সফলতার মাঝে ও শঙ্কিত চাষীরা সোনালী স্বপ্ন ঘরে তুলতে মরিয়া

গগনে গরজে মেঘ,ঘন বরষা। কুলে একা বসে আছি,নাহি ভরসা। রাশি রাশি ভারা ভারা, ধান কাটা হল সারা,ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু স্বনামধন্য গুণীজন,কবি,সাহিত্যিকেরা। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রধান ধান ফসল নিয়ে অসংখ্য কবিতা-গান লিখেছেন। যাদের ক্ষুরধার লেখনীর মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাধারণ কৃষকের দুঃখ দুর্দশার চিত্র। কিন্তু কৃষি প্রধান এ দেশে আজও কি সম্ভব হয়েছে।এদেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরনো অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী। ক্ষেত খামারের মাটির গন্ধ গায়ে মেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করা কৃষকদের কষ্ট লাঘব করা ? তবুও থেমে নেই ওরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাঠে মাঠে পুরোদমে শুরু হয়েছে। কৃষকদের কষ্টার্জিত ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াই ঝাড়াইয়ের কাজ। একই সাথে ধান ঘরে তোলা ও চাল তৈরি করার জন্য ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। বছরের একটি মাত্র ধান ফসল কেটে ঘরে তোলার ভরা মৌসুম চললেও। প্রচন্ড গরমের কারণে দেখা দিয়েছে চরম শ্রমিক সংকট। বেশি দামেও মিলছে না চাহিদা মত শ্রমিক। সূত্রমতে,সাতক্ষীরা জেলায় গত বছরের
তূলনায় এবার ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে কৃষক কৃষাণীরা দিন রাত সোনালী শীষের পাঁকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইরি ধান ঘরে তোলার ভরা মৌসুমে এই অঞ্চলের শত,শত শ্রমিক ইতোমধ্যে বেশি মজুরিতে কাজ করতে বিভিন্ন জেলায় চলে যাওয়ায়। শ্রমিক সংকটের কারণে বিগত বছরের ন্যায় এবার ও দ্বিগুন মুজুরি দিয়ে কৃষকদের ধান বাড়ি তুলতে হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা সমান তালে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই এলাকার পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি শত শত নারী শ্রমিকরা সমানতালে ধান কাটার কাজে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেছেন । এদিকে চলতি তীব্র তাপ প্রবাহের মধ্যে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া এমন তথ্য অনেকের কাছে স্বস্তির খবর হলেও। এখানকার ঋণগ্রস্থ বহু কৃষকরা হয়ে উঠেছেন উদ্বিগ্ন। জানা যায় এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় ইরি বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবং সরকারি ভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৩২টাকা দরে। তবে সরকারি ভাবে ধান বিক্রির এ বিষয়ে তালা উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের প্রান্তিক চাষী আব্দুল্লাহ সরদার (৪৫) জানান, গোডাউনে ধান বিক্রি করা বিশাল ঝামেলা, যে কারণে এ পর্যন্ত আমি এক কেজি ধানও গোডাউনে বিক্রি করতে পারিনি। আর তাছাড়া গোডাউনের যে দাম হাটে বাজারের দোকানেও তাই। দোকানে ধান দেওয়ার সাথে সাথে নগত টাকা পাওয়া যায়। জেলায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বাম্পার ফলন হয়েছে সাতক্ষীরার তালা,কলারোয়া ও সদর উপজেলায় বলে জানা যায়। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান,সাতক্ষীরা জেলায় এবছর সর্বমোট ৭৯ হাজার ৮শত ২০ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭শত ৭১ মে.টন। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান ২৪ হাজার৫শত ৫০ হেক্টর এবং উফশী জাতের ৫৫ হাজার ২শত ৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সদর উপজেলায় এবছর ২৩ হজার ৫ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে ইরি ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদিত ধান থেকে চাউল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ২শত ৭৭মে. টন। জেলায় এবছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ২০-৩০ শতাংশ ধান বেশি উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি অফিসের নিরবিচ্ছিন্ন তদারকি, নিয়মিত পরামর্শ ও সেবার কারণেই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে চলতি বছর বেশি ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে । যদিও শেষ মুহূর্তে শিলাবৃষ্টির কারণে বেশ কিছু কৃষকের জমির ধান আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে। তা না হলে আরও বেশি ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। কোমরপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান- এবছর আমি ৮বিঘা জমিতে ২৮ ধান চাষাবাদ করেছি। আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৩হাজার টাকা। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে আমার সব জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মন ধান হতে পারে। শিলাবৃষ্টির কারণে আমার এবছর খরচের টাকা ওঠবে না। ভালুকা চাঁদ পুর গ্রামের আদর্শ কৃষক এম এ মাজেদ ডাবলু জানান,আমি ৩ বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। আমার ধান ঘরে তোলার শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্লাপুর গ্রামের আর্দশ কৃষক ও সাবেক মেম্বার শফিকুল ইসলাম জানান,তিনি এ বছর ১৬ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করেছেন। তার ১৬ বিঘাতে জমিতে চাষাবাদে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। তিনি প্রথম গত ৬ এপ্রিল জেলায় ইরি ধান কাটা শুরু করেছে। তার বিঘা প্রতি ২৮-২৯ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। বালিথা গ্রামের সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য আরশাদ আলী জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ধান ঘরে তুলেছেন। ২ বিঘা জমিতে ৬০ মণ ধান উৎপাদন করেছে। পারুলিয়া গ্রামের আরেক কৃষক আঃ রাজ্জাক জানান,অনেক গরমে ধান কাটতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বেশি মুজুরি দিয়ে ধান কাটছি। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা ধান কাটছে। গত বছরের তূলনায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক আমিনুর রহমান জানান, ৩ বিঘা জমিতে ইরিধান চাষ করেছি। গত বছরের তূলনায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছি। তীব্র গরমে অনেক শ্রমিকরা ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিনি বিঘা প্রতি ২৬ থেকে ২৮মন ধান উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। স্থানীয় কৃষক জব্বার গাজী বলেন,চলতি বছর ইরি বোরো ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে। কিন্তু তীব্র গরমে শ্রমিক সংকট দেখা গেছে। এই অঞ্চলের শ্রমিকরা জেলার বাইরে গিয়ে মুজুরি বেশি নিয়ে ধান কাটছে। সে কারণে এখানে শ্রমিকদের বেশি মুজুরি দিয়ে ধান কাটা লাগছে। অন্যদিকে সফলতার মাঝেও শঙ্কার কথা জানালেন,তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার চৌগাছা গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক কোহিনুর শেখ (৫৫)। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমি ৯ হাজার টাকা করে অন্যের ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ইরি ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির ভয়ে প্রায় দুই আনা ধান কাঁচা থাকা অবস্থায় ধান কেটে ঘরে তুলেছি। জমির হারি, চাষাবাদ,সার-ওষুধ সহ ধান কেটে বাড়িতে আনতে। প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মত খরচ করে আঠাশ জাতের ৮০ মণ ধান পেয়েছি। যা বর্তমানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩ শত টাকা দরে। সব মিলিয়ে এবছর ধান চাষ করে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার মত লোসকান হয়ে গেল। এখন লোকজনের পাওনা টাকা দেবো কিভাবে এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। আর এ ধরনের আকুতি বা অভিযোগ এখানকার বহু কৃষকের বলে জানা গেছে। সরেজমিনে, ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ধান কাটা শেষ গেছে এবং ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। আবহাওয়া এবং সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী ১০থেকে ১২দিনের মধ্যে সব ধান কৃষকের কাটা মাড়ায় শেষ করে ঘরে তোলার কাজ শেষ হবে বলে একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে এবছর তীব্র তাপ প্রবাহের মধ্যেও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কষ্ট করে হলেও কৃষকরা স্বস্তিতে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারছেন বলে তারা জানান। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ তাপ প্রবাহের মধ্যেও কৃষকরা দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করছেন বলে একাধিক শ্রমিকরা জানিয়েছেন।তবে একাধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকরা জানান,এখন ধান কাটার ভরা মৌসুম চলছে। তাই দৈনিক প্রায় ১৬ ঘন্টা কাজ করছি এবং মুজুরি হিসেবে ১থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। তীব্র গরমে সারা দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও বৃষ্টি না হওয়ায়। কৃষকরা অসহনীয় কষ্টের মধ্যেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। ধুমধাম করে ঘরে বা গোলায় ধান তোলার জন্য ব্যস্ত সময় পার করার মনোমুগ্ধকর ও হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য এখন এখানকার মাঠে মাঠে।
এমএসএম / এমএসএম

সিডিএ'র কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ঠিকাদার

পটুয়াখালীতে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শত শত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ

বেনাপোল বন্দরে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে স্থবিরতা

রাণীনগরে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

অবসরে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের বিদায় সংবর্ধনা

সম্প্রীতি বিনিষ্টকারীদের ছাড় নেই: গোপালগঞ্জে সম্মেলনে ডিসি

পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানায় শক লেগে ৫ শিশু হাসপাতালে

আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে হাটহাজারীর কৃষকরা

রৌমারীতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না বলেই আন্দোলন মুছতে পারেনি : এটিএম আজহারুল

বোদায় ১৩৫০ টাকার সার ১৮০০ টাকায় বিক্রি, যৌথ বাহিনীর অভিযান

সমাজ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই : জহুরুল আলম

নেত্রকোনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ বশির
Link Copied