কুমিল্লা ও ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে আনসার মহাপরিচালকের আমন ধানের চারা বিতরণ

কুমিল্লা ও ফেনী জেলায় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আমন ধানের চারা বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, এসজিপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। চারা সংগ্রহের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন  কুমিল্লা রেঞ্জ কমান্ডার, পরিচালক আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।

পরে মহাপরিচালক ফুলগাজী উপজেলা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে ২০০ জন কৃষক এবং পরশুরাম পাইলট হাই স্কুল মাঠে পরশুরাম উপজেলার ১০০ জন কৃষকের মাঝে ধানের চারা বিতরণ করেন।

দুপুরে তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালবাগ রওশন আশরাফ উচ্চ বিদ‌্যালয় মাঠে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ জন কৃষকের মাঝে ধানের চারা বিতরণ করেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অপেক্ষাকৃত নিম্নআয়ের কৃষকদের দুর্দশা দূরীকরণে সময়োচিত এ চারা বিতরণ পদক্ষেপ আসন্ন আমন মৌসুমে কিছুটা হলেও স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করবে। 

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা যখন বীজতলা তৈরির জমির অভাবে বিপর্যস্ত, তখন আনসার বাহিনীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বীজতলা হতে চারা উৎপাদন করে ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে মোট ১০০ একর জমি আমন চাষের আওতায় নিয়ে আসে। তবে পর্যায়ক্রমে আরো বেশিসংখ্যক কৃষককে পুনর্বাসনের আওতায় আনার পরিকল্পনাও বাহিনীটির রয়েছে। তাছাড়া ভালো ফলন নিশ্চিত করতে আনসার বাহিনীর পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে সবজি চাষের উপকরণও আগামীতে বিতরণ করা হবে। 

আকস্মিক বন্যায় কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এসব গৃহহীনকে ঘর করে দেয়াসহ শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহ নির্মাণের উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। 

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী। সমগ্র দেশের গ্রামে গ্রামে এই বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা বিস্তৃত হয়ে বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সেবায় কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, এবারকার আকস্মিক বন্যায়ও এই বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করেছেন। ত্রাণ বিতরণকালে ওয়াহিদের রহমান নামে একজন আনসার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, যার পরিবারকে বাহিনীর পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান ইতোমধ্যেই প্রদান করা হয়েছে। 

যেহেতু আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সারাদেশে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে, তাই যে কোনো দুর্যোগ কিংবা দুর্যোগপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এই বাহিনী কম সময়ে সুশৃঙ্খলভাবে যে কোনো সেবা কিংবা সহযোগিতা পৌঁছে দিতে পারে। এবারকার বন্যায় কৃষকদের বীজতলার জমি প্লাবিত হওয়ায় ধান চাষ নিয়ে বিরাট অনিশ্চয়তায় ছিলেন কৃষকগণ। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ পরিস্থিতি অনুধাবন করে পূর্ব থেকেই আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট জেলা কমান্ড্যান্টগণকে যেসব অঞ্চল প্লাবিত হয়নি সেসব এলাকায় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মাধ্যমে ধানের বীজতলা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ফলশ্রুতিতে বন্যাপরবর্তী সময়ে কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি আমন ধানের চারা তুলে দিতে পেরেছেন।

আমন ধানের চারা বিতরণ সম্পন্নের পর তিনি কুমিল্লা রেঞ্জ ও জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। মধ্যাহ্নভোজের পর মহাপরিচালক কুমিল্লা রেঞ্জের অধীন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে রেঞ্জ কার্যালয় প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ ও পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেন। 

উল্লেখ্য, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। দেশের অগণিত তরুণ-তরুণীকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে মানবসম্পদে পরিণত করছে এই বাহিনী। যে কোনো সঙ্কটে সর্বাগ্রে এগিয়ে এসে জনজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন বাহিনীর তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবী সদস্য-সদস্যাগণ। বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।