ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

উপকূলে ঋণ-দাদনের জালে জেলেরা


সম্রাট, কয়রা photo সম্রাট, কয়রা
প্রকাশিত: ১৭-৮-২০২১ বিকাল ৫:১১
ঋণ বা দাদনের জালে অনেকটাই বন্দি হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। সাগর-নদীতে এবার ভরা মৌসুমেও মাছের ছিল তীব্র সঙ্কট। আর বর্তমানে সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। আর এ সঙ্কট ও বন্ধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জেলেদের সংসারের অভাব-অনটন। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার নেই। এ কারণে সংসার চালাতে কিংবা পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে জেলেরা হাত পাতছেন বিভিন্ন এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। ঋণ নিয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করলেও পরবর্তী সময়ে যা আয় করছেন তা দিয়ে চালাচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি। ঋণ-দাদনের কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে বাড়তি কোনো টাকা আর সঞ্চয় রাখতে পারছেন না। ফলে ঘুরেফিরে সেই ঋণ-দাদনের জালেই জড়িয়ে পড়তে হয় জেলেদের।
 
সরেজমিন বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনবেষ্টিত নদীকেন্দ্রিক জেলা খুলনার কয়রা উপকূলীয় এলাকা ঘুরে জানা যায়, নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোর জেলেরা হতদরিদ্র। সুন্দরবনের মৎস্য শিকারের ওপর তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় তাদের। তবে জেলেদের কষ্টের আয়ের প্রায় সবটাই চলে যায় দাদন ব্যবসায়ীদের (কোম্পানি) পকেটে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রা উপজেলা চারপাশে নদী ও সুন্দরবন বেষ্টিত। উপজেলা ৪নং কয়রা ,৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, তেঁতুলতলার চর, চৌকুনী, গিলা বাড়ি, হাতিয়ার ডাঙ্গা, ভাগবা, সুতির অফিস, কাটকাটা, গাজিপাড়া, আংটিহারা, গোলখালী, মাটিয়াভাঙ্গা, চরামুখা, জোড়শিং গ্রামের ৭০% শতাংশ লোক নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা সারাদিন ও রাতে মাছ ধরে কয়রা বাজারের মৎস্য আড়ত, হোগলা মৎস্য আড়ৎ, চাঁদআলী মৎস্য আড়তে  বিক্রি করেন। কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলেরা হতদরিদ্র। মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার কেনার জন্য উপজেলার আড়তদার ও মহাজনদের কাছ থেকে প্রতি বছর ঋণ নেন তারা।
 
স্থানীয় ব্যক্তিরা একে দাদন ব্যবসা বলেন, জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সে টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আর নিলামে ওঠার আগেই জেলেদের মজুদ মাছের এক-দশমাংশ আড়তদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়।
 
বিভিন্ন সময় সদরের আমাদী, গিলাবাড়ী মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মাছ তুলে থাকেন। মাছ আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে আড়তের লোকজন নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ নিজেদের আয়ত্তে নিচ্ছেন। এরপর বাকি মাছের নিলাম করছেন। নিলামে তোলার পর মোট টাকা থেকে ১০-২০ টাকা হারে দৈনিক সুদ কেটে নেয়া হচ্ছে।
 
জোড়শিং গ্রামের জেলে আজিজুল ঢালী বলেন, আড়তদারদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী মাছ ও টাকা নিয়ে নেন। আড়তদারেরা প্রথমে মাছ এরপর নগদ টাকা কেটে নেন। এভাবে মাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা তাদের পকেটে চলে যায়। এ কারণে দিন-রাত পরিশ্রম করেও আমাদের সুখ আসে না,  সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
 
কয়রা সদরের মৎস্য আড়তদার আলমগীর হোসেন বলেন, উপজেলায় কয়েক হাজার জেলে আছে। প্রায় সব জেলে আমাদের কারো না কারো কাছ থেকে অথবা কোম্পানির কাছ থেকে  দাদন নিয়ে মাছ ধরে। আমরা কাউকে জোর করে দাদনের টাকা দেই না। জেলেরা গরিব, নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে তারা টাকা নেয়। সারাদেশের মতো একই নিয়মে আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ ও টাকা আদায় করি।
 
৫নং কয়রা ও ৬নং কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুমাচ্ছেন। আবার অনেকে ছোট মাছ ধরার জাল বুনছেন। কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতে গেছেন। ৫নং কয়রা গ্রামের জেলে আয়ুব আলী  বলেন, দাদন ব্যবসা ও মহাজনের কবলে পড়ে এ গ্রামের জেলেরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। আর প্রতিদিন মাছ নিয়ে আড়তে না গেলে আড়তদারদের লোকজন বাড়িতে এসে জেলেদের অনেক বড় কথা ও অনেক সময় মারধরও করে।
 
৬নং গ্রামের জেলে রজব আলী বলেন, সরকারই পারে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে। নতুবা আমাদের অভাব কোনোদিন শেষ হবে না।
 
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেও জেলেদের দাদন ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে পারিনি। জেলেদের যে সুবিধা দেয়া হয় জেলে কার্ডের মাধ্যমে, তা সামান্য। সরকারিভাবে জেলেদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা হলে হয়তো দাদন ব্যবসা বন্ধ হবে।

এমএসএম / জামান

ঈশ্বরদীতে ট্রেনে কেটে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু

মসজিদের খতিব–ইমাম–মুয়াজ্জিনদের সুরক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্তঃ কুমিল্লায় ধর্ম উপদেষ্টা

মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবিতে গণজমায়েত

চর ওয়াশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেন জাতীয় বীর আমান উল্লাহ আমান

গাজীপুরের রাজনীতিতে ঝড় তুললেন ইরাদ সিদ্দিকী

ধুনটে বালুবাহী দুই ট্রাকের চাপে অটোরিকশাচালক নিহত

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের হীরক জয়ন্তী পালন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিলমারী মডেল থানার এসআই আসাদুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যু

কোম্পানীগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও সহায়তা প্রদান

দুমকিতে সশস্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দুমকিতে গাভী লুটপাটের অভিযোগ 'মিথ্যা', দাবি করে সংবাদ সম্মেলন

ভূমিকম্পকে আল্লাহর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখার আহ্বান – মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (বড় হুজুর, কাছাইট)

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা