রশীদ-হারুনের কব্জায় তেজগাঁও কলেজ
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তেজগাঁও কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ ও তার ভাইা মো. হারুন অর রশিদ। দীর্ঘ ২২ বছর কলেজটিকে নিজেদের খেয়াল-খুশিমত চালিয়েছে দুই ভাই।সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর্শীর্বাদপুষ্ঠ থাকায় অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও তখন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ ১৯৯৮ সালে নিয়োগ পাওযার পর থেকে ধীরে ধীরে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন কলেজটি। একই সাথে করতে থাকেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি। পরে তিনি আওয়ামী লীগের তেজগাঁও থানার সভাপতি বনে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কলেজটিতে তিনি রামরাজত্ব কায়েম করেন।
একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করার কারণে তার সময় নিয়োগ দেয়া শতকরা ৯০ ভাগ লোক তার আত্মীয় ও দলীয়। কলেজটিতে তার দলীয় প্রভাব থাকায় যে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার অধিকাংশ দলীয় লোকজন দিয়ে করানো হয়েছে। আর তিনি এর ভাগও পেতেন। অনেক সময় কলেজের উন্নয়নের কাজ না করেও বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
প্রচারণা আছে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরানের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল অধ্যক্ষের। তারই ছত্রছায়ায় রাতে কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতো ইরান।কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আবদুর রহমান অধ্যক্ষ থাকা কালীন সময় অবৈধ ভাবে উপাধ্যক্ষকে চাকরিচ্যুত করে তার ভাই নন এমপিওভুক্ত মো.হারুন অর রশীদকে চাকরি প্রদান করেন। বেসরকারি শিক্ষানীতিনুযায়ী কোন নন এমপিও শিক্ষকে উপাধ্যক্ষ করা যায় না। কিন্তু অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ প্রভাব বিস্তার করে ভাইকে উপাধ্যক্ষ করেন। শুধু তাই নয় ২০২১ সালে তার চাকরি মেয়াদ শেষ হলে তার ভাই হারুন অর রশীদকে অধ্যক্ষ করে তার স্থালভিষিক্ত করেন এবং তিনি অবসরে যান।
তার ভাই হারুন অর রশীদের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগটি ছিল অবৈধ। এ জন্য ২৫ নভেম্বর ২০২১ সালে নুরুল হুদা নামে এক শারীরিক শিক্ষক মহামান্য হইকোর্টে মামলা করেন। পরে তাকে সন্ত্রাসী দ্বারা ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেজগাওঁ কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ অবৈধ ভাবে আছে। এ ব্যাপারে আমি মামলাও করেছিলাম। কিন্ত বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমাকে চাপ দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মো. হারুন অর রশীদ নিজ এলাকা জামালপুর জেলার সরীষাবাড়ী উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে দমানোর জন্য শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং ওই প্রস্তাবনার উপর গণভবনে আলোচনা হয়। সেখানে অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ অবৈধভাবে অর্থ উর্পাজন করে জামালপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে এমপি হন। তার ভাইয়ের নির্বাচনের ফান্ড কালেকশন করা হয়েছে কলেজের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে। আবার কলেজ থেকে বিশেষ বোনাস এর ব্যবস্থা করে শিক্ষকদের সান্তনা দেয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ দুর্নীতি। নাম না প্রকাশের শর্তে এক শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের আমল থেকে এখন পর্যন্ত কলেজে অনুষ্ঠিত চাকুরির পরীক্ষা গুলো হতে প্রাপ্ত টাকার কোন হিসাব দেয়া হয় না। আনুমানিক ৫০ ভাগ টাকা নিজ ফান্ডে রেখে অবশিষ্ট শিক্ষকদেরকে বন্টন করা হতো।এ বিষয় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও দুই ভাইয়ের কাউকেই পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এমএসএম / এমএসএম