পিএইচডি বিহীন লোককে সদস্য সচিব করে কমিটি
অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাচ্ছে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা
দেশের ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এবার সেই অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাচ্ছে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোন নির্দেশনা দিলেও তা আমলে নেয়না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবুও তারা পিএইচডি ডিগ্রির সুযোগ পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিক পক্ষ এতোটাই শক্তিশালী যে, তাদের চোখ রাঙানির ভয়ে মাথা নত করেই চলে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে দেখা যায় ঢাকার আশুলিয়ায় তৃতীয় শ্রেণির একটি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভুয়া উপাচার্য যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক এবং রেজিস্টার জামাত নেতা ফারুক আহমেদ সনদ জালিয়াতি করে বিক্রি করতো। সনদ বিক্রির প্রমাণ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় বলেছিলো রেজিস্ট্রার ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জামাত নেতা ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি যুদ্ধপরাধী মাওলানা সাদেক। তিন-চার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রনালয় ওই বিষয়ে আর তদারকি করছে না। মন্ত্রণালয় এমনভাবে চুপ হয়ে আছে যেন এশিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে তারা বড় এক বস্তা টাকা নিয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ দৈনিক সকালের সময়ের সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির সুযোগ তার ক্ষমতায়নে হবে না। তিনি বলছেন বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেসব প্রস্তাব তিনি নাকচ করে দিয়ে বলছেন প্রশ্নই ওঠেনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েকে পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষমতা দেয়ার। কমিশন চেয়ারম্যানের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সুত্র বলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়েছে কমিশনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার (৪ জুন) ছয় সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করে কমিশন। ইউজিসির এ কমিটি, দেশের বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত উচ্চশিক্ষালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে, কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউজিসির সদস্য ড. অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক পিএইচডি বিহীন লোক শরিফুল ইসলামকে। এছাড়াও কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান, উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী, গ্রিন ইউনিভার্সিটির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ এবং ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক পিএইচডি ডিগ্রি বিহীন ওমর ফারুখ। ওমর ফারুক বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী এবং অভিযোগ আছে তিনি জামাত শিবির দ্বারা প্রতিপালিত।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করবে; কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপরেট করতে পারবে এবং কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিন ও ক্লাস্টারের উপযোগী পিএইচডি কোর্সওয়ার্ক বা রিসার্চ মেথডোলজি-সংক্রান্ত কারিকুলাম বা মডিউলগুলো প্রণয়ন করতে পারবে।
কমিশনের বেসরকারি বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুককের কাছে সকালের সময় জানতে চেয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতি করে বিক্রি করছে এমন অভিযোগের প্রমাণ শিক্ষা মন্ত্রনালয় পাওয়ার পরেও কিসের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেবে? টাকার বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করার সুযোগ পাবে কি-না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? ওমর ফারুক বলছেন কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কিছু অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়টি এখনো ফাইনাল অনুমোদন পর্যায়ে নেই। মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দিয়েছে তাই কিছু কাজ শুরু হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম