রেলের জমি ব্যবহার: শতকোটি টাকা ভাড়া ফাঁকির অভিযোগ ম্যাক্সের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজের বড় ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড অর্থাৎ ম্যাক্স অন্যতম। ঠিকাদারী কাজের মাধ্যমে রেল থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করলেও রেলের ব্যবহৃত জমির ভাড়া ফাঁকি দিয়ে আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠেছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ঠিকাদারী কাজ শেষ হওয়ার পরেও প্রায় একযুগ ধরে রেলের জমি নিজেদের দখলে রেখে ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে। এসব ভাড়ার টাকা দাবি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবরে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমিনগণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদর কাচারীর আওতাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান "ম্যাক্স "গ্রুপের দখলীয় চট্টগ্রাম স্টশনের পূর্ব পার্শ্বে এবং হালিশহর সিজিপি ইয়ার্ড, ই/৯ গেইটঘর সংলগ্ন রেলভূমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা দেখা যায়, চট্টগ্রাম নতুন স্টেশন এলাকার পূর্বপার্শে আনুমানিক ৬ হাজার বর্গফুট রেলভূমির ওপর অস্থায়ী সেমিপাকা ও টিনশেড ঘর তৈরি করে সাইট অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে ম্যাক্স। হালিশহর সিজিপি ইয়ার্ড সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে, ই/ ৯ গেইটঘর সংলগ্ন আনুমানিক ৪৫ হাজার বর্গফুট রেল ভূমিতে পাথর রেখে স্টক ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। সরেজমিন জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রকৌশল প্রতিনিধিগণের সহিত যোগাযোগ করলে উক্ত রেলভূমি ব্যবহার সম্পর্কিত কোন অনুমোদন পত্রের কাগজ, নথি পাওয়া যায়নি।
অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা রেললাইনের চিনকি আস্তানা স্টেশন হতে লাকসাম স্টেশন পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের মালামাল রাখার জন্য চিনকিআস্তানা স্টেশন এলাকায় কি.মি. নং- ৬৯/০ হতে ৬৯/৪ এর মধ্যবর্তী রেললাইনের উভয় পার্শ্বে রেলের জমি দখল করে রেখেছে ম্যাক্স। অনুমতি ছাড়াই ’ক’ ও ’খ’ ২টি প্লটে মোট ২,৫৮,৮৮৯ বর্গফুট বা ৫.৯৪৩৩ একর রেলভূমিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স কর্তৃক দুইটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া সাইট অফিসের নামে কালুরঘাট সেতু সংলগ্ন প্রায় ১ লাখ বর্গফুট রেলের জমি অবৈধভাবে ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার প্রকল্পের কাজের জন্য ৫ থেকে ৬ লাখ বর্গফুট জমি ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম স্টেশনটি আধুনিকায়নের সময় ২০১১ সালে ঠিকাদারী কাজের মাধ্যমে রেলের জমি ব্যবহার শুরু করে। ২০১৪ সালে কাজ শেষ হলেও ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জমিগুলো তাদের দখলে ছিল। এভাবে রেলের ১০ লাখ বর্গফুটের অধিক জমি এক যুগ ধরে দখলে রেখেছে ম্যাক্স। রেলের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী ১০/১২ বছরে রেলের জমির ভাড়া বাবদ কম হলেও ১০০ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে।
এব্যপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের রেল সংক্রান্ত কাজ তদারকির চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম @ ম্যাক্স সেলিম বলেন, ’আমরা ৩০ বছর ধরে রেলের কাজ করছি, তারা আমাদের জমির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কিন্তু এসব জমি ব্যবহার করলে যে ভাড়া দিতে হবে তা আমাদের জানা নেই বা রেল কখনো আমাদেরকে এমন কিছু বলেনি।
এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম আর মঞ্জু বলেন, রেলের কতিপয় অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরখ্যাত মাফিয়া ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। প্রতিবছর সরকার রেলের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ভুর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু সরকার বা কর্মকর্তারা চেষ্টা করলে যথাযথ সেবা দিয়েও রেল থেকে ভালো একটা এমাউন্ট লাভ করতে পারে। অনেক অফিসারই প্রতিষ্ঠানের লাভের কথা চিন্তা না করে ব্যক্তিগত মুনাফায় আকৃষ্ট। অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে রেল থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ম্যাক্স, আবার জমির ভাড়াও পরিশোধ করেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করছি এসব বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে ম্যাক্সকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে ফাঁকি দেয়া ভাড়া সুদ সমেদ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় এই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা সহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেলের অনেক ভূমি অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ম্যাক্সের অবৈধ দখলে থাকা জমিগুলো শনাক্ত করার কাজ চলছে। কয়েকটি প্রতিবেদন জমা হয়েছে, আরো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যা আছে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালায়:
ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ৪০ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ’বাংলাদেশ রেলওয়ের কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের জন্য প্রকল্প পরিচালকের সুপারিশক্রমে রেলওয়ের ঠিকাদারগণকে টেন্ডার সংশ্লিষ্ট কার্যকাল পর্যন্ত কাজের সুবিধার্থে রেলওয়ের কোন খোলা জায়গা/মাঠ প্রচলিত নিয়মে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রযোজ্য হারের ২০% রেয়াতি (ছাড়ে) হারে ধার্য্যকৃত ফি'তে মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদনক্রমে সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা যাবে। প্রকল্পের কার্যকাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে এ অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে। ভূমির নিষ্কন্টক দখল লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিকট সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কর্তৃক সমর্পণ করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর উক্ত ভূমির ওপর কোন মালামাল/যন্ত্রপাতি থাকলে তা প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে যে কার্য সম্পাদনের জন্য ভূমির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছিল সে কার্যের চুড়ান্ত বিল পরিশোধের পূর্বে জায়গা খালি করা হয়েছে ও ব্যবহৃত রেলভূমির কোন ক্ষতি হয়নি মর্মে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর যৌথ প্রত্যয়নপত্র ছাড়া ঠিকাদারের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা যাবে না।’
এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান বলেন, সাধারণত এধরণের কাজগুলো প্রজেক্টের মাধ্যমে করা হয়, আর প্রজেক্টের বিল আমাদের কাছে আসেনা। এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, আমরা রেলের সাথে ঠিকাদারের চুক্তি শর্ত দেখে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
এমএসএম / এমএসএম

কেশবপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা তবিবুর এক সন্তানের জননী নিপা দাসকে নিয়ে চম্পট

মহেশখালীতে রাতে অপহরণের পর সকালে মিলল যুবকের লাশ

আবার রোহিঙ্গা ঢলের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তানোরে চাষাবাদে গরুর বদলে বাড়ছে ঘোড়া দিয়ে মই চাষ

উল্লাপাড়ায় কষ্টি পাথরের মূর্তি পাচারকারী দুই জন গ্রেফতার

বরগুনায় তিন সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী-১ আসনে শরিফ উদ্দিনের বিরোধিতা না বিএনপির বিরোধিতা

টেকনাফে মুক্তিপণে ফিরেছে অপহৃত ব্যবসায়ী

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

হাসিনা বাংলাদেশকে গুম-খুন আর লুটের রাজ্যে পরিণত করেছিল: আব্দুল খালেক

দাউদকান্দির ধারিবন গ্রামে একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ, পানিবন্দি কয়েকটি পরিবার

ভূরুঙ্গামারীতে ব্র্যাকের স্বপ্ন সারথি দলের জীবন দক্ষতা বিষয়ক ২৫তম সেশন অনুষ্ঠিত
