ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

কুয়াশার চাদরে ঘেরা ৩২ একর


গবি প্রতিনিধি photo গবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪-১২-২০২৩ দুপুর ১২:৫৬

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনো হেমন্ত পেরোয়নি। তবুও, দূর্বাঘাস কিংবা গাছের কচি পাতা হতে মুক্ত দানার মতো টুপটাপ শব্দে গড়িয়ে পড়ছে শিশির। রুক্ষ-শুষ্ক শীতের আগমনের পূর্বেই প্রকৃতিকে ভিজিয়ে তুলতে  কুয়াশার এমন প্রস্তুতি সত্যিই অসাধারণ।

ঢাকার অদূরে যান্ত্রিকতামুক্ত ও শহর-গ্রামের সম্মিলিত ছায়া সুনিবিড়, সবুজবিথী ৩২ একরের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) যেন সেই অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী। বংশী নদীর কোল ঘেষা ক্যাম্পাসকে কুয়াশা যেন তার সমস্ত রঙের রঙিন চাদরে ঢেকে দেয়।

এ সয়মটাতে ক্যাম্পাসের ঘন সবুজে ঘেরা প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন হয়ে উঠে আর শীতল হাওয়ায় মন ভাসে কল্পনার পদ্মফুলে। মাঠের চতুর্দিকে অবস্থান করা টিনের ছাউনিগুলো যেনো শুভ্র কুয়াশার মায়ায় হারিয়ে যায় নিমিষেই। খোলা মাঠের উপরে সবুজে আচ্ছাদিত ঘাসগুলো শিশির বিন্দুতে থাকে ভেজা আর তাতে পা ছুঁতেই যেনো জানান দেয় শীতের মধুর অনুভূতি। পৌষের শীতল শিহরণের আগেই শিরশিরিয়ে উঠে পুরো শরীর।

একাডেমিক ভবনের  সামনে দাড়িয়ে থাকা ১১টি পাম সৈন্যের পাতা হতে অনবরত ঝরে যেন শিশিরের বিন্দু গুলি। প্যারিস রোডের বাদাম তলায় সূর্যরশ্মি তৈরী করে রংধনু। বকুল ফুল গাছটার কচি পাতায় লুকিয়ে থাকা পাখিরাও আগমন জানায় 'শুভেচ্ছা কুয়াশার রাজ্যে'। পাখির কণ্ঠে গুণ গুণ সুরে গান, পাতায় পাতায় জমে যাওয়া কুয়াশার টুপটাপ সুরের শব্দ যেনো প্রকৃতির সবথেকে নিষ্পাপ মুহূর্ত। কুয়াশার আভাস ছাড়িয়ে ভোরের রক্তিম সূর্য যখন পূর্ব আকাশে উঁকি দেয়, ঠিক তখনই ঘাসের উপরে জমে থাকা শিশিরগুলো হীরের মতো চকচক করে উঠে। আর তাতে উঁচু উঁচু গগনচুম্বী গাছের ডালপালা ভেদ করা সূর্যকিরণের ঊঁকিঝুঁকি তৈরী করে স্বপ্নীল দুনিয়া।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুটে উঠেছে পাঁচ থেকে সাতটি শুভ্র বৃতির মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত রূপ নেওয়া শিউলি। নির্মল মনের আকাশে কুয়াশার সৌন্দর্যের দ্বিগুণ মুগ্ধতা বাড়িয়ে দেয় এই রানী।  শিশিরভেজা শুভ্র রানীকে কুড়িয়ে তাইতো কেউবা গাঁথে মালা, কেউবা তোলে সেলফি। মূল ফটক থেকে একাডেমিক ভবনের রাস্তার দু'পাশে লাল পাতা বাহারি গাছ , গাঁদা, পর্তুলিকা শিশিরে শিশিরে ছড়িয়ে দিচ্ছে মন মাতানো মিষ্টি সুগন্ধি। এছাড়াও আরো বাহারি রঙের ফুল যেমন- সবুজের মধ্যে সাদা নাগবল্লী, জবা, কাঁঠগোলাপ, রঙ্গন, টগর ইত্যাদি ভিন্ন সাজে রূপ  দিয়েছে প্রাণের এই ক্যাম্পাসটিকে। সকাল ৮টা বাজতেই ক্যাম্পাসে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসে আড্ডা, ক্যান্টিনে জমে গরম ধোঁয়ায় চা-কফির আসর।  সকলের প্রিয় সূর্যবানু খালার পিঠার দোকানে, শীতের অন্যতম অনুষঙ্গের স্বাদেও মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। খালার বানানো চিতই, মাংস পুলি, ভাপা কিংবা তেলের পিঠায় মুগ্ধ মন আনমনে গেয়ে উঠে কুয়াশা বন্দনা।

কোথা থেকে এলে তুমি শীতের রাণী
মুগ্ধতা জড়ানো ভেজা আস্তরণের জালে ছড়াও অন্ধকার
সৌন্দর্যে অতুলনীয় তোমার রুদ্ধদ্বার।
ধীরে ধীরে যখন মিশে যাও প্রকৃতির মাঝে
সূর্যি মামা এসে বলে আমিও এসেছি
তোমাদের মাঝে আমার আলোতে রাঙাতে।

লেখকঃ ইভা আক্তার
শিক্ষার্থী ফার্মেসি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

এমএসএম / এমএসএম