উপকার করলে থাকে না পিঠের ছাল, বাস্তব প্রতিচ্ছবি অর্জুন গাছ
আবহমান বাংলার প্রকৃতি জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের ভেষজ ও ঔষধি গুণ সম্বৃদ্ধ গাছপালা। এমনই এক মূল্যবান ভেষজ গুণ সম্বৃদ্ধ গাছ হলো অর্জুন। প্রাকৃতিক ঔষধের রাজ্যে অর্জুন একটি মুকুটধারী বৃক্ষ। অব্যাহতভাবে গাছ কেটে প্রাকৃতিক বনজঙ্গল ধ্বংস, একই সাথে বিভিন্ন জাতের ভেষজ ও ঔষধি জাতের গাছ-গাছালি ধ্বংসের কারণে সারা বাংলাদেশের ন্যায় বারহাট্টার প্রকৃতি থেকেও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে অর্জুন গাছের মত উপকারী ঔষধি গাছ।
বাঙালি প্রবাদে- "উপকার করলে থাকে না পিঠের ছাল, অর্জুন গাছ তার বড় প্রমাণ।" প্রবাটি আমাদের সমাজের এক গভীর জীবন দর্শনের প্রতিফলন। প্রচলিত এই প্রবাদটি শুধু কথার কথা নয় বরং এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক সত্য এবং মানবিক শিক্ষার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। অর্জুন গাছের ছাল উপকারেই তার প্রমাণ- গাছটি উপকারী করে বলেই মানুষ এর ছাল ব্যবহার করে, যা গাছটিকে উপকারী করে তোলে। আগেকার দিনে গ্রামগঞ্জে ঔষধি ও ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন প্রচুর গাছ দেখা যেতো, কিন্তু এখন তেমন একটা দেখা যায় না। আমাদের প্রকৃতিতে জুড়ে এখনও অনেক গাছ অনাদর-অবহেলায় রয়েছে এদের মধ্যে অনেক গাছই ঔষধি গুণসম্পন্ন বৃক্ষ। আগেকার দিনে এসব ঔষধি গাছ এবং লতাগুল্ম দিয়ে হেকিম ও কবিরাজরা মানুষকে চিকিৎসা করতেন। অথচ বর্তমান আধুনিক যুগে মানুষের নিজের প্রয়োজনে দিন দিন এসব উপকারী গাছ কেটে ধ্বংস করছে।
সপ্তাহ জুড়ে সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সাত ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ছাড়া বেশিরভাগ গ্রামেই দেখা মিলেনি ভেষজ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন অর্জুন গাছের।
বিভিন্ন এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, একসময়ে আমাদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র অবলম্বন ছিল হেকিম-কবিরাজ আর চিকিৎসার প্রয়োজনে তারা বনজঙ্গল থেকে অর্জুন গাছের ছাল, পাতাসহ বিভিন্ন ওষধি গাছ সংগ্রহ করতেন। তখন গ্রাম কিংবা শহরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বন-জঙ্গলে পর্যাপ্ত সংখ্যক অর্জুন গাছের মত ভেষজ ও ঔষধি গাছের দেখা মিলতো। কিন্তু বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতায় মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে এসব উপকারী গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের লোকজনকে লাভজনক বিভিন্ন জাতের বিদেশি কাঠ ও ফলের গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে ভেষজ ও ঔষধি বৃক্ষ লাগানো ও সংরক্ষণের বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিম বনায়ন সৃষ্টি হচ্ছে ফলে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া বন, দেশিয় প্রজাতি ও ঔষধি জাতীয় গাছগাছড়া দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার নার্সারিসমূহের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ক্রেতাদের কাছে দেশীয় প্রজাতির গাছ এবং ভেষজ গাছগাছালির চাহিদা খুবই কম রয়েছে। তাই আমরা অর্জুনসহ বিভিন্ন ভেষজ ও ঔষধি গাছের চরা উৎপাদন কম করি।
উপজেলা সদরের যশমাধব এলাকার কবিরাজ কুতুব উদ্দিন ও আসমা ইউনিয়নের গুমুরিয়া এলাকার সোনাজান আক্তারের সাথে কথা বললে তারা জানান, আগে আমরা অর্জুন গাছের পাতা ও ছাল ব্যবহার করে মানুষের বিভিন্ন চিকিৎসা করতাম। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এখন আমাদের মত হেকিম-কবিরাজদের কাছে রোগী কম আসে। বেশিরভাগ রোগীরাই ডাক্তারের কাছে চলে যায়। গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ এখনও বিশ্বাস করে আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন।
অর্জুন গাছের উপকারীতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, অর্জুন গাছের ছাল বিভিন্ন রোগের কাজ করে থাকে। যেমন- ত্বক ও ঘায়ের চিকিৎসায়, মূত্রনালী সংক্রান্ত সমস্যায়, ক্ষয় কাশে, হাড় মচকে গেলে কিংবা চির ধরলে, বুক ধড়ফড় করা, অ্যাজমা, যৌন রোগের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অর্জুনের ছাল ব্যবহার করা হয়।
বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক বলেন, অর্জুন (Terminalia) গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ যার একটি বৃহৎ, পত্রঝরা গাছ যার যার বৈজ্ঞানিক নাম- Terminalia arjuna । বহু প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসাশাস্ত্রে এই গাছ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বিশেষত হৃদরোগ নিরাময়ে এর খ্যাতি সুপ্রাচীন। একটি মাঝারি থেকে বড় আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ, যা সাধারণত ২০–২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর ছাল ধূসর-সাদা, মসৃণ ও কিছুটা পলিশ করা কাগজের মতো দেখায়। পাতা ডিম্বাকৃতি, বিপরীতভাবে সাজানো এবং শাখায় শাখায় ঘন পাতা গাছকে ঘন ছায়া দেয়। এর ফুল ছোট, সাদা বা হালকা হলুদ, ফল ৫টি খাঁজবিশিষ্ট ও শক্ত খোলসযুক্ত। অর্জুন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের উপযুক্ত গাছ, তাই ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি জন্মায়। নদীর পাড়, পুকুরঘাট ও জলাভূমির আশেপাশে এই গাছ ভালো জন্মে।
তিনি আরও বলেন, ওষধি গুণ ছাড়াও অর্জুন গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ভূমি স্থিতিশীল রাখে। এটি বায়ু বিশুদ্ধ করণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও গ্রামের মানুষ অর্জুন গাছের ছাল সংগ্রহ করে আয় করে। গাছের কাঠ দিয়ে নৌকা, আসবাবপত্র, এবং নির্মাণ করে থাকে।
বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, "উপকারের বিনিময়ে অবহেলা"-প্রবাদটি বাস্তব হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় যে, অর্জুন গাছ থেকে উপকার নেওয়ার পরও মানুষ গাছটির যত্ন নিতে অনাগ্রহী। অতি মাত্রায় ছাল সংগ্রহের ফলে গাছটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত গাছটির মৃত্যু ডেকে আনে। এটি আমাদের সমাজের একটি প্রতীকী চিত্র, যেখানে প্রায়ই উপকার পেয়ে আমরা সেই উৎসের মূল্যায়ন করতে ভুলে যাই। গাছের ছাল সংগ্রহের পাশাপাশি পুনরায় রোপণ এবং সঠিক যত্ন নেওয়া দরকার, নাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।
বনায়ন কর্মসূচি সম্পর্কে কথা বললে তিনি বলেন, দেশে বৃক্ষ নিধন, কাঠ পাচার যেমন একটি বড় সমস্যা তেমনি জটিল সমস্যা ঘুরপাক খাচ্ছে বনায়নের জন্য গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে। বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিলেই কোন কাজ হবে না। কোথায় কী ধরণের গাছ লাগাতে হবে সে পরামর্শও দিতে হবে বনায়ন কর্মসূচি থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব আয়ুবের্দিক ও ইউনানী ঔষধ কারখানা রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত ব্যবসায় যারা জড়িত তারা ভারত থেকে ঔষধের কাঁচামাল, গাছগাছড়া ও বীজ আমদানি করে। যদি দেশীয় প্রজাতির ঔষধি গাছগাছড়া দিয়ে বনায়ন করা যায় তাহলে আমদানি নির্ভর না হয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুর্দ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এমএসএম / এমএসএম
জয়পুরহাটে এফএনবি এর পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ
উপকার করলে থাকে না পিঠের ছাল, বাস্তব প্রতিচ্ছবি অর্জুন গাছ
মহান বিজয় দিবসে আনোয়ারা প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধা নিবেদন
লাকসামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী’র উদ্যোগে বিজয় দিবসে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মনপুরায় চরে চরে চর ঘেরা জালের বিচরণ নেই মৎস্য অফিসের কার্যকর তদারকি
নালিতাবাড়ীতে মাদ্রাসায় নেই বিজ্ঞান শাখা, তবুও কম্পিউটার ল্যাব এসিস্ট্যান্ড ও সহকারী নিয়োগ
বগুড়া-৫ শেরপুর-ধুনটে কে হচ্ছেন আট দলের প্রার্থী
মাগুরায় রাজাকার ঘৃণা স্তম্ভে জুতা–স্যান্ডেল ও থুতু নিক্ষেপ,
মহান বিজয় দিবসে ইছানগর যুব সংঘের ফ্রি খতনা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
বিরামপুরে কারিতাসের এ্যাডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত
মান্দায় বাসের চাপায় কারারক্ষী নিহত
রূপালী ব্যাংক আলফাডাঙ্গা শাখায় রাত ৮টায় উড়তে দেখা গেছে জাতীয় পতাকা