নাঙ্গলকোট বাঙ্গড্ডা নুরপুরের সোনা জাফর স্বর্ণের ছোঁয়ায় সম্পদের চূড়ায়
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাংগড্ডা
ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের.হাবিবুব রহমান (হাবন) ২০ বছর আগে ছিলেন দিন মজুর । একটা সময় মানুষের কামলা খেটে চার ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার কাটতো তার । বর্তমানে এক ছেলে জালাল এলাকায় মুদি দোকান করে, একজন খোশেদ চট্রগ্রাম রেয়াজ উদ্দিন বাজারে ব্যবসা মার্কেট দেখাশোনা করে, তিন ছেলে খোরশেদ, জালাল, বিল্লাল, ডুবাইতে হোটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান জগতে ঢুকে জাদুর চেরাগের ছোঁয়ায় পৌঁছে যান সম্পদের চূড়ায়।
বাড়ি, গাড়ি,নারী, জায়গা জমি– কী নেই তাদের? তাছাড়া গুনধর ছেলে জাফরের ধাপটে কাঁপে মাধাগাস্কার হতে দুবাই এবং বাংলাদেশ পর্যন্ত। আন্ডারওয়ার্ল্ডে আর বড় বড় স্বর্ন চোরা কারবারিদের মধ্যে তার নাম ১১ তম তালিকায় রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার এজেন্টদের মধ্যে কয়েকজন র্যাব এর হাতে নাতে ধরাও পড়েছে। এ নিয়ে মামলা চলমান। নিউজ প্রচার হয়েছে জাতীয় কয়েকটি চ্যানেলে। কিন্তু তার পাশে রাজনৈতিক নেতাদের পদচারনায় বারবার আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লায় জাফরের মতো আরও কয়েকজন ‘ধনকুবের’ স্বর্ণ চোরাকারবারির অর্থ-সম্পদের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির তদন্তের পর স্বর্ণ চোরাচালানে নেমে বিপুল অর্থসম্পদ বানানো এমন কয়েকজন কারবারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্চে প্রশাসন। এরই মধ্যে এ চক্রের অর্থ-সম্পদ জব্দ করার জন্য কাজ করছে গোয়েন্দারা ।
সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শুধু.... এক পরিবারেই জাফরের নামে বে-নামে এলাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে আলেয়া মার্কেট, রয়েছে একটি দুইতলা বাড়ি, যার মুল্য ৩ কোটি টাকা। একই এলাকায় নিজ পুরাতন বাড়ির পাশে গড়ে উঠছে নান্দনিক বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার বর্তমান মুল্য ৫ কোটি টাকা । পুরাতন বাড়ির মুল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। মুন্সিরহাট বাজারের ১২ শতক জায়গার উপর গড়ে তুলেছেন জাফর টাওয়ার নামে ১০ তলা নান্দনিক বিলাসবহুল মার্কেট যার মুল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা, এর চিলেকোঠায় রয়েছে আয়নাঘর নামক নামক টর্চার সেল এবং মাদকের আখড়া চলতো নারী নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ। এই আয়না ঘরে সাধারন মানুষকে এনে জিম্মি করে টর্চার করে জোর করে লিখে নেওয়া হতো জমি জমা , হাতিয়ে নেওয়া হতো জানের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা।
তেমনই এক ভোক্তভোগি বাংগড্ডা এলাকার মোঃ হারুন জানান, মুন্সির হাট বাজারে ব্রাক অফিসের অপজিট পাশে আমার নামে সাড়ে তিন শতক দোকানের প্লট ছিলো, যার বতর্মান মুল্য ৬০ লাখ টাকা। এই জাফর এবং মাহফুজ চেয়ারম্যান এর ভাই খোকা আমাকে জাফর টাওয়ারের চিলেকোটায় ডেকে জোর করে এই জায়গাটা লিখে নেয়।আমি বিক্রি করবো না বললে আমাকে অনেক মারধর করে পরে আমাকে আটাশ লাখ টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়, তখন সে জায়গায় মুল্য ছিলো প্রায় ষাট লাখ । এবং বলে আর যেন কোন দিন এই মুন্সির হাট বাজারে না দেখি। সেই টর্সারসেলে আরো যাদের নির্যাতন করা হয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে যানান এই কর্মকর্তা। এ ছাড়া ঢাকার টিকাটুলি কাদের সপিং মল ভবনে ৫ম তলায় রয়েছে ১টি ফ্রাট, যার মুল্য ৩ কোটি টাকা। জুরাইনে আলেয়া ভিলা নামে একটি ৪তলা বাড়ির খোঁজ মিলেছে যার মুল্য রয়েছে ৬ কোটি টাকা। বনানী এলাকায় একটি বাড়ি রয়েছে যার মুল্য রয়েছে ৩কোটি টাকা। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম মার্কেটে একটি দোকান রয়েছে, যার মুল্য ৩কোটি টাকা। একটি অফিস রয়েছে, যার মুল্য প্রায় ২কোটি টাকা। ঢাকা শনির আখড়া এলাকায় নতুন করে ৫০ কোটি টাকার জায়গা কিনেছে বলে যানা গেছে। এছাড়াও চট্রগ্রাম রেয়াজউদ্দিন বাজারের মার্কেটে দোকান রয়েছে যার দেখা শোনা করে জাফরের ভাই মোঃ খোরশেদ, যার মুল্য প্রায় ৩কোটি টাকা। এলাকায় নামে বেনামে রয়েছে ৫০০ শতাংশ জমি, যার মুল্য রয়েছে ৩০কোটি টাকা। এলাকায় মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে কারন তাদের কারনে গ্রামে অন্য কেউ জায়গা জমি কিনতে পারেনা। জাফর একাই ‘টাকাওয়ালা’ হননি; দুই স্ত্রীর নামেও আছে সম্পদ,স্ত্রী আলেয়ার একক নামে আছে বাড়ি। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে আরও সম্পদ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে গভীর অনুসন্ধান চলছে।
স্বর্ণ চোরা চক্রের আরেক সদস্য মুন্সিরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজের ভাই অস্র মামলার পলাতক আমামী (খোকা) তার বিরুদ্ধে ও অনুসন্ধান চলছে। স্বর্ণ কারবারে জড়িয়ে আরও যারা সম্পদের শিখরে উঠেছেন এমন চক্রের কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; বাকিদের খুঁজছে পুলিশ।
তারপরও হোতারা রয়ে যায় আড়ালেই কোনো কিছুতেই থামছে না স্বর্ণ চোরাচালান। দেশের সবকটি বিমানবন্দর ও সীমান্ত পথে কোনো না কোনোভাবে স্বর্ণ চোরাচালান চলছেই। বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীদের সরাসরি জড়িত থাকার ভূরি-ভূরি অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার মিলছে না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণপাচার হচ্ছে হরদম। পরে ঢাকার তাতিঁ বাজারে বিক্রি হয়ে ২য় বার পাচার হওয়া স্বর্ণের অনেক চালান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকছে ভারতে। পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর। স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট জড়িত। আছে লাগেজ পার্টির যোগসূত্রও। অনেক চালানের সঙ্গে বাহক ধরা পড়লেও সবকিছু বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ায় ‘মামলার তদন্তকারীরা’ কুলকিনারা করতে সময় নিচ্ছে। মূলত চোরাচালানের একটি চেইন রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। সেখান থেকে যাত্রীদের কাছে নানা কৌশল ও চুক্তিতে স্বর্ণের চালান বিমানে তুলে দেয়া হয়। বিমান ও বেবিচকের লোকজনের যোগসূত্রে দেশের এজেন্টদের হাতে পৌঁছে চালান। নেপথ্য নায়করা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রকাশ হয় না তাদের পরিচয়। এরমধ্যে সাড়ে ৫ বছর আগের এক স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গত বুধবার পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের আদালত। তারা স্বর্ণের চালান বহন করেছিলেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সিআইডির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত এই চক্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বাহকের মাধ্যমে স্বর্ণবার এনে, ঢাকার তাতিঁ বাজারে বিক্রি করে আসছিল। চক্রের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জাফর, তার সহযোগী হাছান এবং মিজানুর রহমান ( খোকা) বর্তমানে দেশে রয়েছে । চট্রগ্রামের নাসিরুদ্দিন ও রমজান পলাতক রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের রয়েছে প্রায় ৫০ জনের এজেন্ট। এর মধ্যে জাফরের বাংলাদেশে ব্যাবসা পরিচালনার জন্য রয়েছে বিশ্বস্ত ৪ জন ম্যানেজার, ১/জুয়েল ২/শান্ত ৩/পারভেজ ৪/ হাছান.। তারা সবাই জাফরের নিকট আত্মীয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তাদের বর্তমানে নিজস্ব ব্যাবহারের জন্য রয়েছে চারটি প্রাইভেট কার, যে গুলো দিয়ে বিমানবন্দরে মালামাল সহ পাঠানো যাত্রি আনা নেওয়া করছে তারা।
