বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের ৫০ লক্ষ টাকা বাতিল

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের রাস্তাঘাট ও টিউবওয়েল সহ জনস্বার্থে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকারি থোক বরাদ্দের ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। উপজেলা পরিষদের আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক সভায় ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকার কথা থকলেও প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তারা অনুপস্থিতি থাকেন। উপজেলার মাসিক সভায় তাদের অনুপস্থিতির কারণে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ টাকা বাজেটের মাধ্যমে পাশ করানো সম্ভব  হবেনা বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।

অবহেলিত বাকেরগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন থেকে আবারো বঞ্চিত হয়ে গেলো ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট। বাকেরগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিল হওয়ার সম্পূর্ণ দায়ভার নব-নির্বাচিত উপজেলা পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২ জন চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপির মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান হেরে যাওয়ার কারণে বাকেরগঞ্জের আওয়ামী লীগ রাজনীতির মধ্যে প্রতিহিংসা এবং চরম গ্রুপিং এর সৃষ্টি হয়েছে। বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের এমপির প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়ে সাধারণ জনগণের ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাজিব আহম্মদ তালুকদার। 

উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার এর শপথ পাঠের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে চেয়ারম্যানের দ্বায়িত বুঝে নেন ৯ ই জুন রবিবার। বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে ১০ই জুন সোমবার সকাল ১০ টার সময় উপজেলা পরিষদের হল রুমে আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক সভার আয়োজন করেণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি সহ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন চেয়ারম্যান বিরোধিতা করেণ রাজিব আহম্মদ তালুকদারের। বাকেরগঞ্জের রাজনৈতিক বর্তমান ক্ষমতার চেয়ারে থাকা প্রভাবশালী মহলের বিরোধিতা করে। উপজেলার সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার। বাকেরঞ্জ উপজেলার বর্তমান ক্ষমতাশীল দলের এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের বিরোধিতা করায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাধারণ ভোটারদের প্রতি তাদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণে। সাধারণ নেতাকর্মী ও ভোটার সহ কিছু জনপ্রতিনিধিদের উপর বর্তমান এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের হিংস্র মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে বলে একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে এমন প্রমান মিলেছে। উপজেলা ও ইউনিয়নের দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অপমানিত হতে হচ্ছে বিভিন্ন সময়।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করে এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ৫০ লক্ষ টাকা থোক বরাদ্দের বাজেটে বিলুপ্ত হওয়ার মিশন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান'রা মাসিক সভায় অনুপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তাদের প্রতিহিংসা মূলক অনুপস্থিত থাকার কারণে জুন মাসের বাজেটের থোক বরাদ্দ ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করানোর সুযোগ আমাদের ছিলো। উল্লেখ্য মাসিক সভায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারবার নির্বাচিত পৌর মেয়র, গারুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ুম খান, কলসকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না সহ উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী'রা উপস্থিত ছিলেন। মাসিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানে পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সহ ১২ জন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে সভায় অনুপস্থিত থাকেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার জানান, আমি নির্বাচনে জয় লাভের পর থেকে চেয়েছি উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভাগ্য উন্নয়নের চিত্র পরিবর্তন করবো। অবহেলিত এই উপজেলাকে একটি আধুনিক স্মার্ট উপজেলা নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করবো। সোমবার ১০ জুন নির্বাচনের পরে আমাদের প্রথম মাসিক সভা ছিলো। মাসিক সভায় সকলে উপস্থিতির থাকলেও। উপজেলার দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান এর মধ্যে ১২ জন অলৌকিক কারণে অনুপস্থিত থাকার কারণে। বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওতায় উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দের ৫০ লক্ষ টাকার উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য মন্ত্রনালয় থেকে আনার মতো আমাদের ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে সুযোগ ছিলো । মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেছে বাকেরগঞ্জ উন্নয়নের জন্য অথচ তাদের এমন প্রতিহিংসার মনোভাবের জন্য আজ আমাদের বাকেরগঞ্জ বাসীর উন্নয়ন মূলক কাজের বড় একটা বরাদ্দ হাতছাড়া হয়ে গেলো। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কিছু ইউপি চেয়ারম্যানদের জন্য উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হলো বাকেরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ।

তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো জুন বরাদ্দের এই ৫০ লক্ষ টাকা বাজেটের মাধ্যমে আমরা সরকারি দপ্তর থেকে বরাদ্দ আনবো। বাকেরগঞ্জের আমাদের সকল জনপ্রতিনিধি সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট ও ব্রিজ গুলো সংস্কার সহ প্রয়োজনীয় জরুরী কিছু টিউবওয়েল এর ব্যবস্থা করব। উপজেলার মাসিক সভায় তাদের অনুপস্থিতি কারণে এই সকল উন্নয়ন থেকে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হলো। সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনাদের ব্যক্তিগত রাজনীতির প্রতিহিংসার কারণে। বাকেরগঞ্জের সাধারণ মানুষের উন্নয়ন মূলক কাজে প্রভাব খাটিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বাঁধাগ্রস্থ করবেন না। আপনাদের রাজনৈতিক নোংরা মনোভাবের কারণে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভাগ্য উন্নয়নের চিত্র পরিবর্তন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা আমরা না করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান সহ উপজেলা প্রশাসন এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে এটা ছিলো প্রথম আনুষ্ঠানিক আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক সভা। বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সবাইকে দাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। আমার সাথে সকল জনপ্রতিনিধিদের কথা হয়েছে। তার সবাই সভায় উপস্থিত থাকবে এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরে নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়নের স্বার্থে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাশের এটা প্রথম বাজেট ছিলো। উপজেলার মাসিক সভায় ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট বাতিল হয়ে গেলো। ভাইসা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত থাকলে এই বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ছোট ছোট কালভার্ট ও জরুরী কিছু টিউবওয়েল বসানোর খাদে ব্যবহার করা হতো। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তাদের অনুপস্থিতির কারণে এই বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। এবিষয় বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কোনো দায়ভার নেই। ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানগন উপস্থিত থাকলে সকলের সাথে পরামর্শ করে এবং তাদের স্বাক্ষরিত প্রকল্পে এই টাকা ব্যবহার করা হতো। যেহেতু তারা অনুপস্থিত ছিলেন সুতরাং এখানে আমাদের কোনো দায়ভার নেই।