দু’মুখো মানুষের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের শাস্তি অনিবার্য

দুমুখো সাপ আর দুমুখো মানুষ একই ধরনের তাদের চরিত্র অভিন্ন। তাই দুমুখো মানুষের কাছ থেকে সাবধানে থাকতে হবে। পৃথিবীতে যত বড় বড় দুর্ঘনা ঘটেছে তা কিন্তু দুমুখো মানুষেরাই করেছে। যেমন নবাব সিরাজদৌল্লাহকে পরাজিত করেছিল দুমুখো মীর জাফর আলী খান, সিরাজ দৌল্লাহ সাথে কোরান শপথ করেও বেঈমানী করেছে। কারণ মীর জাফর আলী খান ছিলো দুমুখো মানুষ। ইংরেজদের সাথেও হাত রেখেছে আবার নবাবের সাথেও বিশ্বাস দেখিয়েছে- কিন্তু পরিশেষ নববের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তেমনি আমাদের মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছের মানুষ ছিলো খন্দকার মোশতাক তাকে বঙ্গবন্ধু বেশি বিশ্বাস করতেন, কিন্ত খন্দকার মোশতাক ছিলো দুমুখো মানুষ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার রাতেও বঙ্গবন্ধুর জন্য হাস রান্না করে নিয়ে গেয়েছিল, অথচ সেই খন্দকার মোশতাক সকালবেলা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকরেছে। এই ধরনের ইতিহাস হাজার হাজার রয়েছে। দুমুখো মানুষের কোন নীতি নেই তাদেরকে চেনা যায়না, তাদেরকে বুঝা যায়না তারা যে দুমুখো সাপের ভুমিকায় অবতীর্ণ, আপনি দুমুখো মানুষকে আপনি আদরকরে সম্মান জানিয়ে যদি বসার চেয়ারদেন তাহলে দেখবেন কয়দিন পর সেই আপনার বসার চেয়ারটাও কলবেলে কৌশলে কেড়ে নেবে। তারা আপনার সাথে এমন অভিনয় করবে মনে তাদের চেয়ে ভালোমানুষ, ভালো বিশ্বস্ত বন্ধু পৃথিবীতে নেই, তারা যে আপনাকে মারার জন্য চুরি সংগ্রহ করে রেখেছে তা কিন্তু আপনি বুঝতেই পারবেননা, কিছুটা বুঝালেও কিন্তু বিশ্বাস করতে পারবেনা। এই ধরনের দুমুখো মানুষ যোগেযেগে ছিলো, এখনো আছে। আপনি দেখবেন প্রতিনিয়ত যেসব বড় বড় ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু সব ঘটনার সাথে দুমুখো মানুষেরা কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে এই আপন মানুষটি আপনার সর্বনাশ করতে পারে বা করেছে। এখন সব জায়গায় দুমুখো মানুষেরা বিচরণ করতেছে। তবে সবচেয়ে বেশি পাবেন টাকা লেনদেন ও রাজনীতি এবং ক্ষমতা যেখানে আছে সেই খানে তাদের অবস্থান, তার সাধুবেশী বিচরণ করবে শয়তানের মতো রুপধারন করে আপনাকে নিঃস্ব করে চলে যাবে। তাদের পোশাক আশাক চালচলনে টাকা পয়সা খরচে কিছুতেই বুঝা যাবেনা তারা যে সেবকের ছদ্মবেশে ঘাতকের কাজ করেছেন। এই দুমুখো মানুষের বিষয়ে পৃথিবীতে বহু গল্প কাহিনি ইতিহাস লিখা হয়েছে, এই দুমুখো মানুষদের বিষয় শুধু মানুষরা বলেনি,দুমুখো মানুষের বিষয়ে আল্লাহ কি বলেছেন একটু দেখি আসি।
মুনাফিক শব্দের অর্থ হলো- কপট, বিশ্বাসঘাতক, দ্বিধাগ্রস্ত, সন্দিহান, দুমুখো ইত্যাদি। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের আলামত বা লক্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- যখন কথা বলে তখন তা মিথ্যা বলে, ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং আমানতে খিয়ানত করে।-সহিহ বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা হচ্ছে- মিথ্যাচার, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা এবং আমানত খিয়ানত করা।
আমরা ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো, ইসলামের এবং মুসলিমদের ক্ষতিসাধনে যারা অতিসন্তর্পণে কাজ করে এসেছে তারা প্রধানত মুনাফিক। তারা মুখে আল্লাহ-রাসূলের কথা বলে, বেশভূষাতেও খাঁটি মুসলিম বলে মনে হয়; কিন্তু তারা শয়তানি চক্রের দোসর হিসেবে তৎপরতা চালায়, তারা মানবিক মূল্যবোধকে অপমানিত করে। তাদের কথা এক রকম আর কাজ অন্য রকম। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কার জীবনে কাঢের-মুশরেকদের মোকাবেলা করতে হয়েছে, কিন্তু ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করে আসার পর তাকে ইহুদি এবং সেখানকার কিছু লোক যারা বাইরে ইসলাম গ্রহণকারী হলেও গোপনে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ছিল তাদের মোকাবেলা করতে হয়।
লোক দেখানো মুসলমান হওয়া এমন লোকেরাই মুনাফিক হিসেবে পরিচিত হয়। এরা ইহুদি এবং মক্কার কাফের-মুশরেকদের সঙ্গে আঁতাত করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। এই মুনাফিকদের সরদার বা নেতা ছিল আবদুল্লাহ ইব্নে উবাই। ওপরে ওপরে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত আপনজন হিসেবে জাহির করত, আর তলে তলে ইসলামের ক্ষতি হয় এমন সব কাজ করত।
আল্লাহতায়ালা এমন চরিত্রের লোকদের চেহারা উন্মোচন করে দিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা বলে, আমরা ইমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি : আদতে তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহকে এবং মুমিনদের ওরা প্রতারিত করতে চায়, অথচ ওরা নিজেরাই যে নিজেদের প্রতারিত করে তা ওরা বুঝে উঠতে পারে না। ’ -সূরা বাকারা : ৮-৯
পবিত্র কোরআনে কারিমে মুনাফিকুন (মুনাফিকবৃন্দ) নামে একটি সূরা রয়েছে। ১১ আয়াতবিশিষ্ট ওই সূরাতে মুনাফিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আরও ইরশাদ করেন, মুনাফিকরা আপনার নিকট এসে বলে- আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তো জানেনই যে, আপনি নিশ্চয়ই তার রাসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। ওরা ওদের শপথগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং ওরা আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে। ’ -সূরা মুনাফিকুন : ১-২
এ সূরায় মুনাফিকদের আরও কিছু চিহ্ন তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মুনাফিকদের বেশভূষা, আচার-আচরণ মনোমুগ্ধকর হয়; তাদের কথাবার্তাও আকর্ষণীয় হয়, তাদের বাচনভঙ্গি লোককে আকৃষ্ট করে, তাদের চেহারা-সুরত দেখে বোঝা যায় না যে, তাদের বাইরের অবস্থা অন্তরের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বাহ্যিক দিকটা সুন্দর ও মনোহর করে রাখে আর তাদের অন্তর মিথ্যা, প্রতারণা, বিদ্বেষ ও শয়তানী অভিসন্ধির কলুষতায় পরিপূর্ণ।
হজরত ইমাম রাজি (রহ) সূরা মুনাফিকের উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই, মুগিস ইবনে কায়েস ও ওয়াজদ দৈহিক গঠনে সৌন্দর্যে দামী দামী পোশাক পরিচ্ছদ পরিধানে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। বিশেষ করে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই দেখতে অত্যন্ত সুশ্রী ছিল, সে দৈহিকভাবেও সবল ছিল, সে পরিমার্জিত ভাষায় কথা বলত, তার কথা শুনলে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যেত। যুগে যুগে নিত্যনতুন মুনাফিকের আবির্ভাব হয়েছে এবং হচ্ছে, যারা ইসলামের কথা বলে বটে কিন্তু ইসলামের শান্তির আদর্শ থেকে, সৌহার্দ্য ও পরিচ্ছন্নতার আদর্শ থেকে তারা বিচ্যুত থাকে। তারা অশান্তি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে কর্তৃত্ব গ্রহণের চেষ্টা করে; যেমনটা করেছিল মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। তাদের সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের যখন বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না, তারা বলে আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! এরাই তো অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু এরা বুঝতে পারে না। ’ -সূরা বাকারা : ১১-১২ যাদের কথায় এবং কাজে বৈপরীত্য থাকে তাদের সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা যা বলে তা করে না। -সূরা শোয়ারা : ২২৬ মুনাফিকরা
মিথ্যাচার রোগ দ্বারা আক্রান্ত। এই রোগ তাদের এমনভাবে পেয়ে বসে যে, তার খপ্পর থেকে তারা রেহাই পেতে পারে না। আর এমন ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। বস্তুত যারা মুনাফিকি করে এবং দুমুখো নীতি গ্রহণ করে তাদের এমন অমার্জনীয় অপরাধের শাস্তি দুনিয়াতেই শুরু হয়ে যায়। জীবনের পদে পদে পরিণামে তাদের অপমানিত হতে হয়, লাঞ্ছিত হতে হয়। মুনাফিককে কেউ প্রকৃত অর্থে সম্মান করে না। মানুষের কাছে সে বেইমান হিসেবে গণ্য হয়। অসংখ্য
হাদিসে ভাষায় মুনাফিকদের সবচেয়ে মন্দ মানুষ বলা হয়েছে। এরা সব মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র যেমন হয়, তেমনি আল্লাহতায়ালাও মুনাফিকদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মন্দ লোক হিসেবে গণ্য হবে সেই মানুষ- যে দুমুখো। -তিরমিজি
মুনাফিকরাই যুগে যুগে মুসলমানদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে আসছে। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। কারবালার যুদ্ধের কথাই বলি, দেখা যাবে, মুনাফিকদের কারণেই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। মুনাফিক মুখোশধারীরা আমাদের কালেও রয়েছে। এদের চিনতে এবং তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকদের দোজখের সর্বনিম্ন স্তরে নিক্ষেপ করা হবে। ’
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