তদন্তে উঠে এসেছে, দুই উপায়ে চোরাই স্বর্ণের কারবার করছেন জাফর, খোকা,হাছান, নাছির ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রথমটি হলো, নিজেরাই বাহকের মাধ্যমে মাসিক চুক্তিতে দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ দেশে আনছে । চার-পাঁচবার হাতবদলের পর ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত স্বর্ণ পৌঁছায়। ধাপে ধাপে তাদের ‘রেকি’ পার্টিও রয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো, অন্য কোনো গ্রুপ চোরাপথে বাংলাদেশে স্বর্ণ আনলে তাদের কাছ থেকে কিনে নেন তারা। এর পর স্বর্ণের বার অথবা গলানোর স্বর্ন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে পাচার করছেন।
সিআইডির পরিদর্শক (তদন্তের সার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন চক্রটি অনেক দিন চোরাই স্বর্ণের কারবার করে আসছে। তবে নানামুখী কার্যক্রমের পরও চোরাচালান বন্ধ হয়নি। মাঝেমধ্যে বাহক ধরা পড়লেও রাঘববোয়াল থাকছে পর্দার আড়ালে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতায় সোনার চালান ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না পাচার। বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এ চোরাচালানে জড়িত ছিলো। পাশাপাশি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও। তাই কোনোভাবে স্বর্ণ পাচারের লাগাম টানা যাচ্ছে না। কিছুদিন পরপরই জব্দ হচ্ছে বড় চালান। অনেকে বলছে, যত সংখ্যক চালান ধরা পড়ছে, এর চেয়ে কয়েক গুণ ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। তবে সরকার পতনের পর প্রশাসনে রদ বদল হয়েছে, তাই তদন্ত করা হচ্ছে খুব জোরালো ভাবে। শীগ্রই অপরাধীদের তালিকা তৈরী করে সম্পদ জব্দ সহ আইনের আওতায় আনা হবে।
এমএসএম / এমএসএম
আত্রাইয়ে গভীর রাতে জোরপূর্বক বেঁড়া ও প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ
বেনাপোল বন্দর দিয়ে সাড়ে ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি
পটুয়াখালী জহির মেহেরুন নার্সিং কলেজের নবীনবরন ও বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত
নরসিংদী কোর্ট প্রাঙ্গণে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা
তাড়াশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সভা
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মত কেউ নির্যাতনের শিকার হয়নি: খন্দকার নাসিরুল ইসলাম
তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে দুমকিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত
তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবহেলিত শরীয়তপুরকে আধুনিক জেলায় গড়ার প্রতিশ্রুতি: মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুর
রৌমারীতে বিদ্যুতের কাঠের খুটি চুরি করে বিক্রির
নেত্রকোনা-২ আসনের বিএনপি'র মনোনীত প্রার্থীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
সুবর্ণচরে মিসবাহুল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার উদ্বোধন
খুলনায় ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আটক যুবক