উপকূলের মানুষের ভাবনায় ভোট
আবছা কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকাল। কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি যখন চলছিল, সামনে কিছু দেখা যায় না। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে রোপা আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ধূসর মাঠ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঝুলানো বিভিন্ন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। চায়ের দোকানে ‘নির্বাচনী মানুষের’ আড্ডা। পাস ফেল, কে কতো ভোট পাবে নিয়ে তর্কাতর্কি। চলছে নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা । সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে বেদকাশি ইউনিয়নের কাছেরবাড়ী এবং বড়বাড়ী গ্রামে পৌঁছালে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। উপজেলার সমস্ত গাঁয়ে এখন যেন উৎসবের আমেজ।
সোমবার সকালে যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। আবছা কুয়াশার চাদর ভেদ করে এদিন সূর্যের তেমন দেখা পাওয়া যায়নি কয়রায় । আকাশে মেঘও ছিল এদিন। উত্তরের হিমেল হাওয়া সত্ত্বেও গ্রামে মানুষ চা’পানের জন্য ছুটছেন মোড়ের দোকানগুলোতে। শুধু চা পান নয়, তাদের আরও উদ্দেশ্য আছে, তা হলো নির্বাচনের খবর। বেলা যত বাড়ে, চায়ের দোকানে লোকজনের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। তাদের সাথে সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা শুরু করতেই যাঁর যাঁর মতো মন্তব্য করতে থাকেন। অনেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে শোনেন। কাছের বাড়ী বাজারে এক মিষ্টির দোকানে কথা হয় আব্দুল্লাহ এর সঙ্গে। আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের আমেজ আরও বেশি হতো। কিন্তু মাইকিং শুরু হবে আরও কয়েকদিন পর থেকে। তাই বোঝা যাচ্ছে না। মাইক চলা শুরু হলে তার শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। কাট কাটা মোড়ের পৌঁছানোর দেখা গেল দোকানগুলো জমজমাট। চায়ের দোকানের কেতলীতে পানি গরম হচ্ছে না। আর আগেই ‘ভোটের সমর্থক’দের নিয়ে গ্রাম পর্যায়ের নেতারা হাজির হচ্ছেন চা পানের জন্য। এই মোড়ের বৈশিষ্ট্য পাশে সুন্দরবন হওয়ায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে জমজমাট। এই মোড়ে কথা হয় মুকুল এক সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবারের ভোটটা যেন কেমন হচ্ছে। নৌকা না পেয়ে আওয়ামী লীগের অনেকে প্রার্থী হবে তাই মনোনয়ন কিনেছেন। নিজেদের মধ্যে ভোটের সময় মারামারি হতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। একই গ্রামের ওহাব মোড়ল বলেন, বিএনপি ভোটে আসছে না। তাই আওয়ামী লীগের অনেকে প্রার্থী হতে চাচ্ছে। এতে অবশ্য ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বেশি হবে। এতে অবশ্য ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বেশি হবে। সকল প্রার্থী তাদের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চাইবে। তাই ভোটের উৎসবে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেবেন।
কাটকাটা মোড় পার হয়েই কিছু দুর পর দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়েনের ফুলতলা বাজার । ছোট বাজার হলেও মানুষ গমগম করছে দেখা গেলো । চায়ের দোকানেও ভিড়। চায়ের দোকানি মোশারফ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় চা একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। সবাই এখন সকাল বিকাল বাজারে আসে। স্থানীয় নেতারাও আসেন মাঝে মাঝে। সুন্দরবন সংলগ্ন মঠবাড়ি গ্রামের বনজীবী আবু মুসা ভোটের প্রসঙ্গে বলেন, ভোট গরীব মানুষ আমরা ভোটের রাজনীতি বুঝিনা আমরা বুঝি পেটনিতী। আমাগো চিন্তা চেতনায় শুধু দু বেলা দু মুঠু কিভাবে খাবো। জীবনে বহুবার ভোট দিয়ে বুঝেছি গরীব মাইনষের জন্য ভোট না। ভোট নেতাগোতাগের জন্যি। কেউরে ভোট দিলিও আমাগের বাদা-বনের (সুন্দরবনের) কাজই করা লাগবে। আমরা ভোট দিলিও কি আর না দিলিও বা কি। যার ভালো কথা শুনবো তারেই ভোট দিবো। ভ্যান চালক বৃদ্ধ আমজেদ গাজী বলেন । তার সাথে কথা হলে তিনি বললেন, রাজার ভোট আইছে শুনছি । এও শুনতাছি বিএনপি এইবার নির্বাচনে নেই, আইলে ভালো হতো। নিজের ভোট যাকে খুশি তাকে দেবো। ভোটটা দেয়ার আশায় আছি। এমনে কোনো দল করি না।'মনের মধ্যে মার্কা একখান আছে। তয় ভোটের সময় যে দল জেতার মতো থাকে, তারে সাপোর্ট করবো।
