ঢাকা শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

এক সপ্তাহে প্রায় শতাধিক রাসেলস ভাইপার উদ্ধার, আতঙ্কে শরীয়তপুরবাসী


কাওছার মাহমুদ রাফিন, শরীয়তপুর photo কাওছার মাহমুদ রাফিন, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১-৭-২০২৪ দুপুর ৩:৩৫

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক সারাদেশের সঙ্গে  প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই শরীয়তপুরেও । তবে এ জেলায় আতঙ্কের মাত্রা যেন একটু বেশিই। কেননা গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বসত-বাড়ি, ফসলী জমি ও নদী-নালা থেকে প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে একাধিক বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ। গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১০০ টির ও বেশি  রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মেরেছে আতঙ্কিত জনতা। কেউ আবার রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করে তুলে দিয়েছেন স্নেক রেসকিউ টিমের হাতে। এভাবে প্রতিদিন রাসেলস ভাইপার সাপ ধরা পড়ায় ছোট বড় সকলের মাঝে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আতঙ্ক।

রবিবার   (৩০ জুন) সকাল পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে প্রাপ্ত তথ্যের হিসেব অনুযায়ী শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জাজিরা ও গোসাইরহাটসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে এসব রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার সাপ বিলুপ্ত ঘোষণা করার পরে ২০২০ সালের ১০ জুলাই শরীয়তপুরের পদ্মা ও মেঘনা বেষ্টিত চরাঞ্চল কাঁচিকাঁটা ইউনিয়নের মাথাভাঙা গ্রামের এক জেলের মাছ ধরার ফাঁদে জেলায় সর্বপ্রথম রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পরে সাপটি স্থানীয় সাপুড়ে মিনু ঢালী সংরক্ষণ করে রাখার কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার কর্তৃপক্ষ এসে সাপটি গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যায়। এরপর জেলায় কয়েক বছর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা না মিললেও গত দেড় মাসে সখিপুরের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই একাধিক স্থানে দেখা মিলছে বিষধর এই সাপটির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রকল্পের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্য মতে বর্তমানে দেশের ২৭ টি জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ রয়েছে। সরকারি হিসেব মতে ২৭ জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ থাকলেও উদ্ধার হওয়ার প্রাপ্ত সংখ্যার হিসেব অনুযায়ী সংখ্যার পরিমাণ একটু বেশিই যেন শরীয়তপুরে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবছর শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, গোসাইরহাট ও নড়িয়া উপজেলায় রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের দেখা মিলেছে। তবে এখন পর্যন্ত শরীয়তপুর সদর ও ডামুড্যা উপজেলায় রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবের খবর পাওয়া যায়নি। গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১০০ টি বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে  ৮০ টিরও বেশি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধারের ঘটনাস্থলসহ বিস্তারিত জানা গেছে। গত এক সপ্তাহে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ২৭ টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয়রা। এরমধ্যে উপজেলার বিভিন্নস্থানে ৮ টিসহ সখিপুরের উত্তর ও দক্ষিণ তারাবুনিয়া এলাকায় ৫ টি, চরসেনসাস এলাকায় ৪ টি, চরভাগায় ৬ টি, কাঁচিকাঁটায় ৩ টি ও সখিপুর ইউনিয়ন এলাকা থেকে ২ টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের পাঁচু খার কান্দি, কুন্ডেরচর এলাকার ফসলী মাঠ, মাঝিরচর, পালেরচরের মুন্সী বাড়ি, পূর্ব নাওডোবা এলাকার পৈলান মোল্লার কান্দি এলাকা থেকে স্থানীয়রা বাচ্চাসহ ৪৯ টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মেরেছে। এছাড়াও জব্বার আলী আকন কান্দি গ্রামের সোহেল মাদবরসহ কয়েকজন একটি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করে স্নেক রেসকিউ টিমের কাছে তুলে দিয়েছেন। গোসাইরহাট উপজেলার সিদ্দিক ঢালীর কান্দিসহ সাবেক চেয়ারম্যান শফি হাওলাদারের বাড়ির কাছে মিলিয়ে ২ টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে গত এক সপ্তাহে। এছাড়াও নড়িয়া উপজেলার নড়িয়া বাজার ও ব্রিজ এলাকা থেকে গত এক সপ্তাহে ২ টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বসত বাড়িসহ ফসলী জমির মাঠ থেকে বিষধর সাপ উদ্ধার হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে। স্থানীয় সচেতনমহল দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কম্পেলেক্স সমূহে অ্যান্টিভেনমসহ পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছে।

সাপে কাঁটার পরে আতঙ্কিত না হয়ে ওঝা বা ফকিরের কাছে না গিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দুঃসংবাদ মুক্ত থাকা যাবে বলে দাবি সচেতন মহলের।

শরীয়তপুরের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সখিপুরে রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা বেশি। এর অন্যতম কারণ পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চল। প্রায় এক মাস আগেও সখিপুর বাজারের এক ব্যবসায়ীর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষ সাপে কাঁটলে ওঝার কাছে যায় বলেই এমন মৃত্যু হয়। সাপের দংশন থেকে রক্ষা পেতে সচেতন হয়ে চলাফেরা ও সাপে কাঁটলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা করার দাবি সচেতনদের। যেভাবে প্রতিদিন রাসেলস ভাইপার উদ্ধার হচ্ছে, এতে এলাকার ছোট-বড় সকলের আতঙ্ক প্রতিদিন বাড়ছে।

সাপুড়ে মিনু ঢালী শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই ছোট বড় আকারের রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করেন। তিনি ঢাকা ডেইলি ট্রাইবুনালকে বলেন, প্রতিদিন রাসেলস ভাইপার অন্যান্য সাপ ধরতেছি। এখনো আমি সখিপুরের এক বাড়িতে সাপ ধরতে এসেছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা হবে।

হঠাৎ করে এভাবে রাসেলস ভাইপার সাপ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে শরীয়তপুরের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন  বলেন, রাসেলস ভাইপার সাপ অন্যান্য সাপের তুলনায় খুব দ্রুত সাঁতার কাটে। সাপটির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ব্যবস্থাসহ বন ও নদী নালা ধ্বংস করার কারণেই সাপটি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ এর ৬ ধারা মতে রাসেলস ভাইপার সাপ ধরা ও মেরে ফেলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে নিধন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোথাও রাসেলস ভাইপার সাপসহ অন্যান্য সাপ নিধনের খবর পেলে আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ করছি।

পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে জানিয়ে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদী মোহাম্মদ শাহ পরাণ  বলেন, শরীয়তপুরের সকল স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে সাপে কাটার অ্যান্টিভেনম রয়েছে। রাসেলস ভাইপার সাপে কাঁটলে আতঙ্কিত না হয়ে ওঝা বা ফকির নয়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভব।

এমএসএম / এমএসএম

গাজীপুরে অন্তহীন অভিযোগে অভিভাবকদের তোপের মুখে প্রধান শিক্ষক!

ভূঞাপুরে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা

রাণীশংকৈলে পুলিশের ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

সবুজে ঢেকে যাক কালকিনি: পরিবেশ রক্ষায় আনসার-ভিডিপি’র অঙ্গীকার

অভয়নগরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

শ্রীমঙ্গলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১

তানোরে ব্যাক ডেট ও জালিয়াতি নিয়োগের তদন্তে হাজির হননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে স্কুল শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন

চট্টগ্রামে নেক্সাস ফেস্ট-২০২৫ সম্পন্ন

পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে: জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান

শ্রীপুরে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

অনার্সের খাতা দেখেন কলেজ হোস্টেলের গার্ড !

মানিকগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারী আটক