পাবনা-৫ঃ প্রার্থী নিয়ে চুলচেরা হিসেব নিকেশ চলছে সর্বস্তরে

পাবনা জেলায় মোট পাঁচটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে পাবনা-৫ আসন অর্থাৎ জেলা সদর আসনটি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাই এই আসনের নির্বাচনী হিসেব নিকেশ সবসময় একটু ভিন্ন হয়। দলীয়ভাবেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। এবার রাষ্ট্রপতি পুত্র সামনে আসায় আসনটি আরো গুরুত্ববহ হয়ে ওঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরপর তিনবার জয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা না থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্তরে চলছে আলাপচারিতা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কে হচ্ছেন আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এ নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে।
পাবনা সদর আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। রাজনীতিতে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তিন দলেরই রয়েছে ভালো ভোট ব্যাংক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বকুল ও বিএনপির অ্যাডভোকেট আবুল আহসানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহান।
১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম বকুল। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে খন্দকার ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুস সুবহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল। ২০০০ সালের নির্বাচনে বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে জোটবদ্ধ থেকে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সুবহানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন।
২০০৮ সালে মাওলানা আব্দুস সুবহানকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক প্রিন্স বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে তিনি আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। একইভাবে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে জোটগত জামায়াত প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের মধ্যে। এ আসন থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর মরহুম মাওলানা সুবহান নিজ দল ও জোট থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পাবনা জেলা কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে সদর আসনে আওয়ামী লীগ সক্রিয়। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত করেছেন তার পরিচিতরা। দলে প্রকাশ্য কোনো দলাদলি নেই। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন প্রকাশ্য দলাদলি বা কোন্দল না থাকায় এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের মনোনয়ন প্রাপ্তিকে একরকম নিশ্চিতই ধরে রেখেছেন তারা।
তবে প্রিন্সকে খালি মাঠে গোল দিতে নারাজ দলের কিছু তরুণ ও প্রবীণ নেতা। নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও রাষ্ট্রপতি পুত্র আরশাদ আদনান রনি। ইতোমধ্যে তিনি পাবনা সদর আসনের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। জেলার অনেক নেতাকর্মী যুক্ত হয়েছেন তার সাথে। সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশদিন যাবত কেবলমাত্র রনির পোষ্টার শোভা পাচ্ছে সদর আসন জুড়ে। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে এ নিয়ে কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। দলীয়ভাবে অনেকে মনে করেন সিংনাল না পেলে রনি কীভাবে দলীয় প্রাথী হিসেবে নিজেকে পেশ করছেন। এটি শুধূ আওয়ামীলীগের মধ্যে নয়;সর্ব মহলে আলোচনা হচ্ছে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম মানিক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক স্থপতি আবু রায়হান রুবেলসহ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
বাবার সম্মতি ও ইচ্ছাতেই নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাষ্ট্রপতি পুত্র আরশাদ আদনান রনি বলেন, ‘আমি পাবনা-৫ আসন থেকে নৌকার কান্ডারি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। আমি পাবনাবাসীকে জানাতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি মনোনয়ন চাইবো এবং তিনি নির্বাচন করার সুযোগ যদি দেন; তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করে পাবনার মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করবো।’
মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ‘টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে এ আসনের জনগণের সেবা করে আসছি। দলীয় প্রধানের কাছে এবারও নৌকা প্রতীক চাইবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আশাবাদী আমার আসনের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় আবারও নির্বাচিত হয়ে সেবা করার সুযোগ পাবো।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তারপরও দু-একজন শীর্ষ নেতার নাম নেতাকর্মীদের মুখে জানান দিচ্ছে।
তবে জেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার দাবি, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে শিমুল বিশ্বাস প্রার্থী হবেন এমনটি নিশ্চিত তারা। বর্তমানে তারা আন্দোলন নিয়ে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না বলে মত দিয়েছেন।
তবে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে সুকৌশলে নির্বাচনী মাঠ তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই আসনটি সারাদেশের মধ্যে জামায়াতের অন্যতম দূর্গ। ফলে জোটগত হোক আর এককভাবে হোক; আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আশা করেন তারা। আব্দুস সুবহানের মৃত্যুর পর এই আসনটির হাল ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। নিজের গ্রহণযোগ্যতা জানান দিতে ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক অর্থাৎ কেয়াটেকার সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচন না হলে তিনি তার প্রার্থীতা সংশয় প্রকাশ করেন এ প্রতিনিধির কাছে।
আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জানান দিচ্ছে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিও।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচনী মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম স্বাধীন, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ।
এমএসএম / এমএসএম

সাজিদা ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা
