ঢাকা সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫

বিলুপ্ত প্রায় খেঁজুরের রস-গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি


এম,এম হায়দার আলী, তালা photo এম,এম হায়দার আলী, তালা
প্রকাশিত: ১৩-২-২০২৪ বিকাল ৫:১২

কয়েক বছর আগেও গ্রাম বাংলার পাড়া-মহল্লার মাঠ ঘাটে অসংখ্য খেঁজুর গাছ চোখে পড়ত। আর মানব জাতির কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি সেই গাছ থেকে প্রত্যেক বছর শীত মৌসুমের শুরুতেই। সুস্বাদু রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকতেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ গাছিরা। অথচ বর্তমানে দিন বদলের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সুমিষ্ট রসের উৎস খেজুর গাছ। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে রস-গুড় প্রেমিক সকল বয়সের মানুষের উপর। অন্যদিকে খেঁজুর গাছ কমে যাওয়ার ফলে বেড়েছে রস-গুড়ের দাম। অধিক মুনাফার লোভে  মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী সেই রস ও গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। সূত্রমতে, প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুম মানেই গ্রামীণ সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয় খেঁজুরের রস সংগ্রহের মাধ্যমে। এখন আর গ্রামগঞ্জে তেমনটা দেখা যায় না। আগের মত মিলছেনা খেঁজুরের রস। শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেঁজুর গাছ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে খেঁজুর গাছ তত কমছে, চাহিদা মত দেখা মিলছেনা রসের।  ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের মধ্যে কাঁধে রসের ভাঁড় বা ঠিলা নিয়ে গাছিদের হাঁকডাক শোনা যায় না আগের মতো। এমনকি রস বিক্রেতাদের বাড়ি গিয়েও রস পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছ। ফলে মানুষ ভুলতে বসেছে শীতের সকালে সোনালী রৌদ্রে বসে পিঠা পায়েস খাওয়ার আয়েস।  আর এই সময়ে লোভনীয় রসের পিঠা তৈরি করে মেয়ে জামাই'র বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে।পাঠানো বা আদান প্রদানের গ্রামীন জনপদের অতি পরিচিত সেই রীতি রেওয়াজ আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সরেজমিনে, সাতক্ষীরার তালা  উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়,  বিগত সময়ে যে সব স্থানে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেঁজুর গাছ ছিল সেটা এখন নেই বললেই চলে। গ্রামের কোন কোন সড়কের পাশে কিছু গাছ থাকলেও তাতে তেমন রস হয় না বলে জানান রস সংগ্রহকারী গাছিরা। যারই প্রেক্ষিতে বহু গাছিরা তাদের পেশা পরিবর্তনের ফলে আগের মতো আর রস সংগ্রহ করা হয় না। সময়ের সাথে সাথে একদিকে যেমন খেঁজুর গাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে,অন্যদিকে অভিজ্ঞদের অভাবে নতুন প্রজন্মের গাছী তৈরী হচ্ছে না। এক প্রকার মানুষ ভুলতে বসেছে খেঁজুর গাছের রসের স্বাদ। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ত গাছিরা। শুধু কি তাই ভোরের কুয়াশা ভেঁদ করে হাড় কাঁপানো শীতে গাছ থেকে রস পেড়ে বাড়িতে আনতে এতোটুকু ক্লান্তিবোধ হতো না তাদের।  একই সাথে পেশাদার  গাছিরা সোনালী আঁশের তৈরি মোটা কাছি-দড়ি ও বাঁশ বেতের তৈরি খুনি বা ঝুড়ি কোমরে বেঁধে ছুটে চলতেন গ্রামের মেঠো পথ ধরে। ঝুড়ির ভেতরে থাকত কয়েক রকমের গাছ কাটা দা, দা এ ধার দেয়ার জন্য বালিধরা এবং বালু রাখার চুঙ্গা, রসের ভাঁড়। গতকাল তথ্য সংগ্রহ কালে তালা উপজেলার যুগিপুকুরিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কলেজ শিক্ষক নজিবুল হক (৭০) বলেন, ছোট বেলায় রাতে চার পাঁচ জন মিলে পাটকাঠির নল দিয়ে হাঁড়ি থেকে চুরি করে রস খাওয়ার বিষয়টি অনেকের শৈশবের স্মৃতি অম্লান হয়ে আছে আজো। যা বর্তমান উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি । গ্রামীণ মেঠোপথ আর খেঁজুর গাছের সাঁরি আর গাছে রসের হাঁড়ি আজ আর দেখা মিলে না। দেখা মিলে না পাখি আর কীট-পতঙ্গ রাস্তার পাশে, জমির আইল, পরিত্যাক্ত জমিতে বিনা পরিচর্যায় যে কোন ধরনের মাটিতে এ প্রজাতির গাছ ভালো জন্মায়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই খেঁজুর গাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। আগের মত গ্রামের রাস্তার দু’পাশে সারি সারি খেঁজুর গাছের আর দেখা মেলেনা। যে হারে খেঁজুর গাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ হয় না। গ্রামের রাস্তা গুলো সংস্কার ও নতুন করে খেঁজুর গাছ রোপনে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গাছ ও খেঁজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের আনোয়ার উদ্দিন সানা (৭৫) জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগেও এলাকায় বেশ খেঁজুর গাছ দেখা যেত। এবং প্রায় বাড়িতে চাহিদা অনুযায়ী  রস সংগ্রহ হতো। এক সময় দেখেছি এক ভাঁড় রস মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করা হতো। গুড় পাটালির দামও ছিল খুব কম। যা বর্তমানে এক ভাঁড় রস ২ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর পাটালি বিক্রি হচ্ছে ৩শত টাকা কেজি দরে তাও চিনি মেশানো। এখন একটা খেঁজুর গাছ পরিচর্যা  থেকে শুরু করে খিল দেয়া পর্যন্ত গাছিকে দিতে হয় ২শত টাকা। অপরদিকে স্থানীয় পুরনো গাছি সোহরাব সরদার (৬০) জানা, আমাদের এলাকায় এখন আর আগের মত অত খেজুর গাছ নেই,আর যা আছে তাতে বর্তমানের রস খুব কম হচ্ছে।কষ্ট করে কোন লাভ হচ্ছে না,তাই খেজুর গাছ কাটা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ফারুক হোসেন সরদার (৩৫) জানান, আগের তুলনায় বেশি টাকায়ও মিলছে না চাহিদা মত রস। কয়েকদিন আগে চার শত টাকা দিয়ে দু ভাঁড় রস কিনে পরিবারের দাবি মিটিয়েছি। তার ভাষায় গ্রামও যেন এখন শহুরে ছোঁয়া। শীতের পিঠা ও রসের গুড় এখন আর খাওয়া হয় না বললেই চলে। আর এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম  খেঁজুর গাছ ও রস-গুড় নামক সুস্বাদু খাবারটি কি বা কেমন তা হয়তো ভুলেই যাবে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ ফজলে সরদার (৮০) জানায়,খেজুর গাছ শুধু রস গুড় দেয় না।বসত ঘরের কাজে লাগানো ও জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা সহ এখনো গ্রামের মহিলারা এর পাতা দিয়ে পার্টি তৈরি করে। তাতে ধান শুকানো এবং শোয়া বসার কাজে ব্যবহার করতো। এখনো অনেক মানুষের বাড়ি এই পার্টি রয়েছে। যদিও সাংসারিক জীবনে খেঁজুর গাছের গুরুত্ব অপরিসীম নতুন করে কেউ খেঁজুর গাছ লাগাচ্ছে না বলে তিনি জানান। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চাশোর্ধ  ব্যক্তি জাতীয় দৈনিক সকালের সময়কে জানান,বিগত কয়েক বছর যাবত খেঁজুরের রস গুড়ে চিনি মেশানোর বিষয়টি শুধু আমি না সবারই জানা। চিনি মেশানোর ফলে আগের মত সেই প্রকৃত স্বাদ গন্ধ এখন আর পাওয়া যায় না। আর যে কারণে চিনি মেশানো হয় সেটা হল বর্তমানে  এক কেজি চিনির দাম ১৪০ টাকা। আর ১ কেজি খেঁজুরের পাটালি বিক্রি হচ্ছে ৩শত থেকে  ৪ শত টাকা দরে। বিশেষ করে আমি ডায়াবেটিসের রোগী হওয়ায় ওই গুড়-পাটালী খেতে একেবারে ভয় পাচ্ছি। অথচ জন গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। আর এই ধরনের অভিযোগ বহু রস গুড় প্রেমিক ভোক্তা  সাধারনের বলে জানা যায়।  তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজীরা খাতুন জানান, বছরের একটি মাত্র সুস্বাদু খাবার, গুড় পাটালিতে চিনি মেশানো  বন্ধ করা জরুরি। একই সাথে প্রাচীন এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে নতুন করে খেঁজুর গাছ রোপন এবং তা সংরক্ষণের জন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের অর্থাৎ কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এমএসএম / এমএসএম

সিডিএ'র কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ঠিকাদার

পটুয়াখালীতে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শত শত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ

বেনাপোল বন্দরে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে স্থবিরতা

রাণীনগরে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

অবসরে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের বিদায় সংবর্ধনা

সম্প্রীতি বিনিষ্টকারীদের ছাড় নেই: গোপালগঞ্জে সম্মেলনে ডিসি

পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানায় শক লেগে ৫ শিশু হাসপাতালে

আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে হাটহাজারীর কৃষকরা

রৌমারীতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না বলেই আন্দোলন মুছতে পারেনি : এটিএম আজহারুল

বোদায় ১৩৫০ টাকার সার ১৮০০ টাকায় বিক্রি, যৌথ বাহিনীর অভিযান

সমাজ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই : জহুরুল আলম

নেত্রকোনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ বশির