবি, লাইলী, খোদে, আনু, নুরজাহান, শাপলা, শাহানা, কোহিনূর, নূরী, শেফালী, মোমেনা, সালমা, সেলিনা, পিংকি, ময়না ও হামজা। তাদের মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন অন্তত শতাধিক নারী। এছাড়া যৌনপল্লীতে রুমা নাকে এক নারী গাঁজা বিক্রি করেন। মাদকদ্রব্যের আরেক ডিলার হলেন দৌলতদিয়ার মোতালেব। তার মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন আফজাল ও বেবি। তারা যৌনপল্লীতে মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। যৌনপল্লীর শিল্পী ও ফরিদার বাড়িতে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেন্সিডিল বিক্রি করেন মিতা। যৌনপল্লীর প্রায় সব বাড়িতে বিক্রি হয় মদ। বিয়ার বিক্রি হয় আইয়ুব মেম্বারের বাড়িতে। বিয়ারের ডিলার হিসেবে একজন নারী নেত্রীর নাম উঠে এসেছে। এছাড়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায়ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য হকারি করে বিক্রি করা হয়। গোয়ালন্দ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে শ্যামচাঁদ নামে একজন এবং নিজামিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আলম ও রাজা মিয়া নামে দুইজন মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ফেন্সিডিল বিক্রি করেন সম্রাট এবং গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করেন রানা নামের একজন। ওই এলাকার পাশে নতুনপাড়ায় থাকেন ইয়াবা সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনিই মূলত সেখানে ইয়াবা বিক্রি শুরু করেন। মাদক মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার স্ত্রীও মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদকদ্রব্য বিক্রিতে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এরই মধ্যে মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে ফরিদুজ্জামান ওরফে শেখ ফরিদ নামে এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান চললেও তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, অভিযানে সব সময় মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতা গ্রেফতার হয়। তারা জামিনে এসে ফের মাদক সেবন ও বিক্রি করেন। ডিলার বা মূলহোতারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মাদকসেবী কমছে না। বন্ধ হচ্ছে না ব্যবসা। কারণ একজন খুচরা বিক্রেতা গ্রেফতার হলে ডিলাররা আরেকজনকে খুচরা বিক্রেতা তৈরি করছেন। মাদক ব্যবসায় স্থানীয়দের পাশাপাশি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, পাবনা ও মানিকগঞ্জ থেকে এসে অস্থায়ী আবাসগড়া লোকজন জড়িত। কিছুদিন আগে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল মাদকদ্রব্য বিক্রি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য বিক্রি বন্ধে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালায়। দু’য়েকজনকে গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে এসে ফের মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। তার পরিষদের একজন সদস্যের স্ত্রী এবং একজন সাবেক সদস্য মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি সরাসরি আসুন। তারপর কথা বলি। গোয়ালন্দে মাদকদ্রব্য বিক্রি নিয়ে  সম্প্রতি কথা হয় গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, যারা মাদকদ্রব্য বিক্রি করে, তাদের ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের তালিকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। আপনার দলের লোকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে- এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, আমার দলের লোক শুধু নয়, আমার চারপাশের লোক মাদকদ্রব্য বিক্রি করলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। সব মাদকদ্রব্য বিক্রেতাকে গ্রেফতার করার কথা বলেছি ওসিকে।

ঈদ উপলক্ষ্যে দৌলতদিয়ায় মাদকদ্রব্য মজুত করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে দেড়শ থেকে ২০০ পারমিটধারী বাংলা মদ সেবনকারী রয়েছেন। তারা মজুত করতে পারেন। এছাড়া মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হয়। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ীর পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, দৌলতদিয়ায় মাদকদ্রব্য মজুত করার খবর তার কাছে নেই। তবে তিনি খোঁজ-খবর নেবেন। প্রয়োজনে অভিযান জোরদার করবেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দৌলতদিয়ায় মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। এ কারণে মাদকসেবীও কমেছে। ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে। ফলে মাদকসেবীর সংখ্যা অনেক কমেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ। মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা তানভির তুহিনের বিরুদ্ধে। তিনি ফোন কল গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে তার প্রতিষ্ঠানের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দিকে ইঙ্গিত করে পরিদর্শক মনিরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার হাতে ক্যান্সার রয়েছে। আশাকরি দ্রুত এ ক্যান্সার সেরে যাবে। তারপরই মাদকদ্রক্য বিক্রেতাদের মূলোৎপাটন করা হবে।

এমএসএম / এমএসএম

সাজিদা ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা

ত্রিশালে মসজিদে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত