তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটিয়ে ইয়াসিন দেশের শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে আলোচিত
নেত্রকোনা মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের কুঠুরীকোণা গ্রামের মৃত আক্কেল আলীর ছেলে মোঃ ইয়াসিন মিয়া (৪৫) তূষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোতে অসহনীয় সাফল্যের ভূমিকা রেখেছে। তিনি নিজেই বেকারত্ব ও আত্মসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগত ১৯৯০ দশক থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেন। তখন থেকে কৌশল অবলম্বন করে বিদ্যুৎবিহীন ভাবে তুষ ও হারিকেন পদ্ধতির মাধ্যমে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে অসহনীয় সাফল্যের ভূমিকায় রেখেছে।এর পর থেকেই নিজ এলাকা কুঠুরীকোণাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অগণিত বেকার নারী পুরুষ এই পদ্ধতি শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তিনি সর্বপ্রথম স্থানীয়ভাবে পরিকল্পিত উদ্ভাবিত ভাবে কাজ করার ফলে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ-বিদেশ থেকে আসা সাংবাদিকসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধি দল তার কাজ পরিদর্শন করছেন। তার এই সাফল্যের ফলে দেশ বিদেশে ইয়াসিনের আলো শিরোনামে দারিদ্র্য জয়ের দৃষ্টান্ত হিসাবে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এ বিষয়ে গত শুক্রবার সরেজমিনে গেলে হ্যাচারী উদ্যোক্তা ইয়াসিনের প্রশিক্ষণারটি হাচ্যারি উদ্যোক্তা মোঃ জানু মিয়া ও মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন,আমাদের কুঠুরীকোণা গ্রামের হ্যাচারী উদ্যোক্তা ইয়াসিন মিয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন আমাদের ১৫০ টি পরিবার হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। মদন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মাসুদ করিম ছিদ্দিকী জানান,মোঃ ইয়াসিন মিয়া শ্রেষ্ঠ সফল উদ্যোক্তাকে অনুসরণ করে কুঠুরীকোণা গ্রামে ১৫০ টি পরিবার তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এবং এ উপজেলায় শত শত হাঁস খামারী গড়ে উঠেছে। কোঠুরীকোণায় হ্যাচারী পল্লীতে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হলে আরও ভালো হত।
হ্যাচারীর সফল উদ্যোক্তা মোঃ ইয়াসিন মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমি ১৯৯০ সালে নিজের অর্থায়নে বিদ্যুৎবিহীন ভাবে তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ১দিনের বাচ্চা ১০/১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আমার কার্যক্রম দেখে এলাকার ১শত পঞ্চাশটি পরিবার এই কাজ শুরু করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমি এ যাবত দেশের ১ হাজার ৪শত বেকার নারী পুরুষ ও ইন্ডিয়াতে ৫শত বেকার যুব নারী পুরুষকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সমগ্র বাংলাদেশে অগণিত বেকার যুবক নারী পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছি। আমার এই কাজ দেখে উপজেলা প্রাণিসম্পদ উপজেলা প্রশাসন,জেলা প্রশাসন ও দেশ বিদেশের সাংবাদিকসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আমার কাজ পরিদর্শন করছে। আমার পরিকল্পিত কারিগরি অভিজ্ঞতার জন্য বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মেঘালয় বেসিন ডেভেলপমেন্ট অর্থনীতি ইন্ডিয়াসহ আরও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হইতে অভিজ্ঞতা প্রশিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আমাকে বিভিন্ন পুরস্কারসহ ক্রেস্ট,সনদ ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন। আমি প্রশিক্ষণ চলমান রেখে ১দিন বয়স হইতে বিভিন্ন বয়সের উন্নত জাতের হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা সমগ্র বাংলাদেশে ক্রয় বিক্রয় করি,এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করি। এই পদ্ধতিতে হাঁস মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে দেশে বিদেশে এখন শ্রেষ্ঠ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত লাভ করি। দেশের চাহিদার তুলনায় সরকার হাঁস প্রজনন খামারে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন কম। এক্ষেত্রে আমার এই পরিকল্পিত আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লেগেছে,এবং নিঃসন্দেহে আরও কাজে লাগবে। আমার কুঠুরীকোণা হাঁস উৎপাদন হ্যাচারী শিল্পে বছরে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন হয়। যাহা দিয়ে দেশের প্রায় লক্ষাদিক বেকার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সময় দুর্যোগের কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসানও গনতে হয়। কাজেই কুঠুরীকোণা হাঁস শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ভর্তুকিসহ সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা হলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্ম কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির জন্য আমি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি। তিনি আরও জানান,আমার এই পরিকল্পিত উদ্ভাবিত পদ্ধতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকারের কাছে সহযোগিতাসহ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এমএসএম / এমএসএম