বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও অনুপাত হারে বাড়েনি শিক্ষার্থী
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন সংখ্যা বাড়লেও অনৃপাত হারে বাড়ছেনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নাম মাত্র শিক্ষার্থী নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে সার্টিফিকেট বিক্রির। এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের শিক্ষার্থীর পরিমান খুবই কম । বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন করা বার্ষিক প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে,
২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩লাখ ২৮ হাজার ৭৩৬জন। বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ৭৮টি। ২০১৪সালে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ছিলো ৮০টি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ ৩০হাজার ৭৩০জন। ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩লাখ ৫০ হাজার ১৩০জন বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ৮৫টি। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ৯৫টি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩লাখ ৩৭হাজার ১৫৭টি। অথাৎ এ বছর শিক্ষার্থী কমছে। আবার ২০২০ সালে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৯ জনে বিশ্ববিদ্যালয় তখন ১০৭টি। অথাৎ বিশ্বদ্যিালয়ের সংখ্যা বাড়লে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ২০২২ সালে এসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাড়ায় ১১০টিতে। তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩লাখ ৪১হাজার ৯৮জন। অথৎ ব্যবসায়িক ভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও সেতুলনায় শিক্ষার্থী বাড়েনি।
২০২২ সালের তথ্যে দেখা গেছে,১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যারয়ের মধ্যে মাত্র আচার্যের দেয়া নিয়োগকৃত উপাচার্য,উপ-উপাচার্য,কোষাধাক্ষ্য মাত্র ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণ আছে। বাকী ৯৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন না কোন পদ খালী রয়েছে। ২০১০ সালের শিক্ষা নীতিতে উপাচার্য,উপ-উপাচার্য,কোষাধাক্ষ্য এই তিন পদে নিয়োগ দেয়া বাধ্যতামূল রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই এ পদ গুলো পূর্ণ করা হয়নি তার পরও চলছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ২০২২সালের প্রতিবেদন অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে। ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১সালে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছিলো ১৬০৪ জন। যা ২০২২ সালে দাড়ায় ১২৮৭জনে। অথৎ ৩১৭ জন শিক্ষার্থী কমছে।
অপরদিকে প্রতিবেদন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা গেছে, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ থেকে ৪বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম এর মধ্যে রয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি’ শিক্ষার্থী সর্ব নিম্ন ৪৩জন। ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শিক্ষার্থী ২৯৪জন। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডাড ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থী ৭২৩জন। ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’ শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৪জন। খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে শিক্ষর্থী ভর্তির অনুমতি পেলেও ২০২২ পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী নেই।‘ জেড এন আর এফ ইউনির্ভাসিটি মানেজমেন্ট সায়েন্সস, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১২জন। ‘রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিক্ষার্থী-১৩৪জন। ‘সেন্টাল ইউনিভার্সি অব সাইন্স এনড টেকনোলজি’ শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২১জন।
এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক আনোয়ারউল্লা চৌধুরী বলেন, এখন দেশে ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কোন মান নেই। তিনি বলেন, এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে আসেন তারা আসে ব্যবসা করতে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার আগে ভাবেন এখান থেকে কত লাভ করা যাবে। অথচ আমারা যখন ১৯৯২ সালে বেসরকারি আইন চালু করে ছিলাম তখন মূল কথাই ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন ব্যবসায়িকরা আসে গার্মেন্টস এর মত ব্যবসা করতে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের অ্যাসোসিয়েশনের চেয়াম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, এখন শিক্ষার্থীরা ঠিকমত লেখাপড়া করেনা তারা এসএসসি এইচএসসি শেষ করেই চাকরি করতে চলে যায়। এ জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছেনা। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক বাড়ছে। এখন জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এ জন্য পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।
এ বিষয় ইউজিসির গণসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড.একে এম শামসুল আরেফিন বলেন,কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান খুব বেশি ভালো না এ জন্য অভিভাবকদের কিছুটা অনিহা রয়েছে শিক।সার্থী ভর্তিতে। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষকদের অনুপাত ঠিক নেই। এ জন্য অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির পর আর বিশ্ববিদ্যালয় আসে না।
এমএসএম / এমএসএম