সন্দ্বীপে ট্রাক দূর্ঘটনায় চিরতরে পঙ্গু শিশু ইফাতঃ সহায়তার পরিবর্তে পাচ্ছে হুমকি ধামকি
গত মার্চ মাসের ৭ তারিখ দুপুরে বাড়ির সামনে খোলা মাঠে খেলতে গিয়েছিল শিশু ইফাত(২)। খেলার মাঠে মেরামতের জন্য অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ছিল ট্রাক। সেই ট্রাকের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় ইফাত। প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার পর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডান পা কেটে ফেলা হয়। চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায় অবুঝ শিশু ইফাত।এখনো বুঝতে পারেনা সে কি হারিয়েছে।মোঃ ইফাত পিতা মোঃ মনির, মাতা সাফিয়া বেগম, কালাপানিয়া ৬ নং ওয়ার্ড মোতালেব মার্কেট সংলগ্ন ঝুপরি ঘরে তার বসবাস। পিতাও পেশায় ট্রাক ড্রাইভার।
ইফাতের পরিবারের অভিযোগ ট্রাক মালিক বর্তমান ইউপি মেম্বার ও আগামী ১৭ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শওকত হোসেন।সে প্রথম দিন থেকে সহায়তার আশ্বাস দিলেও দূর্ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোন সহায়তা দেয়নি। সহায়তা চাইলে উল্টো হুমকী দিচ্ছেন শওকত।ইফাতের মা সাফিয়া বেগম বলেন শওকত টাকা না দিয়ে বলে তোদের কোন টাকা দেবোনা। প্রয়োজনে প্রশাসনকে ১০ লাখ টাকা দেবো।
ইফাতের পিতা মোঃ মনির বলেন, আমার বাড়ির সামনে নষ্ট ট্রাক ফেলে রেখেছিল সে। তাও বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গায় অরক্ষিত বিপজ্জনক অবস্থায়।সে ট্রাকের চাপায় আমার ছেলে পা হারায়। ছেলের চিকিৎসায় আমাদের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এ পর্যন্ত । প্রতিদিনই টাকা লাগছে। ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। ছেলের পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে চাকরিও হারিয়েছি। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছেনা।
২১ জুন ইফাতের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কেটে ফেলা ডান পায়ের নিচের অংশের ক্ষত এখনও শুকায়নি। বাম পায়ের ক্ষত অংশেও ব্যান্ডেজ পরানো। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশু ইফাত।সাথে সাথে পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে মায়ের আহাজারী।
ইফাতের পরিবার আরো জানায়, দূর্ঘটনার পর চিকিৎসা ব্যায় মেটানোর জন্য ট্রাক মালিক শওকত হোসেন, ট্রাক ড্রাইভার জাবেদ, ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক চালক- শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধিসহ মিটিং হয়েছিল। মিটিংয়ে চিকিৎসা খরচ দেবেন বলেছিলেন শওকত হোসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও দেয়নি। সাহায্য চাইলে এখন উল্টো হুমকী দিচ্ছে।
ইফাতের পিতা মোঃ মনির বলেন, আমার ছেলের মোট ৫ টা অপারেশন হয়েছে। মিটিংয়ে ২ টা অপারেশনের পর থেকে সব খরচ শওকত হোসেনের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১০ শতাংশের মধ্যে ৩ শতাংশ ড্রাইভার দেবে, বাকি টাকা দেবে মালিক।
ট্রাক ড্রাইভার জাবেদ বলেন, আমি ৩৬ হাজার টাকা মালিকের কাছে বেতন বাবদ পেতাম। সে টাকা চিকিৎসার জন্য দিয়ে দিয়েছি।সেখান থেকেও সে ছয় হাজার টাকা খেয়ে ফেলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালাপানিয়া ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শওকত হোসেন বলেন, দূর্ঘটনারর জন্য আমি দায়ী না। ড্রাইভার দায়ী। তারপরও চিকিৎসা ব্যয় সহ বিভিন্ন ভাবে আমি ৫৪ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি নির্বাচনের পর আবার বসবো ইফাতের পরিবারের সঙ্গে।বর্তমানে আমি চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে হঠাৎ করে এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রনোদিত।কিন্তু ইফাতের পিতা মোঃ মনির বলেন, আমি শুধু ড্রাইভারের ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন শিশু ইফাতের পিতা মোঃ মনির। সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাবো।
এমএসএম / এমএসএম