নামে আছে, কামে নাই সন্দ্বীপ ১০ শয্যা হাসপাতাল
সন্দ্বীপ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সন্দ্বীপের সবচেয়ে পুরাতন সরকারী ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। কিন্তু এটি নামে ১০ শয্যা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে কোন শয্যাই নেই। বারবার নদী ভাঙ্গন ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে নানা অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট ও বেড বিহীন নামমাত্র আউটডোর সেবা দিয়ে চলছে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে। নতুন জায়গায় স্থানান্তরের পর স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত চরম উদাসীন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলুল করিম জনগন ও স্থানীয় মেয়র মোক্তাদের মাওলা সেলিমের অনুরোধে একবার এটিকে কোয়ারেন্টাইন বেড চালু করবেন, আবার এটিকে উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রূপদানের ঘোষনা দিয়ে আসলেও বাস্তবে নেননি কোন পদক্ষেপ। বারবার মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় জনগনের অভিমত তিনি রোগীর স্বল্পতা দেখিয়ে এটিকে দাফন করে দিয়েছেন বেড সিস্টেম তুলে দিয়ে। যার ফলে হাসপাতালটির সেবা পাচ্ছেনা স্থানীয় জনগন। তাই প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে। তাও অন্য হসপিটালে যেতে ১০/১২ কিলোমিটার দূরে শুধু যাতায়াত খরচ দিতে হয় কমপক্ষে তিনশ টাকা। এখন এলাকার জনগন নামমাত্র আউটডোর সেবা পাচ্ছেন মাত্র ২ ঘন্টা। দুই যুগেও কোন পরিবর্তন হয়নি সেবার মানের। এভাবে বারবার জনগনকে ধোকা দেওয়া হয়েছে এমন বক্তব্য সব্জী বিক্রেতা শামসুদ্দিনের। সরেজমিনে গিয়ে রোগীদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এটির আউটডোর সেবাও নামেমাত্র। ২ জন ডাক্তার সপ্তাহে তিনদিন করে পালাক্রমে ১১টা থেকে ১ টা পর্যন্ত মাত্র ২ ঘন্টা রোগী দেখে চলে যায়, অনেক সময় অনুপস্থিত থাকেন। তারা হলেন ডাঃ হিমাদ্রি শংকর দেবনাথ ও ডাঃ মোঃ আশিফুর রহমান খান। তাও একজন আসেন চট্টগ্রাম থেকে, রোগী দেখেই চট্টগ্রামে পাড়ি জমান। অন্যদিকে বাকী কর্মচারী রয়েছে মাত্র ২জন।হাসপাতালের টয়লেট ও বাকি রুমগুলো এবং উঠা নামার সিঁড়ির নিচটা একেবারে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর। মনে হয় এটি পরিত্যক্ত ভুতুরে বাড়ি। তাই বলবো এটিকে অনেকটা ইচ্ছাকৃত পরিত্যক্ত হসপিটালে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। তার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলাই দায়ী। তাই এটি পুনঃনির্মান ও সক্রিয় করন এখন সময়ের দাবী। দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হউক। অন্য এক রোগি নুরজাহান আক্তার বলেন, এখানে এলে শুধু ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন মেলে। কাউকে কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু কমন ঔষধ দেওয়া হয়। দামী এন্টিবায়োটিক ও প্রায় ৩০ প্রকার ঔষধ থাকার খবর জানা থাকলেও ৫/৬ আইটেম এর বেশী ঔষধ থাকে বাকিগুলো কোথায় গায়েব হয় জানিনা। অনেকের অভিযোগ কিছু সরকারী দামী ঔষধ ও এন্টিবায়োটিক সন্দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়নের ফার্মেসীতে কিনতে পাওয়া যায়, যেগুলো বিক্রয়ের জন্য নয়। স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকদের নিকট সেগুলো বিক্রি করে বলে তা প্রচারে আসেনা ও প্রতিবাদ হয়না।
বিষয়গুলো নিয়ে নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মানস বিশ্বাস এর নিকট মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-আমি এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে কি পরিকল্পনা করবো? আমার ক্ষমতা কতটুকু? আপনি এটির উন্নয়নে বা পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কোন চিঠি লেখা বা সুপারিশ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে সরাসরি না বলেন। ডাক্তাররা ১০ টা -৫ টার পরিবর্তে মাত্র ২ ঘন্টা রোগী দেখার বিষয়ে তিনি বলেন আমার জানামতে তারা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে। তিনি আরো বলেন আপনার অভিযোগ থাকলে লিখিত দিন আমি ব্যবস্থা নেবো।
মাত্র ২ ঘন্টা রোগী দেখার বিষয়ে ডাক্তার হিমাদ্রী শংকর দেবনাথ বলেন যতক্ষণ লাইনে রোগী থাকে ততক্ষন দেখে চলে আসি। মানে ২ ঘন্টায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ সকাল থেকে রোগীরা বসে থাকে ডাক্তার আসতে দেরী হয় বলে অধৈর্য্য বা অনিশ্চিত ভেবে অনেকে চলে যায়। ঔষধ সংকট বিষয়ে হিমাদ্রি শংকর বলেন, ঔষধ আনতে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টাকা দিতে হয়, টাকা কাকে এবং কত দিতে হয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন রানা ও ডাঃ আশিফুর বিষয়গুলো দেখেন, তারা ভালো জানবেন। গাছুয়া হসপিটাল থেকে না এসে চট্টগ্রাম থেকে অফিসে যাতায়াত এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি তার মায়ের অসুস্থতার কারনে বারবার চট্টগ্রাম যেতে হয় এবং ট্রান্সফারের আবেদন করেছেন বলে স্বীকার করেন।
এমএসএম / এমএসএম