মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরও শহীদের স্বীকৃতি পাননি নাজিম উদ্দিন
১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক মানচিত্র অর্জনের গৌরবের দাবিদার বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবং যুদ্ধকালীন পাক হানাদার বাহিনীদের হাতে নির্মমভাবে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদগণ। যুদ্ধক্ষেত্রে জীবিত থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত এবং নিজেরাও বেঁচে থাকার সুবাদে দৃশ্যমান দেশের মাটি ও মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্যবান হিসেবে সমাজ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে একজন বীর সেনা হিসেবে সন্মানিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
বিষয়টি খুবই ভাললাগার, কিন্ত কোন কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পাক হানাদার বাহিনীদের হাতে নির্মম নির্যাতনে হত্যা শিকার হওয়ার পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পেতে ভোগান্তি হলে জাতির জন্য কষ্টকর।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হামিদপুর ক্যাম্পপাড়ার মৃত পরশ মণ্ডলের সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিনের সন্তানরা এখনো পিতার প্রকৃত সম্মানের অধিকার থেকে বঞ্চিত বলে জানান তার সন্তান মো. তোতা মিয়া।
বাংলাদেশের স্বাধীনতারর ৫৩ বছর পর তার সন্তানদের পক্ষ থেকে তোতা মিয়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সত্যের জয় হবে- এই বিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিশ্বাস, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
তোতা মিয়া তার পিতার মর্যাদা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার পিতা। প্রথমে মুজাহিদ হিসেবে চাকরি করতেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌগাছা থানার বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্রভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্ত ওই সময় আমার ছোট ভাই ওয়াজেদের (৭ মাসের শিশু) অসুস্থতার কথা জানতে পেরে গোপনে বাসায় আসার পথে রাজাকারদের চোখে পড়েন। পরবর্তীতে রাজাকাররা পাক হানাদার বাহিনীকে খবর দিলে তৎকালীন মহেশপুর হাসপাতাল ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। ক্যাম্পটি তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীদের গোপন আস্তনা ও নির্যাতন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিনকে পাক বাহিনী অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলে বলে জানা যায়। তাকে হাসপাতালের পেছনে গণকবরে কবর দেয়ার বিষয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকের মাধ্যমে জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে তৎকালীন সহ-মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম থানা কমান্ডার ফয়জুর রহমান চৌধুরী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাজিম উদ্দিনের যুদ্ধাকালীন সময়ের প্রত্যয়নপত্র প্রদান এবং যুদ্ধাকালীন মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার বিষটি নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা কমান্ডার মো. আবু তালেব বিশ্বাস নাজিম উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সরকারিভাবে গেজেটে তার নাম তালিকাভুক্ত করার দাবি জানান উপজেলা কমান্ডার।
অপর একটি হলফনামায় কমান্ডার কাজী আব্দুস সাত্তার ও কমান্ডার ওয়াহেদ আলী শহীদ নাজিম উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে অবদান এবং যুদ্ধের একটি সময়ে পাক হানাদারদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে স্বীকার করেন। তারা আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ২৫ মার্চের পর মো. নাজিম উদ্দিন মুজাহিদ সদস্য থাকাকালীন চৌগাছার অন্তর্গত মাসিলা বিওপি ক্যাম্পে বেঙ্গল রেজিমেন্টের একমাত্র অফিসার মেজর হাফিজের সঙ্গে একই ক্যাম্পে ছিলেন।
এছাড়া ড. মুনতাসীর মামুনের সম্পাদনায় গণহত্যা ও মুক্তিযোদ্ধা নামক একটি বইয়ে শহীদ নাজিম উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়ে উল্লেখ করে লেখেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শহীদ নাজিম উদ্দিন মুজাহিদ বাহিনীর একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন বলে। এছাড়া ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং প্রথমে অস্ত্র নিয়ে মাশিলা ক্যাম্পে যান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে তিনি সন্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের সত্যতা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তিনি মহেশপুরে ফিরে আসেন সাত মাস বয়সী সন্তান ওয়াজেদ আলীর অসুস্থতার কথা শুনে। সেখানেই পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তৎকালীন রাজাকারদের তথ্যের ভিত্তিতে ধরা পড়তে হয় এবং তাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল। সে সময় গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ নামক বই-এর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ১৩ নম্বরে নাজিম উদ্দিনের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়।
শহীদ নাজিম উদ্দিনের এই অধিকার পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে তার সন্তান মো. তোতা মিয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ৩১/০৫/১৭ ইং তারিখের সুপারিশকৃত আবেদনে তৎকালীন মহেশপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিলেও কোনো অগ্রগতির দৃষ্টান্ত পাননি ভুক্তভোগী শহীদ নাজিম উদ্দিনের সন্তানরা।
এ বিষয়ে তার (শহীদ নাজিম উদ্দিনের) সন্তান মো. তোতা মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যুদ্ধকালীন নিহত হওয়ার সকল তথ্য সঠিক হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ বিভিন্নভাবে উপর মহলে নিষেধ করে রাখায় বিভিন্ন সাক্ষী ও তথ্যসংবলিত কাগজপত্র পাঠালেও সমমনা রাজনীতির সমর্থন না করায় বাধা দেন। তবে তিনি আশাবাদী, সঠিক যাচাই-বাছাই করলে আমার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্মান পাবেন।
ভুক্তভোগী মো. তোতা মিয়া বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু অনেক সাক্ষী-প্রমাণ থাকলেও বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলের আওয়ামী লীগের এমপির সুপারিশ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তিনি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের অধীনে যুদ্ধ করায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন মুনিরার কাছে দীর্ঘ কালক্ষেপণ হওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এই সময়ের না। তাই নতুনভাবে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর পুনরায় আবেদন করলে তার নির্দেশক্রমে আমাকে তদন্তভার দিলে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
এমএসএম / জামান
বড়লেখায় হাদীর রুহের মাগফিরাত কামনায় জামায়াতে ইসলামীর দোয়া মাহফিল
দেবিদ্বার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রধান শিক্ষককে বহিস্কারের অভিযোগ
গজারিয়ায় দিনে দুপুরে এক যুবককে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
চাঁদপুরে শহিদ হাদির গায়েবানা জানাজায় ছাত্র-জনতার ঢল
হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার উদ্যােগের মহা আচরিয়া গুরু পূজা অনুষ্ঠিত
ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদে সমাজসেবা অফিস সহায়কের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কাউনিয়ায় শোকাবহ পরিবেশে ওসমান হাদীর গাইবানা জানাজা সম্পন্ন
আব্দুল আলী ও হালিবন নেছা ফাউন্ডেশন কর্তৃক মুকসুদপুরের ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হলো মেধা বৃত্তি পরীক্ষা
শেরপুরের নকলায় নিখোঁজের চার দিন পর শিশু রেশমীর লাশ উদ্ধার
ভূরুঙ্গামারীতে শরীফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
তানোর কোয়েল পূর্বপাড়া গ্রামের স্বপন আলী অবৈধ মটার স্হাপন জনগণের মধ্যে চরম উত্তেজনা
বড়লেখায় আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে "দারুল হিকমাহ আইডিয়াল দাখিল মাদরাসা"র উদ্বোধন
রায়গঞ্জে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত
Link Copied