ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন?


গবি প্রতিনিধি photo গবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫-১১-২০২৩ দুপুর ২:১০
বর্তমানে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে করোনা চলাকালীন সময় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানেও সকল পণ্য সামগ্ৰীর মূল্য আকাশছোঁয়া। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবীর মানুষ। এছাড়াও, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সকল শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। তাছাড়া, অর্থাভাবের কারণে অনেক শিক্ষার্থী পুষ্টিকর খাবারের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন তুলে ধরেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) এর শিক্ষার্থী আনসারুজ্জামান সিয়াম।
 
'অসহনশীল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি'
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো বাজার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যেনো হিমশিম খাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বাসাভাড়াসহ অন্যান্য কাজ শেষে যে টাকা থাকে তা দিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারে মাছ, মাংসের ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আসলে এগুলোর সমাধান কোথায়?
অসাধু ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেট, অনিয়ন্ত্রিত বাজারব্যাবস্থা,মনিটরিং এর অভাব এগুলোর কথা বলতে বলতে শব্দগুলোকে আমরা অকার্যকর করে ফেলেছি, যার ফলে সমাধান তো দূরের কথা আমাদের দূরাবস্থা বরং বেড়েই চলেছে।তাই কার্যকর ব্যাবস্থাগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। বৈশ্বিক প্রভাবের দ্বায়ভার অবশ্যই রয়েছে তবে সেটি আমাদের অব্যাবস্থাপনা এবং কার্যকর পদক্ষেপ এর অভাবকে দৃশ্যমান করেছে ভালোভাবে। কাঁচামাল সংকটের নিরসনে রাষ্ট্রীয় বিভাগগুলোর উদ্যেগ গ্রহণ, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নৈতিক উৎকর্ষতা সাধন করে সংকট নিরসনে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা লঘোব সম্ভব, এরই মধ্যে দিয়ে সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এদেশের কোটি মানুষের।
 
মোহা: সাইফুল্লাহ
৩য় বর্ষ,
কৃষি বিভাগ, 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
 
'পেটের ক্ষুধায় কলম ক্রয় করাই দুষ্কর'
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্ৰীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বর্তমানে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের মান নিম্নমুখী হয়ে গেছে। তাছাড়া, মেসের প্রতিনিয়ত খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো 'ডাল'। বর্তমানে রান্না করা ডালে ডাল খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর, এ যেনো পানির নিচে রাখা হলুদের সমাহার। আলু পেয়াজের সমন্বয়ে মজাদার রেসিপি যুক্ত খাবার তো এখন ভারি দুষ্কর। অতীতে বাজারের ব্যাগ পরিপূর্ণ হতে লাগতো ২০০ টাকা, বর্তমানে সেই ব্যাগ পরিপূর্ণ হতে লাগে ৬০০ টাকা। পেটে ভাত যখন নেই, পড়াশুনা তখন বিলাসিতা। বিশ্ববিদ্যালয় যখন যেতে হয় রিকশাওয়ালা মামার কাছে একপ্রকার হাড়ির হিসেব করে ফেলতে হয়। "মামা আমাদের ও তো খাওন লাগে " তাদের একটাই হিসাব। কথা তো ভুল না। কেউ একটা খাবার বাৎসরিক হিসেবে খাই আবার কেউ সেটাই দৈনিক ভাবে খাওয়ার চিন্তা করে। আমরা শিক্ষার্থী, আমরা তর্ক করি কীভাবে! ভদ্রতা শিখেও যেনো বোকামি। মাঝে মধ্যে ভাবি যে, মাকে চিঠি লিখার যুগ থাকলেও তো বিপদে পড়তাম। পেটে ক্ষুধা থাকলে কলম কিনতাম কীভাবে?
 
সাদিয়া খানম 
১ম বর্ষ,
ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন,
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
 
'মৌলিক চাহিদা পূরণে ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে '
খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা এবং চিকিৎসা এই পাঁচটি মানুষের মৌলিক চাহিদা। বর্তমানে দেশের লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি দেশের মানুষের এই মৌলিক চাহিদা পূরণকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
 
দেশের প্রায় ৯৮ ভাগ মানুষ নিয়মিত ওষুধ সেবন করে থাকে। কিন্তু প্যারাসিটামল, সেই সাথে রক্তাচাপ, হৃদরোগ, ব্যাথানাশক ও পেটে গ্যাসের সমস্যার নিয়মিত ওষুধ গুলোর দাম ৫০% থেকে ১৩৪% বেড়েছে। অর্থাৎ কিছু ওষুধের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধগতি প্রভাব ফেলেছে মানুষের মৌলিক চাহিদা উপরেও। মার্কেট গুলোতে শার্ট,প্যান্ট সহ অন্যান্য প্রায় সকল পোষাকের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে আয় সেই হারে বাড়েনি। যার ফলে অনেকে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে,  অনেকে পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মাথায় ঝুলিয়ে নিচ্ছেন ঋণের বোঝা।
 
মো: মাহিদুজ্জামান সিয়াম
১ম বর্ষ,
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ,
গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
 
 
'মনিটরিং এর মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন'
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যেনো এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য তা দিন দিন বোঝাস্বরুপ হয়ে যাচ্ছে। এক দিকে যেমন শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে,  অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতি যেনো দিচ্ছে বাড়তি বিড়ম্বনা।  
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের খাবার খরচ তুলনামূলক কম হলেও খাবারের মান নিম্নমুখী হচ্ছে।  আবার, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাজার গতির সাথে তাল মিলিয়ে নূন্যতম জীবনধারণ মান বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি,  সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উচিত,  বাজার মনিটরিংয়ের ব্যাপারে আরো কঠোর অবস্থানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা।
তাছাড়া উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সর্বোপরি, দেশ ও জনগণের কল্যান কামণার্থে প্রত্যেক নাগরিক, ব্যবসায়ী সমাজ, সরকারের সঠিক ও দ্বায়িত্বশীল আচরণই পারে এই কঠিন সময়কে শিথিল করতে।
 
মরিয়ম আক্তার যুথী 
৪র্থ বর্ষ,
অর্থনীতি বিভাগ, 
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এমএসএম / এমএসএম