ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব


খাজা ওসমান ফারুকী photo খাজা ওসমান ফারুকী
প্রকাশিত: ১১-১-২০২৫ বিকাল ৫:৪০

১, ২, ৩, ৪, ৫.... এভাবে আমি যদি লিখে চলি তবে কোথায় থামবো? অসীমে  বা infinity-তে, এখন এই অসীমকে যদি ভাগ-ভাগ করি ১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদি নম্বরে, তবে কি হবে? ২ এবং ৩ এই দুই নম্বরের মধ্যে কটা পয়েন্ট আছে? ২.১, ২.০১, ২.০০১...। কতদূর যাবে এভাবে? অসীমে (infinity)। তাহলে প্রথম অসীম কি দ্বিতীয় অসীমের জন্য সীমিত হয়ে যাবে? না। দুটো অসীমই অসীম থাকবে। এ-রকম অসীম-অনন্ত স্রষ্টা  বিশাল সৃষ্টির পরও অসীম থাকেন। আর এই সৃষ্টিও অসীম সম্ভাবনাময়। এখন প্রশ্ন-সীমিত মানুষ  হয়ে, ইন্দ্রিয়ের সীমিত শক্তি নিয়ে অসীমকে স্পর্শ করবো কিভাবে? অসীমকে লাভ করবো কি উপায়ে? এখানেই আধ্যাত্মিক ধ্যান বা সুফি মেডিটেশন এর প্রয়োজনীয়তা।
মানুষের চেতনায় একটি আলো আছে যা যেকোনো বাহ্যিক বস্তু (জাহির) বা সত্তার সুপ্তাবস্থার অভ্যন্তরীণ মাত্রা (বাতিন) পর্যবেক্ষণ করতে পারে। গুপ্ত জগতের (গায়েব) পর্যবেক্ষণ বাহ্যিক জগতের যেকোনো সত্তাকে প্রকাশ করতে পারে। অন্য কথায়, যখন আমরা কোনো সত্তার গুপ্ত বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করি তখন এর বাহ্যিক রূপ আর আমাদের থেকে লুকায়িত থাকে না। এই প্রক্রিয়ায়, বাহ্যিকের সীমানা মানুষের চেতনায় প্রকাশিত হয় এবং কোথা থেকে এই বাহ্যিকের উদ্ভব হয়েছে তা জানার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান জানার জন্য আবশ্যক যে, একজন ব্যক্তি তার সমস্ত মানসিক দক্ষতা একটি বিন্দুতে নিবদ্ধ করবে। যখন কেউ প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও বিশুদ্ধ কর্মস্পৃহা-সহযোগে ধ্যান করে তখন চেতনা-বিন্দু (নুকতায়ে ফিকির) সক্রিয় হয় এবং নিজের মধ্যে এর অর্থ ও অভ্যন্তরীণ মাত্রা প্রকাশ করে। মানুষ হলো এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিস্ময়, কিন্তু সে নিজের মূল্য সম্পর্কে অমনোযোগী এবং বিশ্বাসের অভাবের কারণে স্বজাত-রহস্যে অজ্ঞাত। মানুষ ভেতরে ও বাইরে রহস্যময় এক মহাবিশ্বের উপাদানের প্রতিনিধি। যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে গভীর চিন্তা করে, অর্থাৎ ধ্যানমগ্ন হয় তখনই সে বিস্ময়কর চোখধাঁধানো রহস্যের সন্ধান পায়। মানুষের আত্মার রহস্য ও এর জ্ঞাত-অজ্ঞাত শক্তিসমূহ উন্মোচন করতে ‘সুফি মেডিটেশন’ অপরিহার্য। 
গভীর চিন্তা বা 'তাফাক্কুর' হল 'একটি জ্ঞানীয় আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ যেখানে যুক্তিবাদী মন, আবেগ এবং আত্মা একত্রিত হয়।' অতএব যদিও 'ধ্যানমূলক অভিচিন্তন'র এই রূপটি 'গভীর চিন্তা ও ভাবনা'কে জড়িত করে তবুও এটি 'আবশ্যিকভাবে আধ্যাত্মিক প্রকৃতির'। এটি ইসলামি ইবাদতের একটি পরিমার্জিত রূপ যা মানুষকে গভীরভাবে চিন্তা করার এবং সৃষ্টির মাঝে সৌন্দর্য ও মহিমার দৃশ্যমান 'নিদর্শন' (আয়াত) এবং 'প্রকৃতির প্রদর্শিত বই' সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য আল-কুরআনের জোরালো আহ্বানকে প্রতিফলিত করে। এগুলো আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ এবং 'অদৃশ্য' (গায়েব) জিনিসের গোপন মাত্রার প্রমাণ হিসেবে মানুষের নিকট উপলব্ধিযোগ্য। 'আমরা তাদের (মহাবিশ্বের) দূরবর্তী দিগন্তে এবং তাদের নিজের আত্মার মধ্যে আমাদের নিদর্শন দেখাব যাতে তাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই (প্রত্যাদেশ) প্রকৃতপক্ষে সত্য।' (আল-কুরআন, ৪১:৫৩) তাই তাফাক্কুরের উচ্চতর জ্ঞানীয় অনুষদকে (cognitive faculty) 'তাদাব্বর (গভীর চিন্তা করা) এবং 'তাওয়াসুম' (প্রকৃতির লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং উপলব্ধি করা) এর মতো অনুষদগুলোকে অন্তর্ভুক্তকারী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এটি উপলব্ধির উচ্চতর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ অনুষদের বিকাশ বা 'হৃদয় দিয়ে দেখা'র সাথে সরাসরি যুক্ত। এভাবে এটি 'সমালোচনামূলক চিন্তা'র (আল- তাফকির আল-নাকদি) সাথে জড়িত যৌক্তিক এবং বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়াগুলোর চেয়ে অনেক গভীরে যায়। যেহেতু এর প্রধান অভিযোজন হল আধ্যাত্মিক সচেতনতা বা আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর চেতনার (তাকওয়া) বিকাশ।
সুফি ধ্যানের শুরুর দিক: থামা অনুশীলন করা। 
সুফি ধ্যানের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো থামা। আমরা গোটা জীবনটাই সুখের পেছনে দৌড়ে কাটিয়ে দিই। থামা মানে হলো আমাদের দৌড়, আমাদের অস্পষ্টতা আর অতীত বা ভবিষ্যতে আটকে যাওয়া থেকে থেমে যাওয়া। বর্তমান সময়টাই আমাদের বাসস্থান যেখানে আমরা জীবনকে খুঁজে পাই। বর্তমান সময় সকল মুহূর্তকে ধরে রাখতে পারে। আমরা আমাদের নিঃশ্বাস, হাঁটা আর বসা অনুভবের মাধ্যমে শরীর ও মনকে শান্ত করতে পারি। এর মাধমে আমরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি।
সুতরাং আগে থামুন! আমরা নিরন্তর ছুটে চলা থামাতে পারি না দেখেই বিশ্রাম নিতে পারি না।  আমরা সর্বদাই এমনকি ঘুমের মধ্যেও দৌড়ে যাচ্ছি। আমরা ভাবি, সুখ-সমৃদ্ধি কখনোই বর্তমানে পাওয়া যায় না। আপনি যদি থামতে শিখেন আর বর্তমানে নিমগ্ন হতে পারেন তাহলে তাতেই সুখ-শান্তির অনেক উপকরণ পেয়ে যাবেন। একটু থামুন, দেখুন। মহান আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর সৃষ্টি চারিদিকে হাসছে।
ইলমে তাসাউওফ’-এর পরবর্তী দার্শনিক নামকরণ বা প্রকাশ্য পরিচিতি-ই সুফিদর্শন বা তত্ত্ব  যা ইতিহাস পরিক্রমায় নানান বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়।  সুফি দর্শনের ঐতিহ্য ঐকমত্য বর্তমানে অনেকের ধারণায় যেন শুধুমাত্র নামে আছে, কামে নাই। সত্যি কী তা-ই? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতেই সুফি ধ্যান অপরিহার্য। পার্থিব ভোগসুখে মানুষ বড় ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়, পরিশেষে সত্য পথ ভুলে হয় বিভ্রান্ত ও সত্য বিমুখ। দুনিয়ার মোহগ্রস্ততা ও চাকচিক্যময় আকর্ষণে বিমুগ্ধ-বৈরী নফসকে পোষ মানিয়ে চিত্ত শুদ্ধিক্রমে ধ্যান-মোরাকাবায় জ্ঞানযোগে ফানা-বাকা-র দুর্গম পথ পরিক্রমণ করত সুফিগণ ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ খাঁটি মানবে (ইনসান-এ কামিল) পরিণত হন।
স্রষ্টার সৃষ্টিকে নিয়ে গভীর ধ্যান করা ইসলামে বড় ইবাদাত হিসেবে গণ্য। যেখানে কোরআন এই রকম গভীর চিন্তা করার কাজকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন যাতে প্রত্যেকে এই চিন্তাকে তার মেজাজ ও আধ্যাত্মিক অবস্থায় প্রয়োগ করতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের বিরক্তিকর অনুভূতি, খারাপ অভ্যাস, একঘেঁয়েমী পরিবেশ থেকে বের হয়ে এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন চিহ্ন ও নির্দেশনাকে প্রজ্ঞার মাধ্যমে হৃদয়ে প্রবেশ করানো।ইসলামে ধ্যান এমন একটি অনুশীলন যা মুসলিমদের মানসিক শান্তি দেয়। ইসলামী শিক্ষা জুড়ে এটির ধারণা ভালোভাবেই পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ বলছেন “যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর”। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)
