মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
রাজধানীর মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে তারা দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা সচিব, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখির করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর একান্ত আস্থাভাজন হিসাবে নিজের পরিচয় দিতেন মোস্তফা কামাল খোশনবীশ। এই প্রভাব দেখিয়ে শিক্ষকদের ওপর দমন নিপীড়ন চালাতেন। চাকরিচূতির হুমকি দিতেন। নিজের পছন্দের শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সিন্ডিকেট।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভন্ন অভিযোগ উঠতে থাকে। তিনি স্বৈরাচারি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন । সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর স্ত্রী ফরিদা ইলিয়াস প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২০১৯ সালে নিয়ম বহির্ভূত ও পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোস্তফা কামাল খোশনবীশকে নিয়োগ দেন। একটি বিতর্কিত পরিপত্র জারির মাধ্যমে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হিসেবেও ২০২১ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ দায়িত্ব নেন।
অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পেয়েই ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিয়োগ বানিজ্যসহ নানাবিধ অর্থনৈতিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর অনেক কর্মকান্ড ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী এবং আত্মস্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অভিযোগ তাঁরই সহকর্মীদের। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক খলিলুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেন। অনেক শিক্ষক ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির হুমকি মধ্য রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও কর্মচারিরা ।
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের জন্য জমি ক্রয়ের জন্য ১৬ কোটি টাকা আত্মসাত করেছিলেন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। এই অর্থ ফেরত আনার জন্য শিক্ষকদের চাপ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি অধ্যক্ষ। বরং তিনি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, ইলিয়াস মোল্লার স্ত্রীকে সভাপতি রাখার বিষয়টি পাকাপোক্ত করেন।
ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে,অভ্যন্তরীণ অডিট পরিচালনা কমিটিতে কোনো শিক্ষকের অন্তর্ভূক্তি ছাড়াই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং চাপ তৈরি করে নিরীক্ষা ডকুমেন্টসহ অন্যান্য অনেক ক্রয় ভাউচারে দস্তখত দিতে বাধ্য করেছেন শিক্ষকদের। প্রতিষ্ঠানের দোকান ভাড়া ও বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থেকে অর্জিত অর্থ এবং টিউশন ফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা পরবর্তী কাগজ বিক্রির বিপুল অংকের টাকা অধ্যক্ষ লোপাট করেছেন বলেও দাবি করেছেন শিক্ষকরা। আর এ সকল বিষয়ে বেশিরভাগ শিক্ষকদের রেখেছিলেন অন্ধকারে। নিয়ম অনুযায়ী গর্ভনিং বডির সভা প্রতিষ্ঠানে হওয়ার বিধান থাকলেও সব সভা করেছেন পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর বাসায়। সেখানেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী সিদ্ধান্ত নিতেন।
অভিযোগে আরোও বলা হয়, সরকারি বিধি মোতাবেক পরিচালিত এসএসসি এবং এইচএসসি শ্রেনীতে অতিরিক্ত পাঠদান হতে চার বছর সময়ে উপার্জিত অর্থের প্রায় দুই কোটি টাকা একাই আত্মসাৎ করেন। তার দায়িত্ব পালনকালীন যে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা অবসর গ্রহণ করেছেন, তাদের অবসর পরবর্তী প্রাপ্যঅর্থ প্রদানে গড়িমসি, ঘুষ গ্রহণসহ প্রাপ্যতার বিধি লঙ্ঘন করে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেন। কিছু নারী শিক্ষকদের দিয়ে বাসায় রান্না করে নিয়ে আসতে বাধ্য করতেন তিনি। আবার শিক্ষকদের দিয়ে পা’য়ের জুতা পরিয়ে নিতেন-এমন ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এই অধ্যক্ষের জন্মদিন উদযাপনে সব শিক্ষকদের কাছে থেকে বাধ্যতামূলক চাঁদা নিয়ে ‘বার্থডে পাটির্’ করতেন। ত্রিশ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি, দামী ব্রান্ডের হাত ঘড়ি, দামি মোবাইলসহ বিভিন্ন উপহার নিতেন চাঁদার টাকায়।স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা উত্তরের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষক দিবসে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা দিপু মনিকে সংবর্ধনা ও উপহার দিতেন। কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যগনের সংবর্ধনা ও উপহার দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত লাভবানের নিমিত্তে শিক্ষকদের কাছ হতে মাথাপিছু ২ টাকা হতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে বাধ্য করেন। এভাবেও অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তাছাড়াও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সন্তানদের বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্নভাবে প্রভাব বাড়াতে তাদেরকে স্বর্ণের হারসহ বিভিন্ন দামী উপহার দিতেন। আর এ জন্য স্কুল এণ্ড কলেজের শিক্ষকদের থেকে বড় অংকের টাকা চাঁদা তুলতেন। তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের যেতে বাধ্য করতেন। এ বিষয় তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বলেন, পরে প্রতিবেদক তার প্রতিষ্ঠানে বক্তব্য নেয়ার জন্য গেলে তিনি সাক্ষত করেননি।
এমএসএম / এমএসএম