দৌলতপুরে কলেজের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
একাধিক ব্যক্তির সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের নাসির উদ্দিন বিশ্বাস মহাবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়েছে।
দৌলতপুরের খলিসাকুন্ডী ইউনিয়নের নজীবপুর গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে বজলুর রহমানের ২২.৫ শতক এবং সহোদর মশিউর রহমানের ১২.৫ শতক জমি অবৈধ দখলে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ, যদিও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এর আগে বজলু ও মশিউর উভয়ের সহ তাদের মায়ের জমি স্বেচ্ছায় দান করা আছে ২৯ শতক। এমনই অভিযোগ তাদের।
কলেজ কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতিক্রমে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন নিজেদের জমি মাপজোখ করতে গেলে তাতে সহিংস বাধা দেয় নাসির উদ্দিন বিশ্বাস মহাবিদ্যালয়ে দায়িত্বশীল কয়েক ব্যক্তি। এ ঘটনার পর, কলেজটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিমসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একটি অভিযোগও জমা পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাকালীন দাতা হিসেবে চাকুরী দেয়ার অঙ্গিকারে ২৯ শতক জমি কলেজের সম্পত্তি হিসেবে দলীল দস্তখত করে নেয়। কিন্তু যুগ পেরুলেও কেউ কথা রাখেনি। ২০১৪ সালে ততকালীন অধ্যক্ষ রেজাউল হক সাক্ষরিত নিয়োগ পরীক্ষার আহ্বান পত্র দিয়েও নেয়া হয়নি পরীক্ষা। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্যের। অন্যদিকে কলেজের খেলার মাঠ সংলগ্ন আরও ৩৫ শতক ফাঁকা জমিও ব্যবহার করতে থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিজেদের প্রয়োজনে জমির দখল নিতে পারেনি মালিকেরা।
মাঝে আবার স্থানীয় মধ্যস্থতায় জমি বিনিময় করার যৌথ সিদ্ধান্ত হলে, সেই জমিও অন্যত্র লিজ দেয়ার বার্তা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী মোঃ মশিউর রহমান বলেন, কলেজ শুরুর সময় আমরা নিজেদের নার্সারি সরিয়ে দিয়েছি কলেজের স্বার্থে। আমরা নিজেদের জমিও লিখে দিয়েছি কলেজের নামে। বর্তমানে আমরাই কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রহসনের শিকার।
মরহুম বজলুর রহমানের (ভুক্তভোগী) উত্তরসূরী ফাহিম আহমেদ জানান, আমাদের ন্যায্য পাওনা ফেরত পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় দৌলতপুর থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়েছি। কোনো সমাধান পায়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভালোর জন্য আমাদের পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু উল্টো আমরা অত্যাচার আনাচারের শিকার। অনতিবিলম্বে এই পরিস্থিতির সমাধান প্রত্যাশা করছি।
এসব প্রসঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীনের সাথে কথা হলে তিনি দাবি করেন, তাদের কাছে থেকে ৪০ শতক জমি কলেজ কিনেছে এবং তাদের ৯ শতক জমি কলেজের ভোগ দখলে আছে, এই প্রাপ্য অংশের বিনিময়ে কলেজ তাদের অন্যত্র জমি দিতে চায়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার কথা জানিয়েছেন।
দৌলতপুর থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি নাজমুল হুদা জানিয়েছেন, লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় সে দিকে পুলিশ তদারকি রাখছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একটি পক্ষ সেখানে কলেজের কাছে কিছু জমি পাবে, তা নিয়েই কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিলো বলে জেনেছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি)ফয়সাল আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শরণাপন্ন হলে সমাধান আসবে। কাগজপত্র অনুসারে যারা ন্যায্য প্রাপ্য, তাদের পক্ষে রায় আসবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনশ্রুতি রয়েছে নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ১৯৯৪ সালে মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। পরবর্তীতে কলেজ পরিচালনায় অন্যান্য দায়িত্বশীলদের নানা দুর্নীতি-অনিয়মের কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠান বিমুখ হয়ে পড়েন নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। এতে পিছিয়ে পড়ে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস মহাবিদ্যালয়ের উন্নয়ন অগ্রগতি।
এমএসএম / এমএসএম