১০ সম্মেলনে ৪৪ বছর সভাপতি
ভারতীয় উপমহাদেশের বড় নেতা শেখ হাসিনা
মাত্র ১দিন পরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্লাটিনাম জয়ন্তী উৎযাপন করবে। কি আছে সেই আয়োজনে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি কি শতবর্ষ উৎযাপন করতে পারবে! দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চাইছে শেখ হাসিনা আমৃত্যু পার্টির সভাপতি থাকবেন। পাশাপাশি তারা জনগণের সমর্থন নিয়ে আমৃত্যু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান। ওয়ান ইলেভেনের পরে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব নেয়ার পরে ওই সম্মেলন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্টোলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকাসহ ১০টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় ওই সম্মেলন ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সম্মেলন। সম্মেলনটি পরিচালনা করেছিলেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। শেখ হাসিনার একসময়ের বিশেষ সহকারী হাছান মাহমুদ বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বর্তমান ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আন্তর্জাতিক মানের সেই রাজনৈতিক সম্মেলনে বিশ্বের নানাদেশ থেকে আসা নেতারা বক্তব্য দিয়ে বলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় নেতা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় নেতা বলার পরে আট বছর কেটে গেছে। এতোবছরের বিশ্ব রাজনীতির উত্থানপতন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সেই শেখ হাসিনা এখন ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির একমাত্র নিয়ন্ত্রক। নেতৃত্ব এবং চৌকস সাংগঠনিক গুণাবলির কিছু কিছু দিকদিয়ে তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও ছাড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। শেখ হাসিনার পিতাকে নিয়ে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন "আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় এই মানুষটি হিমালয়"। ফিদেল কাস্ত্রো কিউবা প্রজাতন্ত্রের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছিলেন একজন জগৎখ্যাত বিপ্লবী ও একজন মুক্তিদাতা। বিশ্বনেতাদের কাছে আজ শেখ হাসিনার প্রসংশা শোনা যায়। মায়ানমার থেকে আসা নির্যাতন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পরে বিশ্ব গণমাধ্যম শেখ হাসিনা মানবতার মা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন।
টানা সাড়ে ১৫ বছরসহ মোট প্রায় ২১ বছরই সরকার প্রধানের আসনে আছেন ভারতীয় উপমহাদেশের শক্তিধর এই রাজনৈতিক নেতা। পিতা হত্যার পরে দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধুর এই জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পরে একে একে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দলের সূচনা হলেও কিছু অংকুরেই বিনাশ কিছু বিভাজন হয়ে খন্ড খন্ড অবস্থায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। মহাসাগরে চুনোপুঁটির মতো হামাগুড়ি দিয়ে চলা বাংলাদেশের বিকল্প দলগুলোর রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও তা সাধারণ মানুষের নিকট হাস্যরসের খোঁড়াক। তাই মুক্তিযুদ্ধের শক্তিধর রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের খুব একটা গুরুত্ব নেই।
ছয় মাস আগে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ওই ইশতেহারের প্রধান শ্লোগান ছিলো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। ইশতেহারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা-সহ মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত তিন মেয়াদে যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এখনও কিছু কাজ অব্যাহত আছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আবারও বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের শান্তি ও উন্নয়ন উপহার দিবো।" নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা। তার আগে ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল ক্ষমতাসীন দল। সেই ইশতেহারেও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিল তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত ইশতেহারে আওয়ামী লীগ মোট ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা ৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসলে বেশকিছু কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেগুলো হলো: ১. জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট দেশ হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ গঠনের মাধ্যমেই মূলত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলা হবে। ২. রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করা হবে। ৩. আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোন চেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে প্রোপাগান্ডা এবং মিসরিপ্রেজেন্টেশন রয়েছে, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারতিা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। ৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার ধারা অব্যাহত রাখা হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং মিথ্যা মামলা রোধ করা হবে। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এই আইনের অপব্যবহার রোধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। ৪. জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে। দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান থাকবে। দ্রব্যমূল্যেরে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে। ৫. জনবান্ধব, স্মার্ট ও আধুনিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা হবে। বাহিনীগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। সীমান্তে সড়ক নির্মাণ করা হবে, যাতে করে সীমান্ত সুরক্ষাসহ সীমান্তের যেকোন ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। ৬. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের লক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল এবং দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে। ৭. সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন নিশ্চিত করা হবে। ৮. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও সম্প্রসারণ করা হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে অধিকতর পরিবেশবান্ধব করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ-সহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা ও স্বায়ত্তশাসনের পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হবে। ৯. বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্জিত হবে। তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। ১০. অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারিখাতের গুরুত্ব অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া যুক্তিসংগত ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়গের সুযোগ ব্যবহার করা হবে। ১১. আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন করা হবে। পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতায় পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ১২. ঋণ-কর-বিল খেলাপি এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। খেলাপি ঋণ বারবার পুন:তফসিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ব্যবস্থাপনা ও ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখা হবে। ১৩. বাংলাদেশে ২০২৮ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। একই সাথে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য সহনয়ি পর্যায়ে নামিয়ে আনার হবে। ১৪. প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ১৫. কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ১৬. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষিতে সহায়তা ও ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। ১৭. শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে। ১৮. দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ১৯. শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে। ২০. মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করা হবে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। দেশেের সকল নাগরিক যেন একই রকম স্বাস্থ্যসেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। ২১. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গতে তোলা এবং পানি সম্পদ রক্ষায় ইতিমধ্যেই যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। ২২. বাংলাদেশের পাশাপাশি এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আওয়ামী লীগ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম দলগুলোর একটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ দেশের যত অর্জন আর ইতিহাস, সব সফলতার বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে দলটির নাম। অসাম্প্রদায়িক আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুগে যুগে বহু নেতা তৈরি হয়েছে এই দলে। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নেতাকে ধীরে ধীরে দল পরিচালনায় অন্তর্ভূক্ত করে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। এই সম্মেলনে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যনির্বাহী কমিটি পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছেন শত শত নেতা। তবে এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন সাত জন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ দশবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুইবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার নির্বাচিত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নয় জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এ ছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, ওবায়দুল কাদের তিনবার। আবদুর রাজ্জাক এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সব ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।
