ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ফসলি প্রাণমাটি লুট


এম মাহফুজ আলম, পাবনা photo এম মাহফুজ আলম, পাবনা
প্রকাশিত: ৩-৫-২০২৩ দুপুর ৪:৪১

কৃষি জমি নষ্ট বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে কৃষি জমি হ্রাস পাবে, খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে, ২০১৯ সালে  প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণামাফিক কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন বাস্তবায়ন উপেক্ষিত, উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও উপকারী অনুজীব শেষ হয়ে যাচ্ছে

দেশের এমন কোনো জেলা নেই যে ফসলি জমির প্রাণমাটি লুটপাট হচ্ছে না। লুটপাট চলছেই। ফসলের মাঠে মাঠে খননযন্ত্রের বিকট আওয়াজ। ঠিকাদারদের হাত এখন কৃষিজমিতে। ফসলি জমি ‘জবাইয়ের’ এ রকম কত যন্ত্র এখন জমি বধে ব্যস্ত, তার হিসাব কারও কাছে নেই।

এতে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বর শক্তি। জৈব পদার্থ বা গুণ সমৃদ্ধ মাটির উপরের অংশেই সঞ্চিত থাকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও উপকারী অনুজীব যা পুড়িয়ে তৈরি করছে ইট।কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের অনুপস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের আইন প্রয়োগকারীরা যেন অনেকটাই নিরুপায়।

৩০ থেকে ৪০ লাখ ইট তৈরি করতে প্রতিটি ভাটায় প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ সিএফটি মাটি প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে পাবনা জেলার ১৭০টি ইটভাটায় প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির উপরের উর্বর মাটি নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে কৃষি জমি ও উঁচু জমি পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে।কৃষিবিজ্ঞান বলছে,‘যেকোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। এটাই টপ সয়েল বা প্রাণমাটি; এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর সময়  লেগে যায়। মাটির এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি বা বাঁচার ও বিকাশের উপাদান গ্রহণ করে টপ সয়েল থেকে। এই অংশ একবার কেটে নিলে জমিতে মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। জমি পঙ্গু হয়ে যায়। এমন একটা মূল্যবান মাটির স্তর আমরা শেষ করে দিচ্ছি।’ 

পাবনা জেলা ইটভাটা সমিতির উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি মৌসুমে একটি ইটভাটায় কম পক্ষে চার থেকে বার ইট পোড়ানো যায়। একবারে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি হয়। এজন্য আড়াই থেকে পাঁচ লাখ সিএফটি মাটি প্রয়োজন হয়। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, ‘টপ সয়েল কেটে নেয়া জমিতে ১৫-২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। কৃষি জমি নষ্ট বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে কৃষি জমি হ্রাস পাবে এবং খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। ’ তারা উদ্বেগের সাথে আরো বলেন,‘ইটভাটা মালিকরা অর্থের লোভ দেখিয়ে কৃষি জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সাময়িকভাবে কৃষকরা লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ভবিষ্যতে মাটির যে প্রাণ জৈব সার টপ সয়েলের সাথে চলে যাচ্ছে।  এর ফলে জমির সমস্ত পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির মাটি এতটাই গভীর করেই কাটা হয় যে পাশের জমিগুলো ভেঙে যায়। নিরুপায় হয়ে পাশের জমির মালিকও টপ সয়েল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হওয়ায় প্রকাশ্যেই পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান,“টপ সয়েল কেটে নেয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বর শক্তি। জৈব পদার্থ বা গুণ সমৃদ্ধ মাটির উপরের অংশেই সঞ্চিত থাকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও উপকারী অনুজীব যা পুড়িয়ে তৈরি করছে ইট। জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর সময়  লেগে যায়। সেই টপ সয়েলের উর্ববরতা আস্তে আস্তে হ্রাস পাচ্ছে। ওই জমিতে আর কোনো ফসল ফলবে না। তখন কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দিবে। খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিবে। যা রিকভার হতে ১৫-২০ বছর লেগে যাবে।

তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারীর উপর গুরুত্বারোপ করেন।প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটির প্রথম বৈঠকে (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তদারকির লক্ষ্যে একটি পৃথক সংস্থা গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করেই বলেছিলেন (নভেম্বর ২০১৯) ‘কৃষিজমি নষ্ট করে যত্রতত্র শিল্পকারখানা করতে দেয়া হবে না। আমাদের কৃষিজমি বাঁচাতে হবে; ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে হবে।’ কিন্তুবেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন।

কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের অনুপস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের আইন প্রয়োগকারীরা অনেকটাই নিরুপায়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ এর আওতায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা ছাড়া করার কিছুই নেই। বর্ণিত আইনে বলা আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকেরা কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোনো ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘন করে ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। অথচ কৃষিজমি সুরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা বারবার বলা হলেও কার্যকারীতা নেই।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, ‘টপ সয়েল কেটে নেয়া কৃষি ও কৃষকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর দিক। উপরিভাগের মাটি বা টপ সয়েল একটি জমির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাটির ছয় ইঞ্চি গভীরতাতেই ফসলের সব ধরনের খাবার থাকে। যে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে সেসব জমির চাষাবাদ অন্য জমির মতো হবে না। ফসলি জমি থেকে কৃষকরা যাতে মাটি বিক্রি না করে এজন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দেই।’ ‘শুধু শাস্তি নয়; আমরা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করব। কৃষকরাও যাতে কৃষি জমির মাটি ইটভাটায় না  দেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।’ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ তে মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না, তিনি যোগ করেন।

যোগাযোগ করা হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু বলেন, আমরা কাউকে কৃষি জমি থেকে মাটি তোলার অনুমতি দিইনি।
পাবনা পরিবেশ অফিসের সহকারি পরিচালক মোঃ নাজমুল হোসাইন বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ফসলি জমির ক্ষতি করা নিয়ম অনুযায়ী বেআইনি। "স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম উপেক্ষা করে, প্রতি বছর একটি অংশ মাটি খননের কাজে নিয়োজিত হয়। আমরা যদি কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে," তিনি আশ্বাস দেন।

এমএসএম / এমএসএম

সাজিদা ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা

ত্রিশালে মসজিদে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত