ওরা জাল নকশায় কোটিপতি
রাজউকের সহকারী অথারাইজ অফিসার ও একজন ড্রাফটসম্যান বাড়ি নির্মাণ করার জন্য ভুয়া প্ল্যাণ বা নকশা করে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তারা এসব প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা থানার ২/৬৬, ফ্ল্যাট নম্বর ডি-১ এর ১০ নম্বর রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগির পরিচিত হাজী মো. সিয়াস উদ্দিন ঢালির মালিকানাধীন বাড্ডা মৌজার দক্ষিণন বাড্ডায় বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নেন। উক্ত জমির সিএস দাগ নং ১১০০/২৮৪৬, আর এস দান নং ১৩২৩, ২৩৪৩ এবং মহানগর সিটি দাগ নং ১২৭৫৬, মোট জমির ১২ কাঠা। উক্ত জায়গায় একটি বহুতল বাড়ি নির্মাণ করার বিষয়ে নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর নজরুল ইসলামের পরিচিত রাজউকের ড্রাফটসম্যন মো. আলমগীর কবির ও রাজউকের সহকারী অথরাইজড অফিসার সুরাত আলী রাসেল এর সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে হাজী মো. গিয়াস উদ্দিন ঢালীর জমিতে একটি ১৪ তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মান করার জন্য নকশা তৈরী করাসহ রাজউকের অনুমতিসহ সকল কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে গত ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বিকালে রাজউকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নজরুল ইসলামের বাসায় যান। সেখানে উক্ত জমির মালিকের সাথে পরামর্শ করে ১৪ তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মান করার জন্য নকশা এবং রাজউকের অনুমোদন করার জন্য আলোচনা করেন এবং যাবতীয় কাজের জন্য মোট ৭০ লাখ টাকা দাবি করেন মো. আলমগীর কবির ও সুরাত আলী রাসেল।
ভুক্তভোগি নজরুল ইসলাম সকালের সময়কে জানান, উক্ত রাজউকের ড্রাফটসম্যন ও অথারাইজড অফিসার তার দীর্ঘ দিনের পরিচিত ও বিশ^স্ত হওয়ায় তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে তিনটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি “ব্লিল্ডিং এর প্লান পাশের চুক্তিপত্র’ সম্পাদন করেন। এরপর তাদের কাজ করার জন্য লিখিত দায়িত্ব প্রদান করে প্রথমেই নগদ ৩ লাখ টাকার প্রদান করেন।
আর একটি সাদা কাগজে উক্ত টাকার প্রাপ্তি স্বীকারোক্তি হিসেবে মো. আলমগীর কবির স্বাক্ষর করেন। এছাড়া গত ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট হতে একই বছরের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭০ লাখ টাকা গ্রহন করে উল্লেখিত প্লটে ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করার জন্য রাজউকের প্লান পাশের নকশা ও অনুমোদনপত্র প্রদান করা হয়। এরপর অনুমোদনপত্র আর উক্ত জমির মালিক হাজী মো. গিয়াস উদ্দিন ঢালীকে প্রদান করা হয়।
সূত্র জানায়, রাজউকের উল্লেখিত দুই ব্যক্তি প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লেখিত নকশা পাশ ও অনুমোদনপত্র সৃজন করে এই ৭০ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এরপর উক্ত ভবন নির্মাণের নকশা পাশ মোতাবেক ভবন র্নিমাণের কাজ শুরু করার পূর্বে ভুক্তভোগি মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম উল্লেখিত নকশা ও অনুমোদন চেক করার জন্য রাজউকের প্রধান অফিসে যান। পরে সেখানে উক্ত কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারেন যে, উল্লেখিত কাগজপত্র অবৈধভাবে সৃজন করা বা নকল।
এরপর নজরুল ইসলাম রাজউকের উক্ত দুই ব্যক্তির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বিভিন্নভাবে তালবাহান করতে থাকেন। পরে তিনি উক্ত দুই ব্যক্তির নেওয়া ৭০ লাখ টাকা ফেরত দাবি করা হলে দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকেন। ভুক্তভোগি নজরুল ইসলাম জানান, রাজউকের এই দুই ব্যক্তি বিশ্বাস ভঙ্গ করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নকল নকশা বা প্লান পাশ করার কাগজপত্র তৈরি করতে রাজউকের অফিসারদের নকল সীল ও জাল স্বাক্ষর প্রদান করেছেন।
আর এই প্রতারণার মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছেন। টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে মিথ্যা মামলা এবং মেরে ফেলার জন্য প্রতারক আলমগীর কবির ও সুরাত আলী রাসেল হুমকি দিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগি মো. নজরুল ইসলাম রাজধানীর বাড্ডা থানায় গত ১ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে এজাহার দায়ের করেছেন। আর গত ১৯ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজউকের ড্রাফটসম্যন মো. আলমগীর কবির ও রাজউকের জোন-৬ এর অথারাইজড অফিসার সুরাত আলী রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মাত্র ১১ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে সকালের সময়কে জানিয়েছেন।
Aminur / Aminur