সচিবের পক্ষে প্রতিমন্ত্রীর সাফাই
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি

‘সচিব অনেক কাজ করেন তাই তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ফোন ধরতে পারেন না বা তাদের সাথে কথা বলার সময় পান না। সচিব অবশ্যই খারাপ না। তাছাড়া যে কারো মন্ত্রণালয় ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে নানা কারণ থাকতে পারে।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি গতকাল সচিবালয়ে তার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসিবুল আলমের পক্ষে এ ভাবে সাফাই গেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২১ উৎযাপন উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ের এক পর্যায়ে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো একজন সচিব যার কারণে মন্ত্রণালয়ের কাজে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে, অনেক অফিসার তার কারণে তদ্বির করে অন্যত্রে বদলি হয়ে চলে গেছেন এমন অবস্থা হলে একটি গণমুখি মন্ত্রণালয় চলতে পারে কি না? এমন প্রশ্নে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সচিবের পক্ষে সাফাই গান প্রতিমন্ত্রী। একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি মন্ত্রীকে জানান গত এক বছর ধরে চেষ্টা করেও সচিবের মোবাইল ফোনে একসেস পাননি তারা। তাছাড়া পেশাগত প্রয়োজনে সব সময় এক ধরণের অসহযোগিতা পেয়ে আসছেন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকতার কাছ থেকে। প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সময় সচিব হাসিবুল আলম উপস্থিত থাকলেও কোন কথা বলেননি। সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তরও দেননি তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার আচরণে সেখানে চাকুরি করতে চান না অনেক কর্মকর্তা। গত বছর নভেম্বরে ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও অধী দপ্তরের তিনজন অতিরিক্ত সচিব, চারজন যুগ্ম-সচিব ও পাঁচজন উপ-সচিবসহ মোট ১৪ কর্মকর্তা তদ্বির করে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে অতিরিক্ত মহা-পরিচালকের একটি, পরিচালকের দুটি, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের দুটি, উপ-সচিবের পাঁচটিসহ প্রায় এক ডজন পদ বর্তমানে শূন্য পড়ে আছে। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রেখে একটি গণমুখি মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি ধরে রাখা নিয়েও আলোচানা হয় সংবাদ সম্মেলনে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১ নভেম্বর ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, ৬ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একটি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) এ কে এম শরীফুল আলম সিদ্দিকী ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সামিয়া শারমীন বদলি হয়ে চলে যান অন্য মন্ত্রণালয়ে। একইভাবে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তাজুল ইসলাম, ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাবিবুর রহমান, ২ মার্চ যুগ্ম-সচিব মনোয়ারা ইশরাত, ৯ মে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (উপ-সচিব) মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সরকারও চলে যান অন্যত্র। ২ জুন উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, ৭ জুন উপ-সচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল, ১৭ জুন একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম-সচিব সরদার মো. কেরামত আলীও স্বেচ্ছায় চলে যান অন্য মন্ত্রণালয়ে। আগস্টে চলে যান আরও চারজন কর্মকর্তা। এরা হলেন অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভুইয়া, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মনীষ চাকমা, উপ-সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান ও সিনিয়র সহকারী সচিব এ বি এম রওশন কবীর।
স্কুল ফিডিং কর্মসূচি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দ্রুততম সময়ে চালু হবে এবং একই সাথে প্রাথমিকের সকল পরীক্ষা সীমিত সিলেবাজে নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের সচিবের কারসাজিতে এই স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি হোচট খেয়েছে মর্মে একাধিক অভিযোগ রয়েছে সচিবের বিরুদ্ধে। সে বিষয়েও প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। জানা গেছে, প্রাথমিকের বিস্কুট প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও কার্যক্রম শুরু হয়নি । প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্কুট বিতরণ তথা ‘দারিদ্র্য-পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পে’র মেয়াদ ছয় মাস বাড়লেও নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রাথমিকের ৩০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চপুষ্টিমানের বিস্কুট না পেয়ে অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তথ্যমতে, গত ১৭ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এর এক সপ্তাহ পর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) জানায় মন্ত্রণালয়। ওই চিঠি পেয়ে ডিপিই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রণালয় বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য ফাইল পাঠাতে হয় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠালে তা পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প’র মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। এবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি চেয়ে প্রস্তাব পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে ডিপিইকে ফের প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এভাবে সময় নষ্ট করা হয়।
গত ১ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ অনুমোদন না দিয়ে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দেন। নতুন প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এই সময়ে বিস্কুট বিতরণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অপুষ্টি ও ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে ডিপিই ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। গত ১০ জুন প্রস্তাবটি পাঠানো হলেও মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিকল্পনা কমিশনে না পাঠিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সচিবকে নির্দেশ দেন। সচিব কৌশলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য ফাইল পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। একই সঙ্গে এক বছরের পরিবর্তে ছয় মাসের নতুন প্রস্তাব পাঠাতে বাধ্য করে ডিপিইকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হলে যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায়। এর নেপথ্যে ছিল সচিবের কমিশন বাণিজ্যে! প্রতিমন্ত্রীর চাপে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়লেও সচিব এখন কার্যক্রম শুরু করতে টালবাহানা করছেন। ফলে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পুষ্টিকর বিস্কুট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের দারিদ্র্য-পীড়িত ১০৪টি উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করা হয়। বিস্কুট থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৩৩৮ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়। প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধন করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আর প্রকল্প সাহায্য ৫৪৫ কোটি নয় লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শি নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে দ্রুততম সময়ে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবে এখনো ২৪ শতাংশ মানুষ সাক্ষরতার বাইরে রয়ে গেছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে দ্রুততম সময়ে সাক্ষরতার আওতায় আনতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, ইউনেস্কো নির্ধারিত এ বারের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে Recovery: Narrowing the digital Divide” প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপি আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে।
এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