পাকিস্তান আমল
আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় সম্মেলনে প্রতিনিধি ছিল প্রায় ৩০০জন। উদ্বোধনী ভাষণ দেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পরে প্রতিনিধিদের সমর্থনে ৪০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৩ সালের ৩ থেকে ৫ জুলাই মুকুল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনেও সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী। আর দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি পান শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর রূপমহল সিনেমা হলে তৃতীয় সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় দলের। দলের নাম থেকে একটি ধর্মের নাম বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। এ সম্মেলনে প্রথমকবারের মত পাঁচজন নারীও অংশ নেন। এ সম্মেলন পুনরায় নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৭ সালে চতুর্থ সম্মেলনের আগে দলের মধ্যে বিভক্তির পর আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন মাওলানা ভাসানী। ১৩ জুন আরমানিটোলার নিউ পিচকার হাউজে এবং পরদিন গুলিস্তান সিমেনা হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রতিনিধি ছিল আটশত জন। এ প্রতিনিধিদের ভোটে মাওলানা আব্দুর রশীন তর্কবাগীশ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দলের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। ৬ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল প্রায় একহাজার। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন মাওলানা তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৬৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনটি ছিল আওয়ামী লীগের জন্য ঐতিহাসিক একটি সম্মেলন। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা দলীয় ফোরামে পাস হয়। ১৮ থেকে ২০ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। আর প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমেদ। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৪৩ জন।
১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে আটক তখন অনুষ্ঠিত হয় দলের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন। ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রায় এক হাজার চারশত ৫৩ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এতে অংশ নেন। এতে আবার শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালের উত্তাল সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ছয় দফা ও ১১ দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। ৭০ সালের ৪ থেকে ৫ জুন হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ছিল এক হাজার ১৩৮ জন। কাউন্সিলরদের ভোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশে সম্মেলন
১৯৭২ সালের ৭ থেকে ৮ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম এবং সব মিলিয়ে নবম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১১২, সার্কিট হাউজ রোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের পুর্নগঠন এবং পুর্নবাসনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য শপথ নিয়ে এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধুর সভাপতির পদ ত্যাগ
আওয়ামী লীগের ১০ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১১২ সার্কিট হাউজ রোডে দলীয় কারর্যলয়ে সামনে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে কাউন্সিলর ছিল এক হাজার ৫৬৬ জন এবং ডেলিগেট ছিল তিন হাজার। এ সম্মেলনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতসহ ২২টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তখন এ এইচ এম কামরুজ্জামান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারের নিহত হওয়ার তৎকালীন সামরিক সরকারের ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। এমন একটি পরিস্থিতিতে ১৯৭৭ সালের ৩ থেকে ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে দলের ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাউন্সিলর ছিলেন প্রায় একহাজার ৪০০ জন এবং ডেলিগেটও সমসংখ্যক ছিল। এতে দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। এর পরের বছর ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১২ তম জাতীয় সম্মেলন। ৩ থেকে ৫ মার্চ হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে প্রায় এক হাজার ৫০০ কাউন্সিলর এবং সমসংখ্যক ডেলিগেট নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলনটি। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক।
শেখ হাসিনা যুগ
১৯৮১ সালের ১৩ তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দলীয় ঐক্যধরে রাখার জন্য এ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনা হয় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। ৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল তিন হাজার ৮৮৪ জন। সভায় শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮২ সালে আব্দুর রাজ্জাক দলত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ১৪ তম জাতীয় সম্মেলন। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল প্রায় চার হাজার। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৯২ সালের ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের ১৫ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই থেকে বাড়িয়ে তিন বছর মেয়াদী করা হয়। এতে কাউন্সিলর ছিল প্রায় দুই হাজার ৫০০ ও ডেলিগেটও ছিল সম সংখ্যক। এতে শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯৭ সালের অনুষ্ঠিত ১৬ তম জাতীয় সম্মেলন আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ গুরুত্বের। কারণ প্রায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সম্মেলন। ৬ থেকে ৭ মে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এত কাউন্সিলে কাউন্সিলর ছিল প্রায় দুই হাজার ৫১৬ এবং ডেলিগেটও ছিল সমসংখ্যক। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও জিল্লুর রহমান।
২০০২ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় দলের ১৭ তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আব্দুল জলিল।
২০০৭ সালের পট পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৮ তম জাতীয় সম্মেলন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলের নেতৃত্বে বেশকিছু পরিবর্তন হয়। দল থেকে বাদ পড়েন একএগারো সময়ের বিতর্কিতরা। এ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
২০১২ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৯তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুর্ননির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপরে ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ধারাবাহিক ভাবে সভাপতি শেখ হাসিনা ওলেও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সাধারণ সম্পাদক দ্বায়িত্ব পালনকালে ওবায়দুল কাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে ফিরলেও পুরপুরি সুস্থ হয়নি। তবুও টানা তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন তিনিই। তার দ্বায়িত্বকালে প্রথম ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান ছিলো, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।
বাংলাদেশে সর্বশেষ নির্দলীয় সরকারের তত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশ নিয়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ স্লোগানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তখন দলটির এই ইশতেহার রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলেছিল এবং নির্বাচনেও তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। এরমধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত ইশতেহারে দলটির স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে চলেছে আওয়ামী লীগ।
এমএসএম / Aminur