বেড়েই চলছে চাল ও ডিমের দাম

চালের দাম  বেড়েই চলছে। গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে এখনো তা বেড়েই চলেছে। শনিবার ( ১৪ সেপ্টেম্বর)  মাগুরা শহরের পুরাতন বাজার, নতুন বাজার, ভায়না মোড় বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

চালের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারিভাবে চালের মূল্য নির্ধারণের জন্য বাজার মনিটরিং করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকা সত্ত্বেও এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান চালের দাম বাড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অজুহাত দাঁড় করিয়েয়েছেন চালের আড়তদাররা। তারা বলছেন, দেশের ১৪ জেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বিপুল পরিমাণ চাল লাগায় চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। ফলে ৫০ কেজি চালের প্রতি বস্তায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পুরান বাজার ও আশেপাশের কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা, মাঝারি মানের বিআর ২৮-২৯ নম্বর চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। এছাড়াও মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, হাইব্রিড মোটা ৫৬ টাকা। এসব চালের মূল্য মাস দেড়েক আগেও কেজি প্রতি দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত কম ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে কচুর মুখীর কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শীতকালীন সবজি

ফুলকপি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা,  লেবুর হালি ১০ থেকে ১৫ টাকা,  কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক প্রতি কেজি ৩০ টাকা এবং ডাঁটাশাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে মাগুরার বাজারগুলোতে চড়াদামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের বাজার

দেশের ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ভারত থেকে ডিম আমদানি করে সরকার। এমনকি পর্যায়ক্রমে আরো আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। কিন্তু ডিম আমদানির পরও দেশের বাজারে এ পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, বরং সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

মাগুরা শহরের বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরো ৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগির ডিম। মাগুরা শহরের পুলিশ লাইনস কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা শিমুল বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ-মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা।

এদিকে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খামার মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে ৪ কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা লসের মুখে পড়বেন। দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরো বড় আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।