পুলিশী তদন্ত ফাইলবন্দি
নরসিংদীর রায়পুরায় দুই শিশুসহ গৃহবধূকে হত্যা চেষ্টা
স্বামীর মৃত্যুর পর সুন্দরী গৃহবধূকে দুইজন শিশু সন্তানসহ বাড়ি ছাড়া করতে মরিয়া হয়েছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর ও তার ছেলে মেয়েরা। বার বার চেষ্টা করেও গৃহবধূ সুলতানা পারভীনকে তার স্বামীর ঘর বাড়ি ছাড়া করতে না পেরে হত্যা চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শ্বশুরের নেতৃত্বে গৃহবধূর দুই শিশু সন্তানের উপর পৈশাচিক কায়দায় হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টায় রক্তাত্ব জখম করা হয়েছে। এঘটনায় ভুক্তভোগি নরসিংদী থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ মামলা গ্রহন না করে জিডি নথিভুক্ত করেছেন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরা থানার জিডি ১৩৫৪, জিডির ট্র্যাকিং নম্বর ২ এল ফোজ। অভিযোগকারী গৃহবধূর নাম সুলতানা পারভীন। অভিযোগে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের গৃহবধূর স্বামী রাসেল মাহমুদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এসময় তার খুসবো দেড় বছর বয়সে করোনা আক্রান্ত ছিল। আর তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গর্ভ অবস্থায় ও তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার শ্বশুর মানিক মিয়া, পিতা মৃত আ. মজিদ, মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল, জোহরা মোর্শেদা হ্যাপি, সাদিয়া আফরিন, খাদিজা, মাসুদ মিয়াসহ তার স্বামীর পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাব, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয় পত্র ও মৃত্যুর সনদসহ সকল কাগজপত্র দখলে নেয়। শুধু তাই নয়, গৃহবধূর স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তার শিশু সন্তানসহ তাদের কোন প্রকার ভরণ পোষ দেওয়া হচ্ছে না। আর তাদেরকে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। গৃহবধূর শিশু সন্তানদের মাঝে মধ্যেই অকথ্য নির্যাতন এমনকি হত্যা চেষ্টাও চালানো হয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার বিচার বসিয়ে তাদের মাঝে মিমাংস করে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সেই বিচার মিমাংসা মানছেন না। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে জানান, স্থানীয়দের বিচার মিমাংসা অমান্য করে গত বছরের ৩০ অক্টোবর শিশু খুশবো (৫) ও ছেলে ফোরকান (৩) তার স্বামীর বসত ঘরের বারান্দায় খেলা করার সময় তার স্বামীর বোন, ভাই, বাবাসহ উল্লেখিত ব্যক্তিরা আমার বাচ্চাদের অকথ্য গালাগালি করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও রক্তাত্ব জখম করা হয়। আমি তাদেরকে বাঁধা দিতে গেল তারা আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও মারধর করে। আমার গলা টিপে হত্যা ”েষ্টা চালানো হয়। এতে শরীরে নীলা ফুলা ও জখমপ্রাপ্ত হই। এসময় আমার শিশু বাচ্চারা ডাক চিৎকার করতে থাকলে স্থানীয় প্রতিবেশীরা দৌড়িয়ে আসলে হামলাকারী ব্যক্তিরা সুযোগ পেলে শিশু সন্তানদেরসহ গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ গুমের হুমকি দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় গৃহবধূ সুলতানা পারভীন তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, গৃহবধূ সুলতানার স্বামী রাসেল মাহমুদ গ্রামীণ ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশন কোম্পানীর অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ-ব্যস্থাপক এবং কোম্পানীর সচিব ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর পর উক্ত কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক শোক বার্তা প্রেরণ করেছে। উক্ত শোকবার্তায় তার কর্মদক্ষ, সততার কথা তুলে ধরেছিলেন। গৃহবধূ জানান, তার শ্বশুর মানিক মিয়া একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তার মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, সনদ, বাতিল হওয়ার পর গত ২০১৯ সালে তার ছেলের চাকরি চলে যায়। আর অন্য দুইজন এখনো চাকরিতে কর্মরত। আর তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল মাদক সেবন করে তাকে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। এসব ঘটনায় আদালতের মাধ্যমে পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পেলেও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি। পরে বিষয় নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করা হয়। সেখানে সার্কেল এসপি বিষয়টি শুনে তাৎক্ষনিক তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফোন করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো সেই প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগি গৃহবধূ। এ বিষয় সরকার প্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।
এমএসএম / এমএসএম