ইসলামে ধ্যানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান রয়েছে। কারণ এটি কুরআনের শিক্ষার গভীরে নিহিত। সুফিবাদের মতো ইসলামিক ঐতিহ্যসহ বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্ম জুড়ে ধ্যানের অনুশীলন পাওয়া যায়, তবে সুফি মেডিটেশন যোগ্য শিক্ষকদের কাছ থেকে জ্ঞান ও নির্দেশনা নিয়ে অনুশীলনগুলো করা অপরিহার্য। সুফি ধ্যানের এই আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করার পূর্বে আল্লাহ সম্পর্কে নির্ভেজাল বিশ্বাস রাখা খুবই আবশ্যক।এ মহাজগতে বিদ্যমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনু থেকে শুরু করে সর্ববৃহৎ সৃষ্টি সবকিছুই আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ব্যাপারে কি তোমরা সন্দেহের মধ্যে রয়েছ? —(সূরা ইবরাহীম : ১০)
আধ্যাত্মিকতার পূর্ণজাগরণ কেন জরুরী?
আধ্যাত্মিকতা কি? আর বর্তমানে এর প্রয়োজনই বা কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের চারপাশের বর্তমান অবস্থার দিকে একটু তাকাতে হবে। আজ আমাদের চারিদিকে এক অশান্তির পরিবেশ। সর্বত্রই বীভৎস তান্ডবে মেতে উঠেছে সভ্য মানুষের দল। মানুষ হিংসায়, লালসায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। মানুষের অন্তরস্থিত শয়তানি শক্তি  যেন আবার বীরবিক্রমে জেগে উঠেছে আর তারই দাপট চলছে সর্বত্র। সাধারণ মানুষ এক চরম দুঃখ, হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অভাবনীয় প্রগতি,উন্নতির যুগেও মানুষ নিজেকে কত অসহায় বোধ করছে। ব্যক্তির জীবনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অনৈক্য, বিবাদ, মতভেদ সবকিছুই যেন চরমসীমায় পৌঁছেছে। আর সর্বক্ষেত্রে সংশয়, নিরুৎসাহ, অবিশ্বাস, আদর্শগত উৎসাহের অভাব, ভবিষ্যত সম্বন্ধে আশাভঙ্গ- এই হলো তার সাধারণ লক্ষণ। তাই এখন একটি বিরাট প্রশ্ন হলো মানবজাতির গন্তব্য কোথায়? এই দুঃখ, দুর্দশা ও অশান্তির মধ্যে তার জীবনের লক্ষ্য কি? বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় মত এই জ্বলন্ত সমস্যার সমাধান বিভিন্ন সময়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ থেকে গেছে এবং তা কেবলমাত্র সাময়িকভাবে সফল হয়েছে। মানব সমাজের সমস্যা সকল এখন যেরূপ জটিল হয়েছে তাতে মন-বুদ্ধির দ্বারা সে সবের সমাধান আর সম্ভব নয়- চাই অন্তরস্থিত চেতনার জাগরণ। কুরআনে উল্লেখ আছে- 'সেদিন তো ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি কারও কোনো কাজে লাগবে না; তবে (তার কথা আলাদা) যে একটি সুস্থ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হবে।' সূরা আশ শুআরা: ৮৮-৮৯

     খাজা ওসমান ফারুকী (খাজা'জী)
• উদ্ভাবক :সুফি মেডিটেশন মেথড 
• চেয়ারম্যান: সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন

এমএসএম / এমএসএম

সুস্থ থাকার জন্য কেমন পানির ফিল্টার নির্বাচন করবেন

সাপের ক্ষিদে মেটাতে পাখিশূন্য দ্বীপ

একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব

খাজা ওসমান ফারুকীর কুরআন দর্শন

খাজা ওসমান ফারুকীর সুফি তত্ত্বের নিদর্শন

'আরএনএস রাজিম একজন সফল ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তার গল্প'

প্রাক্তনের খোঁজ নেওয়ার দিন আজ

বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ১০ দেশ

বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ আজ

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালে প্রয়োজন 'গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট'

খরা কাটাতে ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার

সৌন্দর্যের শহর প্যারিসের নিচে লুকিয়ে আছে যে ভয়ংকর রহস্য