দুপুরের দিকে দেখা গেল প্রায় ১০/১২টি মোটরসাইকেল এবং দুটি জীপ গাড়ি নিয়ে এক নেতা ছুটছেন কয়রা সদরের দিকে। তারা এসেছিলেন এই দিকে নির্বাচনী কাজে। জানা গেল, তিনি বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মির্জা আজম ও তার সমর্থক। ওই প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন তার মনোনয়ন ইতিমধ্যে বৈধ ঘোষনা হয়েছে , তাই তিনি এলাকায় এসেছেন ভোটার ও তার অনুসারীদের সাথে মতবিনিময় করতে। এর ২ দিন আগে বিএমএম মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোর্শেদ এবং এর আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান মোড়ল কয়রা উপজেলায় গাড়ি বহর নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। আচারণ বিধিও ভঙ্গ করেছেন তারা। গতকাল রবিবার বিএমএম মনোনীত প্রার্থী নির্বাচন আচারণ বিধি লঙ্ঘনের কারণে শোকেজ ও খেয়েছেন। বিএনপি না এলেও এভাবে গাঁয়ে গাঁয়ে জমে উঠেছে নির্বাচনের দামামা।
কয়রা আমাদী বাজার এলাকায় গেলে যেয়ে দেখা যায় একটি চায়ের দোকানের সামনে কিছু মানুষের জটলা। কেউ চা পান করছেন, কেউ চায়ের জন্য অপেক্ষায়। ফাঁকে ফাঁকে চলছে নির্বাচন নিয়ে আলাপ। দোকানে চা খাচ্ছিলেন একজন। নাম মিজানুর রহমান । পেশায় ট্রলি চালক । ভোটের কথা তুললে বললেন, 'আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু'দলের লোক ভোটে না থাকলে খেলা কি জমে? পাশে অন্য একজন কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলেন মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামীলীগের অনেক বাঘা বাঘা প্রার্থী ছিলেন কিন্তু যার কোন নাম শোনা যাচ্ছিল না আওয়ামী লীগ থেকে যারে মনোনয়ন দিছে তারেতো অধিকাংশ মানুষ চেনেই না। শুনেছি আগে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পাইকগাছা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে শুনেছি লোকডা ভালো।
তাঁর কথা শেষ না হতেই পাশে দাঁড়ানো ভ্যানচালক নুর মোহাম্মদ বলে উঠলেন, এই কারণে এইবার আওয়ামী লীগের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছে । তবে যাইহোক নির্বাচনের দিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে মারামারি না হলেই হলো। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। আজ বুধবার ও আগের দিন মঙ্গলবার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫-৩০ জন মানুষের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়। অনেকেই নির্বাচনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। অনেকে বিএনপি না থাকায় একতরফা ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ । আবার অনেকের মধ্যে ভালো ভোট হবে, এই আশাবাদও আছে। তবে সবার প্রত্যাশা একটাই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না হয়। যার ভোট তিনি নিজেই দিতে পারেন। ফল যা-ই হোক সবাই যেন মেনে নেন। শেষমেশ শান্তি শৃঙ্খলার পক্ষেই মানুষের অবস্থান। নির্বাচন নিয়ে উপকূলের মানুষের এমন সব মন্তব্যের বিষয়ে কয়রা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদক বি এম রকিব হাসান বলেন, এসব ভাবনা উপকূলের শ্রমজীবী কিছু মানুষের হলেও সামগ্রিক বাস্তবতাটাও জনগনের কাছে খুব পরিস্কার। কিন্তু তারপরও মানুষ দূর দুরান্ত থেকে ছুটে যাবে ভোট দিতে। জয়ী করবেন পছন্দের প্রার্থীকে। তাদের প্রত্যাশা ভোটের পর রাজনীতিকরা যেনো কাজ করেন মানুষের কল্যানে।
এমএসএম / এমএসএম
শালিখায় খুচরা সার বিক্রিতাদের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান
মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত
দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা
মোহনগঞ্জে মাদকের আস্তানা উৎখাতে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ
চিতলমারীতে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সরকারি প্রণোদনায় বোরো বীজ বিতরণ
নব-যোগদানকৃত জেলা প্রশাসকের সাথে রায়গঞ্জে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
কুড়িগ্রামে জামায়াতের আমির বদল, নতুন আমির আজিজুর রহমান সরকার স্বপন
স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতায় অটল মাধবপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি
সিংড়ায় ট্রাফিক সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে র্যালি
নড়াইলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত-১,আহত ৪
সীতাকুণ্ডে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে গ্রামবাসীর ধাওয়া খেলেন জামায়াত নেতারা
সাতকানিয়া আংশিক ও চন্দনাইশ: মাথা ব্যাথার কারণ কি এবার সাবেক চেয়ারম্যান জসিম?