ফুলবাড়িতে সরিষার ক্ষেত যেন হলুদ গালিচা বিছানো
বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু,দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটির পঙ্ক্তি গুলোর মাঝে যেমনি প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে ফুলবাড়ীর দিগন্ত জোড়া সরিষার মাঠ হলুদ ফুলে ফুলে পাল্টে দিয়েছে প্রকৃতির দৃশ্যেপট, যেন হলুদ শাড়িতে নববধূ সেজেছে আজ প্রকৃতি।সরিষার বাম্পার ফলন হলুদ গালিচা শুধু কৃষকদের জীবন বদলাচ্ছে না বরং এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলবে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ঘুরে জানাগেছে, সঠিক উদ্যোগ ও কৃষিবিভাগের সক্রিয় প্রচেষ্টায় আধুনিক ভাবে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। এছাড়া বারি-১৪,১৭ বিনা-৪,৯ জাতের সরিষায় তেলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এ জাতের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। চড় অঞ্চল থেকে শুরু করে উঁচু জমিতে সরিষার আবাদে ভরপুর। ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের সকাল সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ প্রকৃতিকে মুগ্ধ করেছে। সরিষা ফুলের মিষ্টি গন্ধে মধু আহরণে সদাব্যস্ত মৌমাছির গুনগুন শব্দ আর রং বেরঙের প্রজাতির আনাগোনায় প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও সৌন্দর্য্য মণ্ডিত। গ্রাম বাংলার বিস্তীর্ণ মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ গালিচা বিছানো।এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পথচারীরা হলুদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ক্যামেরা বন্দি করে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। আবার কেউ ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের আনন্দ দিতে হলুদের সাথে জড়ায়ে নানান অঙ্গ ভঙ্গিতে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রায় প্রতিদিনই সরিষা ক্ষেতে প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা বেড়েই চলছে।
উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের নন্দীর কুটি গ্রামের কৃষক পুতুল চন্দ্র সেন জানান,আমন ধান কাটার পর পরবর্তী ফসলের আগে ফাঁকা সময়ে সরিষা চাষ করা হয়। খুব অল্প সময় কম খরচে লাভজনক ফসল এটি,এবারে আমি এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি আশা করছি ভালো ফলন পাবো। সদর ইউনিয়নের কুটি চন্দ্র খানা গ্রামের কৃষক মাহাবুব রহমান জানান, আমার প্রায় দুই বিঘা জমিতে সরিষা দেওয়া আছে, সরিষা চাষে বেশি একটা খরচ হয় না, দুই মাসের মধ্যে সরিষা আবাদ ঘরে তোলা যায়। এবারে ফলন ভালো লক্ষ্যে করা যাচ্ছে।কাশিপুর ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি প্রতি বছরে সরিষার আবাদ করি এবারেও প্রায় দেড় বিঘার মতো করেছি,এবারে ভালো ফলনের সম্ভাবনা আছে আছে। বিশেষ করে এবারে বাজারে সরিষার ভালো চাহিদা থাকায় মন প্রতি ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাবে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, এবছর ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে (০২)দুই হাজার (০৩) তিন শত জন কৃষককে সার ও বীজের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত ভাবে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী এবছর সরিষার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে, এবং কৃষকরা এর থেকে আর্থিক ভাবে উপকৃত হবে।
এমএসএম / এমএসএম